বাসায় ঢুকে ব্লগার নিলয়কে জবাই করে খুন

দায় স্বীকার আনসার আল ইসলামের

 

স্টাফ রিপোর্টার: এবার রাজধানীর গোড়ানে শয়নকক্ষেই খুন করা হয় ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় ওরফে নিলয়কে। তিনি ব্লগে নীল নিলয় নামে লিখতেন। পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাকে গলা কেটে খুন করা হয়। নিষিদ্ধ আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের স্লিপার সেলে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করেছেন গোয়েন্দা পুলিশের সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, অপারেশনে এই ‘স্লিপার সেল’-এর তিন থেকে চারজন অংশ নেয়। নিলয়কে খুন করার সময় একই সংখ্যক খুনি অংশ নিয়েছে। তবে ব্লগার নিলয় হত্যার দায় স্বীকার করেছে আল কায়দার ভারতীয় উপমহাদেশের বাংলাদেশ শাখা আনসার আল ইসলাম। তাদের ওয়েবপেজে এ সংক্রান্ত একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার দুপুরে গোড়ানের ১৬৭ নম্বর বাসার ৫ তলায় স্ত্রী, বোন ও এক বন্ধুর সামনেই এ রোমহর্ষক খুনের ঘটনা ঘটে। ঘাতকরা ভাড়া নেয়ার কথা বলে ওই বাসায় ঢুকে স্বজনদের সামনেই নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর স্লোগানে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে নিলয়কে। এ সময় স্ত্রী আশামণি বারান্দায় গিয়ে বাঁচাও বলে চিৎকার করে প্রতিবেশীদের সাহায্য কামনা করেন। কিন্তু তার ডাকে কেউ সাড়া দেননি। ২ থেকে ৩ মিনিটের কিলিং মিশন শেষে ঘাতকরা ৫ তলার ওই ফ্ল্যাট থেকে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়। নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নীল নিলয় নামে একটি ফেসবুক পেজ পরিচালনা করতেন এবং গণজাগরণ মঞ্চের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। এদিকে ব্লগার নিলয় হত্যার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট। ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ঘাতকরা দীর্ঘদিন ধরেই নিলয়কে অনুসরণ করছিলো। ঘাতকদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নেমেছে বলে জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা।

এদিকে কয়েক মাস আগে থেকেই খুন হওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় ওরফে নিলয়। গত মে মাসে তিনি নিরাপত্তার জন্য রাজধানীর কয়েকটি থানায় গিয়েছিলেন সাধারণ ডায়েরি করতে। কিন্তু পুলিশ তার সাধারণ ডায়েরি না নিয়ে উল্টো যতো দ্রুত সম্ভব দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলো। গত ১৫ মে নিলয় তার ব্লগে এমনটি লিখেছিলেন। অন্যদিকে ব্লগার নিলয় হত্যার দায় স্বীকার করেছে আল কায়দার ভারতীয় উপমহাদেশের (এআইকিউএস) বাংলাদেশ শাখা আনসার আল ইসলাম। ওই সংগঠনটির মুখপাত্র মুফতি আবদুল্লাহ আশরাফ ইমেইল ঠিকানা থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেন। অন্যদিকে ব্লগার নিলয় হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন গণজাগরণ মঞ্চের সদস্যরা। তারা শুক্রবার বিকালে শাহবাগে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। একের পর এক ব্লগার খুনের জন্য সরকারের নির্লিপ্ততাকে দায়ী করে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার ঘাতকদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও ব্লগারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।

খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজ ভূঁইয়া জানান, খিলগাঁও গোড়ানের ১৬৭ নম্বর বাড়ির পঞ্চম তলার বাসায় স্ত্রী ও বোনকে নিয়ে থাকতেন নিলয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কয়েকজন যুবক বাসা ভাড়া নেয়ার কথা বলে ওই বাড়িতে ঢুকে পড়েন। তিনি বলেন, বেলা সোয়া ১টার দিকে ভাড়াটিয়া সেজে এক যুবক ওই বাসায় ঢোকেন। পরে তার পিছে পিছে ঢোকেন আরও দুই থেকে তিনজন। তারাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। নিলয় নীল নামে ব্লগে লেখালেখি করতেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া উপকমিশনার (ডিসি) মুনতাসিরুল ইসলাম জানান, রাজধানীর পরিবাগে আরডিসি নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে নিলয় চাকরি করতেন।

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, নিলয় গণজাগরণ মঞ্চের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। এছাড়া তিনি নারী ও আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। গত মে মাসে ব্লগার অনন্ত হত্যার বিচার দাবিতে আয়োজিত সমাবেশ থেকে ফেরার পথে তাকে অনুসরণ করে দুজন। সে সময় তিনি থানায় জিডি করতে চাইলে পুলিশ জিডি না নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পরামর্শ দেন। বিষয়টি নিলয় তাকে অবগত করেছিলেন। তিনি বলেন, নিলয় ‘নিলয় নীল’ নামে মুক্তমনা ও ইস্টিশন ব্লগে নিয়মিত লেখালেখি করতেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সংগঠনেরও সদস্য ছিলেন তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শী শামীম জানান, তিনি পাঁচতলা থেকে একজন নারীর চিৎকার শুনতে পান। পরে তিনি ওপরে যান। তখন দেখেন একজন যুবক একটি ছুরি পরিষ্কার করছে। তারপর কয়েক সেকেন্ড পরই সে নিচে নেমে যায়। এর আগে তিনি আরও দু’জনকে পাঁচতলা থেকে নিচে নামতে দেখেন। কিন্তু তারা যে ওপরে খুন করেছে তা তিনি জানেন না। সর্বশেষ ওই যুবক চলে যাওয়ার পর তিনি দেখেন আরও এক যুবক চলে যাচ্ছে তার হাতে একটি ছোট অস্ত্র। ওই যুবক চলে যাওয়ার পর তিনি বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার শোনেন। ভেতরে ওই বাসায় প্রবেশ করে দেখেন রক্তাক্ত পড়ে আছে একজন। তার স্ত্রীকে বারান্দায় আটকে রাখা হয়েছে। তিনি বারান্দার দরজা খুললে আশামণি বারান্দা থেকে ঘরের ভেতর ঢোকেন।

আইনশৃংখলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেন, খুনিরা শুক্রবার জুমার নামাজের আগেই ওই বাসায় প্রবেশ করে। প্রথম নিলয়ের স্ত্রী যাকে দেখেন সেই বাসা ভাড়া নেবে বলে জানায়। কিন্তু নিলয়ের স্ত্রী বলেন, বাসা ভাড়া হবে না। তখন তিনি তার স্বামী নিলয়কে ডাকেন। নিলয় আসলেই খুনি তাকে বলেন, ‘এই নেন বাড়িওয়ালার সঙ্গে কথা বলেন। এই বলে তারা নিলয়কে অপ্রস্তুত করে। আর ওতপেতে থাকা খুনিরা চারতলার সিঁড়ি থেকে দ্রুত ওপরে উঠে হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এ সময় নিলয়ের স্ত্রী চিৎকার করলে তাকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বারান্দায় নিয়ে যায় খুনিদের একজন।

ঘটনাস্থলে ডিবির পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মন বলেন, খুনিরা বেশি সময় নেয়নি। খুনের আগে তাদের পরিকল্পনা ছিলো বলেই ঘটনাস্থলে তারা সর্বোচ্চ তিন মিনিট সময় নিয়েছে। আর এই তিন মিনিটের মধ্যেই তারা অপারেশন চালায়। তিনি বলেন, খুনিদের হাতে মোবাইল ছিলো। সেই সূত্র ধরে গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। গোড়ানের ওই বাসায় গিয়ে দেখা যায়, নিলয়ের শয়নকক্ষে দু দিকে শুধু বই আর বই। প্রগতিশীল লেখকদের বইগুলোও রক্তে ভেসে গেছে। সকালে নিলয় ও তার স্ত্রী আশামণির ছোট সংসারে রাইস কুকারে রান্না করা ভাতের পাত্রও ছিলো রক্তেভরা। বিছানা, লেখালেখির জন্য থাকা চেয়ার-টেবিলও ছিলো নিলয়ের রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। আর তার স্ত্রী এ ঘরে বসেই আহাজারি করছেন। দুপুরে খাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা। কিন্তু খুনিরা খাবার সময়ও দেয়নি নিলয়কে।

নিলয়ের স্ত্রী আশামণি সাংবাদিকদের বলেন, তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিলো আরও আগে থেকেই। তিনি বলেন, মাসখানেক আগে আমার স্বামীর মোবাইলে কল করে হত্যার হুমকি দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। ব্লগার অনন্ত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন থেকে ফেরার পথেও তাকে দুই ব্যক্তি ফলো করেছিল। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, তিনি থানায় জিডি করতে গিয়েছিলেন। তবে পুলিশ জিডি নিয়েছিল কিনা তা আমি জানি না। আশামণি বলেন, দুপুর ১২টার নিলয় বাজার থেকে ফিরে ড্রয়িংরুমে ল্যাপটপ নিয়ে বসেন। এ সময় আমি ছাড়াও আমার ছোট বোন তন্বী ছিলাম বাসায়। হঠাৎ করে ২০-২১ বছর বয়সী জিন্সের প্যান্ট পরা এক যুবক দরজা খুলতেই বাসায় ঢোকেন। তিনি বাসা ভাড়া নেবেন বলে নিজ থেকেই দু’বার পুরো ফ্ল্যাট ঘুরে দেখেন। তখন আমি বলি, আমরা তো বাসা ছাড়ছি না, বাসা ভাড়া নেবেন কীভাবে? বাড়িওয়ালাকেও তো এ বিষয়ে কিছু বলিনি এ সময় ওই যুবক বলেন, বাড়িওয়ালাই আমাকে দেখে যেতে বলেছেন বলে হাতে মোবাইলেও যেন কী যেন করছিলেন। আমি বিষয়টি ড্রয়িংরুমে আমার স্বামীকে জানাতে যাই। এর মধ্যে আরও তিন যুবক বাসায় ঢোকেন। তাদের একজনের মুখে দাড়ি ছিলো। তারা ভেতরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দেন। তিনজন যুবকের হাতে রামদা ও একজনের হাতে পিস্তল ছিলো।

বারবার মূর্ছা যাওয়া নিলয়ের স্ত্রী আরও বললেন, একজন আমার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বারান্দায় রেখে ভেতর থেকে দরজা লক করে দেয়। একইভাবে অন্য রুম থেকে তন্বীকেও এখানে নিয়ে আসে। পরে একসঙ্গে নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবর বলে আমার স্বামীকে কুপিয়ে খুন করে চলে যায় তারা। বারান্দায় আমি বারবার বাঁচাও, বাঁচাও বলে চিৎকার দিলেও কেউ এগিয়ে আসেনি আমার স্বামীকে বাঁচাতে। স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে আশামণি বলেন, অতীতেও এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। কিন্তু বিচার হতে দেখিনি। বিচার হলে আজ আমাকে স্বামী হারাতে হতো না। স্বামী হত্যাকাণ্ডের পর নিজেকেও নিরাপত্তাহীন মনে করছেন যুবমৈত্রীর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আশামণি।

নিহত নিলয় সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার এই ব্লগার ইস্টিশন ব্লগে লিখতেন। গত কিছুদিন ধরে হুমকি পেয়ে আসছিলেন বলে ফেসবুক থেকে নিজের সব ছবি সরিয়ে ফেলার পাশাপাশি ঠিকানার জায়গায় বাংলাদেশের বদলে লিখেছিলেন ভারতের কোলকাতার নাম। গতকাল ঘটনাস্থলে উপস্থিত একজন নারী- শাম্মী হক পুলিশের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা অভিজিতের হত্যাকারীদের ধরতে পারেননি। এটাও পারবেন না।

চলতি বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জঙ্গি কায়দায় হামলায় খুন হন মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ রায়। এরপর ৩০ এপ্রিল সকালে ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় নিজের বাসা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় খুন হন অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ওয়াশিকুর রহমান বাবু। তার এক মাসের মাথায় সিলেটে বাসা থেকে বেরিয়ে অফিসে যাওয়ার পথে একই ধরনের হামলায় খুন হন আরেক মুক্তমনা ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ। তিনিও গণজাগরণ মঞ্চের সাথে যুক্ত ছিলেন। এর আগে ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রেও গলার ওপরের অংশ, মুখ ও মাথা ছিলো হামলাকারীদের লক্ষ্যবস্তু। এর আগে সবগুলো ঘটনাতেই রাস্তায় হামলা হলেও ব্লগার নিলয়কে হত্যা করা হলো তার বাসায় ঢুকে। তাকে যে মাঝে মধ্যেই অনুসরণ করা হচ্ছিলো, তা তিনি ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছিলেন গত ১৫ মে। এদিকে ব্লগার নিলয় খুনের ঘটনায় খিলগাঁও থানায় রাতে একটি মামলা প্রস্তুতি চলছিলো। এ ঘটনায় থানা পুলিশ, ৱ্যাব, ডিবি ও সিআইডি যৌথভাবে তদন্ত এবং অনুসন্ধান শুরু করেছে।

নিলয়ের ফেসবুক ওয়ালে : নিহতের কথা ছড়িয়ে পড়ার পর মুহূর্তেই ব্লগার নিলয় চট্টোপাধ্যায় নীলের ফেসবুক ওয়াল ছেয়ে গেছে অনুসারীদের প্রতিবাদী পোস্ট আর মাতমে। না ফেরার দেশে চলে যাওয়া এই ব্লগারকে নিয়ে কেউ জানিয়েছেন সমবেদনা, কেউ বা নিজের অসহায়ত্ব ঝেড়েছেন সমাজের প্রতি, প্রশ্ন তুলেছেন মুক্তচিন্তার অধিকার নিয়ে। শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ শেষ হওয়ার পরপর নিজ বাসায় নিলয় খুন হয়েছেন- এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

তাৎক্ষণিক অনেকেই বিশ্বাস করতে পারেননি এই ঘটনা, সাড়া চেয়ে ওয়ালে পোস্টও দেন কেউ কেউ। মেলেনি সাড়া। এরপরই পুলিশ নিশ্চিত করে উত্তর গোড়ান টেম্পোস্ট্যান্ডের কাছে একটি পাঁচতলা ভবনের পঞ্চম তলায় কুপিয়ে খুন করা হয় নিলয়কে, যিনি কাজ করতেন একটি বেসরকারি সংস্থায়।

দায় স্বীকার আনসার আল ইসলামের: ব্লগার নিলয় চট্টোপাধ্যায়কে হত্যার দায় স্বীকার করেছে আল কায়দার ভারতীয় উপমহাদেশের (এআইকিউএস) বাংলাদেশ শাখা আনসার আল ইসলাম। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ৩৯ মিনিটে নিজেকে মুফতি আবদুল্লাহ দাবি করে ইমেইলে এ দাবি জানানো হয়। ওই মেইলের প্রেরক হিসেবে আনসার আল ইসলামের মুখপাত্র মুফতি আবদুল্লাহ আশরাফের নাম লেখা রয়েছে। মেইলটিতে বলা হয়, ‘আনসার আল ইসলামের (আল কায়দা ভারতীয় উপমহাদেশ, বাংলাদেশ শাখা) মুজাহিদীনরা হামলা চালিয়ে আল্লাহতাআলা ও তার রাসূলের দুশমন নিলয় চৌধুরীকে হত্যা করেছেন। শুক্রবার দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে ওই অপারেশন সম্পন্ন হয়। এতে বলা হয়, ‘আল্লাহর রাসূলের সম্মান রক্ষার্থে প্রতিশোধমূলক ওই হামলা চালানো হয়েছে।’ বিবৃতিতে হুমকি দিয়ে বলা হয়, ‘আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিকৃষ্টতম দুশমনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছি। আমরা এদের ও তাদের সঙ্গীদের ধ্বংস করতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করব। হে মুসলিম উম্মাহ আমরা আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি যতক্ষণ পর্যন্ত এই সন্তানদের ধমনিতের রক্ত প্রবাহিত হতে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ ও তার রাসূলের শত্র“দের ওপর হামলা চলতেই থাকবে।

বিবৃতির শেষে বলা হয়, যদি তোমাদের বাক স্বাধীনতা কোনো সীমানা না মানতে প্রস্তুত থাকে তবে তোমাদের হৃদয় যেন আমাদের চাপাতির স্বাধীনতার জন্য উন্মুক্ত থাকে। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ শাখার উপকমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, ব্লগার নিলয় হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। আনসার আল ইসলামের দায় স্বীকারের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গ্রামের বাড়িতে শোকের মাতম: নিলয়ের গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর সদর উপজেলার টোনা ইউনিয়নের পান্তাডুবি গ্রামে গেলে দেখা যায় শোকের মাতম। নীলাদ্রী তারাপদ চট্টোপাধ্যায়ের ছেলে। মাত্র সপ্তাহ দুয়েক আগে বাড়ি থেকে ঘুরে গেছেন নিলয়। মা অপর্ণা চট্টোপাধ্যায় ছেলেকে ঢাকায় ফিরে যেতে বারণ করেছিলেন, বলেছিলেন- বাড়িতে বসে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে। একমাত্র বোন জয়শ্রী চট্টোপাধ্যায় গোপা একমাত্র ভাইয়ের শত্রুহীনতার কথা বলে হত্যাকারীদের বিচার দাবি করছিলেন।

বোন জয়শ্রী চট্টোপাধ্যায়, মামা, এলাকাবাসী জানান, পিঠাপিঠি ভাই-বোন তারা। নীলাদ্রী চলিশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করে তেজদাসকাঠি উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক এবং সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ পিরোজপুরে উচ্চ মাধ্যামিক শিক্ষা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। বাবা সাধারণ গৃহস্থ হলেও বাড়ির সদস্যদের কেউ শিক্ষক, কেউ বা আইনজীবী।