ডাক্তার-নার্সের অবহেলায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে প্রসূতির মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসক ও নার্সের অবহেলায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রসূতির নিকটজনরা অভিযোগ করেছেন। সদ্য প্রসূত পুত্রসন্তানকে এক নজর দেখেও যেতে পারেননি মা নাজমা। প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণেই নাজমা মারা গেছেন বলে হাসপাতালসূত্রে জানা গেছে।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার প্রতাপপুর গ্রামের জাসদ আলীর স্ত্রী নাজমিন আক্তার নাজমার (২০) প্রসব বেদনা উঠলে গতকাল শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গাইনি ওয়ার্ডের সেবিকা ও আয়া আশ্বস্ত করেন, সমস্যা নেই স্বাভাবিকভাবেই সন্তান প্রসব হয়ে যাবে। বেলা সাড়ে ৩টায় নাজমা পুত্র সন্তান প্রসব করেন। এটা তার প্রথম সন্তান। কিন্তু বিধি বাম। তিনি তার সন্তানকে এক নজর দেখতেও পারলেন না। সন্তান প্রসবের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তার জরায়ুর অনেকাংশ ছিঁড়ে যায়। অচেতন হয়ে পড়েন নাজমা। দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্স হাজেরা খাতুন চেষ্টা করেন রক্তক্ষরণ থামানোর। ডাক্তার আসার আগে তিনিই ছেঁড়া স্থানে প্রায় দু ঘণ্টা ধরে সেলাই দিয়ে রক্ত থামানোর চেষ্টা করেন। তাতেও শেষ রক্ষা হয় না। প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে নাজমার অবস্থা মুমূর্ষু হয়ে পড়ে। তিনি শেষমেশ জরুরি বিভাগের ডা. এহসানুল হককে খবর দেন। চিকিৎসক এহসানুল হক রোগীর শরীরে রক্ত দেয়ার পরামর্শ দেন। রোগীর শরীরে রক্তও দেয়া হয়; কিন্তু কোনো প্রকার ক্রসমেসিং না করেই রক্ত দেয়া হয় নাজমার শরীরে। অবস্থা বেগতিক হয়ে ওঠে। খবর পেয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আসেন গাইনি কনসালটেন্ট ডা. আকলিমা খাতুন। তিনি নাজমাকে দ্রুত বাইরে নেয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু তাকে বাইরে নেয়ার আগেই গতরাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রসূতি নাজমা মারা যান।

সদ্য প্রসূত নাজমার পুত্র সন্তান বর্তমানে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি আছে। ওই ওয়ার্ডের চিকিৎসক শিশু কনসালেটেন্ট ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন জানান, শিশুর ওজন ৪ কেজি। যা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ১ দেড় কেজি বেশি। তাই সন্তান প্রসব করানোর আগে আলট্রাসনোর মাধ্যমে দেখে সিজারের ব্যবস্থা করা উচিত ছিলো। নাজমার নিকটজনরা অভিযোগ করে বলেছেন, ডাক্তার ও নার্সের অদক্ষতার কারণেই নাজমা মারা গেছে। পারবেন না এটা কেন আগে তারা জানালেন না। নাজমার মা অভিযোগ করে বলেন, ‌নার্স আমার কাছে বখশিশ চেয়েছিলো। তারা বলেছিলো বাইরে ক্লিনিকে নিলেতো অনেক খরচ হবে। আমরা নরমালি ডেলিভারি করে দেবো আমাদের বখশিশ দিতে হবে। আমরা বারবার ডাক্তারকে ডাকার জন্য বলি কিন্তু নার্স-কর্মচারীরা তা কানে নেননি। যখন মেয়ে মরে যাচ্ছে তখন তারা অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে বলছে। তারা কেন আগে নিয়ে যেতে বললো না। এজন্য ডাক্তার নার্সরাই দায়ী।’ অভিযোগ রয়েছে গাইনি ওয়ার্ডে সময় মতো ডাক্তারের রাউন্ড হয় না। অধিকাংশ রোগীই হাসপাতাল থেকে রেফার করা হয়। সূত্র জানায়, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গত এক মাসে গাইনি ওয়ার্ডে সব মিলিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে মাত্র ৩৬টি। কিন্তু একই হাসপাতালের সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে অপারেশন হয়েছে ১০১টি ও অর্থোপেডিক অপারেশন হয়েছে ১২৬টি। অভিযোগ রয়েছে, ঝক্কি-ঝামালে এড়ানো ও বিশেষ সুবিধার নেয়ার জন্য গাইনি ওয়ার্ড থেকে রোগী বাইরে রেফার করেন ডা. আকলিমা খাতুন। যেসব গাইনি রোগীর জরুরি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয় তাদের হাসপাতালে অপারেশন করা হয় না। অনেকক্ষেত্রে তাদের পাঠানো হয় বাইরের ক্লিনিকে। অভিযোগকারীরা জানান, কয়েক মাসের মধ্যে এ ওয়ার্ডের কোনো রোগীকে জরুরিভাবে অপারেশন করা হয়নি।