আলমডাঙ্গার মাজু গ্রামে গৃহবধূ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে পুলিশ-গ্রামবাসি সংঘর্ষ : গাড়ি ভাঙচুর

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার মাজু গ্রামে গতরাতে এক গৃহবধুকে উদ্ধার করা নিয়ে তুলকালামকাণ্ড। এ সময় গ্রামবাসীর সাথে পুলিশের সংঘর্ষে দু মহিলা কনস্টেবলসহ ৩ জন পুলিশ আহত হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে পুলিশের গাড়ি। অন্যদিকে বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী আহত হয়েছে। এদের মধ্যে এক মহিলার অবস্থা বেশ সঙ্কটাপন্ন। প্রেমিকের হাত ধরে ঘর পালানো মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে মেয়ের পিতার দায়েরকৃত মিথ্যা অপহরণ মামলার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

পুলিশ ও গ্রামবাসীসূত্রে জানা গেছে, আলমডাঙ্গার কালিদাসপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুরের জসিম উদ্দীনের হাইস্কুলপড়ুয়া মেয়ে অন্তরার সাথে ডাউকি ইউনিয়নের মাজু গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে মিশকাতের প্রেম সম্পর্ক গড়ে উঠে। এর এক পর্যায়ে প্রায় ২ বছর আগে অন্তরা বাড়ি থেকে পালিয়ে প্রেমিককে বিয়ে করে। অন্তরার পিতা এ বিয়ে মেনে নেন না। প্রায় ৬ মাস আগে তিনি এক প্রকার জোর করেই অন্তরাকে তালাক নিয়ে বাড়িতে আটকে রাখেন। এভাবে কিছুদিন কাটার পরে এক ব্যাংক কর্মকর্তার সাথে অন্তরার আবার নতুন করে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। বিষয়টি জানতে পেরে পুনরায় গোপনে প্রেমিকের নিকট পালিয়ে যায় অন্তরা এবং কুষ্টিয়া আদালতে গিয়ে বিয়ে করে। বিয়ের পর বেশ কয়েক মাস ঘরসংসার করে তারা। মাসখানেক আগে অন্তরার পিতা আব্দুল জলিল তার মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছে অভিযোগ তুলে প্রেমিকের নামে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় প্রেমিকসহ আসামিরা জামিনে আছেন। অন্তরাকেও বিজ্ঞ আদালত তার স্বামীর জিম্মায় দিয়েছেন। এমতাবস্থায় পৃথক আরেকটি মামলায় কোর্টের ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হিসেবে গতরাত প্রায় সাড়ে ১০টার দিকে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের এসআই জিয়াউল হক জিয়া সঙ্গীয় ফোর্সসহ মাজু গ্রামে যান অন্তরাকে উদ্ধার করতে। পুলিশের সাথে অন্তরার পিতা ও চাচাও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তারা মহিলা পুলিশকে নিয়ে অন্তরাকে জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে। তার চিৎকারে প্রতিবেশী হেলালের স্ত্রী শাহনাজসহ আশপাশের মানুষ ছুটে আসে এবং অন্তরাকে পুলিশের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে যায়। এ সময় শাহনাজকে দলেচটকে গুরুতর আহত করা হয়। তার অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। পরে বেহুশ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে আলমডাঙ্গার শেফা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। এরই মধ্যে গ্রামের কয়েক শ মানুষ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তারা পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে পুলিশের মহিলা কনস্টেবল রিতা খাতুন ও ইসমতারাসহ ৩ পুলিশ সদস্য আহত হন। গত রাতেই তাদেরকে দ্রুত হারদী হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এ সময় উত্তেজিত গ্রামবাসী পুলিশের মাইক্রোবাস ভাঙচুর করে। আলমডাঙ্গা থানায় এ সংবাদ জানানো হলে পুলিশের পেট্রোল গাড়ি ও জামজামি পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে গণপিটুনি শুরু করে।

অন্যদিকে গ্রামবাসী অভিযোগ করেছে, পুলিশের গণপিটুনিতে শাহনাজ ছাড়াও ইমরান, কবিতা, আশাসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। গ্রামের অনেকে বলেছেন, মেয়েটির বিরুদ্ধে নতুন করে আদালত কর্তৃক সার্চ ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে, এ বিষয়টি গ্রামবাসী জানতো না। তাছাড়া পুরুষ পুলিশ শাদা পোশাকে থাকায় ভুল বোঝাবুঝির ঘটনা ঘটেছে।