সংসদ সদস্যও থাকছেন না লতিফ সিদ্দিকী!

স্টাফ রিপোর্টার: সংসদ সদস্য পদও হারাতে যাচ্ছেন সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। এর মধ্যে খুঁইয়েছেন দলের প্রাথমিক সদস্য পদও। আওয়ামী লীগের ভাষ্য, তার এমপি পদ বাতিলের জন্য দল থেকে স্পিকারকে দেয়া চিঠির অনুরূপ ব্যাখ্যা নির্বাচন কমিশনকেও (ইসি) দেয়া হবে।
নির্বাচন কমিশনার মো. জাবেদ আলী বলেন, লতিফ সিদ্দিকীকে চিঠি দিয়েছেন। বক্তব্য চেয়েছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ থেকে পাঠানো চিঠি পেয়েছেন। কমিশন থেকেও চিঠি পাঠানো হয়েছে। লতিফ সিদ্দিকী ও দলের পক্ষ থেকে বক্তব্য পাওয়ার পর দু পক্ষকে শুনানির জন্য ডাকা হবে। তারপর সংবিধানের ৬৬ ধারা, ৭০ ধারা অথবা সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি, আগে এ ধরনের সংসদ সদস্য পদ বাতিলের বিষয়গুলোতে আদালতের রায় ও নির্দেশনাগুলো তারা দেখবেন। আশা করছেন যথাযথ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য রায় দিতে পারবেন।

জাবেদ আলী জানান, কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার আর কোনো সুযোগ নেই। আজ উভয় পক্ষের জবাব দেয়ার শেষ দিন। তাহলে কি সাংসদ পদ হারাতে পারেন লতিফ সিদ্দিকী? এ ব্যাপারে সাবেক নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, জনগণ ওনাকে একটি দলের মার্কায় ভোট দিয়েছেন। সেই দল যখন তাকে বহিষ্কার করে তখন তার স্ট্যাটাস কী, স্বতন্ত্র? জনগণ তো তাকে স্বতন্ত্র সাংসদ নির্বাচন করেননি। তাহলে তিনি কীভাবে সাংসদ থাকেন? তার মতে, কোনোভাবেই লতিফ সিদ্দিকীর সাংসদ পদ থাকার ব্যবস্থা নেই। স্পিকারের চিঠির পর আওয়ামী লীগের কাছে নির্বাচন কমিশনের ব্যাখ্যা চাওয়ারও সমালোচনা করেন তিনি।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস বলেন, স্পিকারকে যে ধরনের চিঠি দেয়া হয়েছে অনুরূপ চিঠি নির্বাচন কমিশনকে যথাসময়ে দেবে আওয়ামী লীগ। গত ১৩ জুলাই লতিফ সিদ্দিকীর সাংসদ পদ বাতিলের জন্য জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে আওয়ামী লীগের পক্ষে চিঠি দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। চিঠিতে বলা হয়, ২০১৪ সালের ২৪ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় গঠনতন্ত্র অনুসারে লতিফ সিদ্দিকীকে দল থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। যেহেতু আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদও নেই সেহেতু এই দলের মনোনয়নে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য পদেও তাকে বহাল রাখা সমীচীন হবে না। এরপর লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদকে চিঠি দেন স্পিকার। ওই চিঠির সাথে সৈয়দ আশরাফের চিঠিটিও যুক্ত করেন স্পিকার।

চিঠিটি পাওয়ার পর ইসি আওয়ামী লীগ ও লতিফ সিদ্দিকীর কাছে এই বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, অষ্টম সংসদে কিশোরগঞ্জের বিএনপি সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামানেরও একই রকম অবস্থা হয়েছিলো। ওই নজিরকে সামনে রেখে কমিশন আইন-বিধি পর্যালোচনা করছে। ২০০০ সালে ওই সংসদে বিএনপি থেকে নির্বাচিত কিশোরগঞ্জ-২ আসনের তৎকালীন এমপি মো. আখতারুজ্জামানকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিলো। তখন ওই আসনটি শূন্য ঘোষণার জন্য স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে অনুরোধ করেছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। তখনো সিদ্ধান্তের জন্য সিইসির কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন তৎকালীন স্পিকার। এরপর শুনানি করেই আখতারুজ্জামানের সংসদ সদস্য পদ শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

তাহলে লতিফ সিদ্দিকীর ভাগ্যেও কী আখতারুজ্জামানের পরিণতি হবে- জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব সিরাজুল ইসলাম সরাসরি কোনো উত্তর দেননি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও লতিফ সিদ্দিকীকে ২ আগস্টের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। এরপর শুনানিসহ পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে ইসি। সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আইনকানুনের খুঁটিনাটি এবং এ সংক্রান্ত পূর্বের দৃষ্টান্তও দেখা হবে।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্য পদ বাতিলের বিধান রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি (ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা (খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহলে তার সংসদ সদস্য পদ শূন্য হইবে…। এছাড়া সংবিধানের ৬৭ ধারার (খ) উপধারায় বলা আছে, সংসদের অনুমতি না লইয়া তিনি একাধিকক্রমে নব্বই বৈঠক-দিবসে অনুপস্থিত থাকেন। কিন্তু লতিফ সিদ্দিকীর বেলায় এর কোনোটিই ঘটেনি। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেননি, তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর লতিফ সিদ্দিকীর সংসদে অনুপস্থিতি ৯০ দিন হয়নি। সংবিধানের ৬৬ ধারা অনুযায়ী এখন লতিফের ভাগ্য নির্ধারণ করবেন স্পিকার ও নির্বাচন কমিশন।

গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতির সাথে মতবিনিময় সভায় লতিফ সিদ্দিকী হজ, তাবলিগ জামাত, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও সাংবাদিকদের সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। এরপর প্রথমে মন্ত্রিসভা থেকে এবং পরে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় তাকে। ওই সময়ে দেশের বিভিন্ন আদালতে তার নামে একাধিক মামলাও হয়। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ভারত হয়ে ওই বছরের ২৩ নভেম্বর পরোয়ানা মাথায় নিয়ে দেশে ফেরেন সাবেক এই মন্ত্রী। পরে ২৫ নভেম্বর ধানমণ্ডি থানায় আত্মসমর্পণ করলে তাকে জেলহাজতে পাঠায় আদালত। গত ২৯ জুন জামিনে মুক্তি পান তিনি।