আমরা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই : খালেদা জিয়া

স্টাফ রিপোর্টার: নির্বাচন নিয়ে বিএনপি তার অবস্থান পরিবর্তন করেনি বলে স্পষ্ট করেছেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, দেশে শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তাদের অধীনে ভোট দেয়া সম্ভব হবে না। দেশের জনগণ ভোট দিতে পারবে না। খালেদা জিয়া বলেন, আমরা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই, নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। এ বিষয়ে আমাদের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি। ২০ দলীয় জোট নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন করবে। শনিবার রাতে রাজশাহী জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। গুলশানে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ওই মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়। দৈনিক ইত্তেফাকের নাম উল্লেখ করে খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, ওই পত্রিকায় এর আগে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দেয়া তার বক্তব্য নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে না গিয়ে বিএনপি ভুল করেনি। কারণ আওয়ামী লীগ আগেই ভোটের বাক্স ভর্তি করার কৌশল ঠিক করে রেখেছিলো। তারা বিএনপিকে নির্বাচনে নেয়ার অনেক চেষ্টাও করেছিলো। নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবি করে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, তারা সংবিধানবিরোধী কাজ করছে। তাদের পদত্যাগ করা উচিত। না হলে জনগণ ছাড় দেবে না। খালেদা জিয়া বলেন, এবার ঢাকা থেকে জেলা পর্যায়ের কোনো কমিটি করা হবে না। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাই কমিটি করবেন। সে ক্ষেত্রে কেউ যেন নিজের লোককে কমিটিতে স্থান না দেয়। যোগ্যতা, দলের প্রতি আনুগত্য, ত্যাগ এসব বিষয় বিবেচনায় নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। খালেদা জিয়া বলেন, ইয়াং জেনারেশনকে নেতৃত্বে আনতে হবে। বয়স্করাও থাকবে। তাদের পরামর্শ নিয়ে কাজ করতে হবে। ছাত্রলীগের দ্বন্দ্বে মাগুরায় মায়ের পেটে শিশু গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার সমালোচনা করে খালেদা জিয়া প্রশ্ন রাখেন, তারা কেউ ধরা পড়েনি, কেন?
বিএনপি অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে সরকারদলীয় নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি সারা জীবন থাকবে। কারণ বিএনপি কারও কথায় চলে না। মানুষের দুঃখ, কষ্টে তাদের পাশে থাকে বিএনপি। এ জন্য বিএনপি আছে, থাকবে। পরগাছাদের কথা শুনে আওয়ামী লীগ ধ্বংস হচ্ছে। এদের জন্য দেশ ধ্বংস হচ্ছে। খালেদা জিয়া রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, আওয়ামী লীগ যা করেছে তা ভুলে যেতে হবে। প্রতিহিংসা, প্রতিশোধ ভুলে যেতে হবে।

প্রতিহিংসার রাজনীতি ভুলে যেতে হবে: আগামী দিনে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে নতুনধারার রাজনীতির সূচনা করে বিএনপি দেশ পরিচালনা করবে বলে মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, আমরা বলতে চাই, আমরা রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে চাই। রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে চাই। আমাদের প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসার রাজনীতি ভুলে যেতে হবে। শহীদ জিয়ার বিএনপি এই ধরনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। আমরা চাই উন্নয়নের রাজনীতি, জনগণের কল্যাণ ও সুশাসনের রাজনীতি। সে জন্য আগামী দিনে আমাদের সুযোগ আসলে সেই ধারার রাজনীতির সূচনা করব।’

অন্যায়ভাবে কাউকে কিছুই করা হবে না: বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আওয়ামী লীগের কোনো জনসমর্থন নেই। তারা ভর করে আছে পুলিশের ওপর ও প্রশাসনের ওপর। বিচার বিভাগের ওপরও তারা ভর করেছে। এই সরকার তাদের (প্রশাসন ও পুলিশ) ভয় দেখায়, বলে যে যদি আওয়ামী লীগ না থাকে তাহলে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তোমাদের সবাইকে চাকরিচ্যুত করবে, তোমাদের সবাইকে জেল-জুলুম দিয়ে নানা রকম হয়রানি করবে। আমি স্পষ্টভাষায় বলে দিতে চাই, না বিএনপি ক্ষমতায় আসলে অন্যায়ভাবে কাউকে কিছুই করা হবে না। কেন চাকরিচ্যুত হবে? তারা যা কিছু করেছে, আওয়ামী লীগের চাপেই করেছে, আমরা জানি, আমরা বুঝি। তাদের বাধ্য করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবি: বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবি করে বিএনপিপ্রধান বলেন, নির্বাচন কমিশন সংবিধানবিরোধী কাজ করছে। তারা নাবালককে ভোটার করছে। তাদের লজ্জা থাকলে এখনই পদত্যাগ করা উচিত। আওয়ামী লীগ সারাজীবন ক্ষমতায় থাকবে না, তিনি আজীবন প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকবেন না। তার যদি সামান্যতম আত্মসম্মানবোধ থাকে, তিনি পদ ছেড়ে দেবেন। তা না হলে জনগণ তাকে ছেড়ে দেবে না, তাঁকে এমনভাবে পাকড়াও করবে, তখন তার কী অবস্থা হবে- আমি জানি না। জুলাই থেকে শুরু হওয়া ভোটার তালিকা হালনাগাদ বাতিল এবং সঠিক ভোটার তালিকা প্রণয়নের দাবি জানান তিনি।

আওয়ামী লীগের কিছু পরগাছা জুটেছে: খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের কিছু পরগাছা জুটেছে। কথায় কথায় তারা বলে বিএনপি নাকি পেট্রোলবোমা দেয়। আমরা এই রাজনীতি করি না। সুষ্ঠু তদন্ত হলে আমরা দেখাবো এ পেট্রলবোমা সংক্রান্ত সব কাজ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের। আর এসব করতে তাদের বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়েছে ওই পরগাছারা। পরগাছারাই ওই সব কাজ করেছে। বাসে আগুন কে দেয়? পুলিশ দেয়। পুলিশকে বলা হয়, তাদের বাধ্য করা হয়েছে। পুলিশ এটা নিজেরাও বলেছে, তারও রেকর্ড আমাদের কাছে আছে। আওয়ামী লীগের লোকজন পেট্রলবোমা দিয়ে মানুষ হত্যা করে, বাসে আগুন দেয়, আর মিথ্যা মামলা দেয় বিএনপির বিরুদ্ধে। এসব অপকর্ম ওই পরগাছারা শিখিয়েছে।

স্বাধীনতার পর জাসদের কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিলো, বিএনপির তখন জন্ম হয়নি। এই পরগাছাগুলো ছিলো। তারা কতো মানুষ হত্যা করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়িতে আক্রমণ করেছে। তখন ইচ্ছামতো তারা শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবকে বাজে কথা বলেছে, অসম্মান করেছে। এখন যেহেতু নেতা নেই, পারলে জুতোটাকে চুমো দিতে থাকবে। ক্ষমতায় থাকার জন্য জুতোকে বার বার সালাম করবে। পরগাছার জন্য দেশটা আজ শেষ হতে বসেছে। দেশটাকে ফোকলা করে দিয়েছে। মাগুরায় মা ও মায়ের পেটের শিশু গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় দোষীরা এখনো ধরা না পড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী।

দলকে সুসংগঠিত করতে হবে: খালেদা জিয়া বলেন, দলকে সুসংগঠিত করতে হবে। ঢাকা থেকে আর কোনো কমিটি দেয়া হবে না। তাই আমার লোক, আমার ভাই এটা দেখে কমিটি করাবেন না। যারা সাচ্চা, সৎ ও যোগ্য উপযুক্ত ব্যক্তিকে সংগঠনের নেতা নির্বাচিত করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে দায়িত্বে আনতে হবে। বয়স্কদের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য করবেন।

বন্যায় দেশ ভাসছে বলে অভিযোগ করে দলীয় নেতাকর্মীদের দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন। এছাড়া ২৬ আগস্ট বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ঐক্য প্যানেলকে বিভেদ ভুলে বিজয়ী করার জন্য আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

জাতীয়তাবাদী ঐক্য প্যানেলের প্রার্থী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এজে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, বদরুদ্দোজা বাদল, বোরহান উদ্দিন, মহসিন মিয়া, রাজশাহী বিভাগের মো. ইসহাক প্রমুখ প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় দলের নেতাদের মধ্যে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, আমীনুল হক, হারুনুর রশীদ, মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এরশাদ আলী, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোত্তালিব, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুল মুনির, সহসভাপতি আবু সাঈদ চান, মোখলেসুর রহমান, নুরুজ্জামান খান মানিক, সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু, সাবেক সভাপতি আব্দুল হাই প্রমুখ বক্তব্য দেন।