জীবন কখনো কখনো গল্প-উপন্যাসের কল্পনাকেও হার মানায়

 

জীবন কখনো কখনো গল্প-উপন্যাসের কল্পনাকেও হার মানায়। এমনই এক ঘটনায় সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে আহত মা নাজমা বেগমের প্রাণ বাঁচিয়েছে গর্ভস্থ শিশু। ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই জননীর জীবন বাঁচিয়েছে এ মিরাকল বেবি। গত বুধবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাতৃগর্ভে আহত ৭ দিনের শিশুটির দেহের ৪টি ক্ষতস্থানে ২১টি সেলাই দিয়েছেন ডাক্তাররা। তবে শিশুটির জীবন এখনও শঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসকরা। শিশুটি ঢামেক হাসপাতলের শিশু সার্জারি বিভাগের সাধারণ বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার মাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের গাইনি ওয়ার্ডে নেয়া হয়েছে। এখন শিশুটিকে সারিয়ে তুলতে তার বিশেষ যত্ন নেয়া প্রয়োজন।             সন্ত্রাস, দুর্বৃত্তায়ন, বর্বরতা সমাজের গর্ভে কতোদূর পর্যন্ত শেকড় ছড়ালে এমন ঘটনা ঘটতে পারে, তার সাক্ষী নাজমা বেগমের সন্তান। মাগুরা শহরের দোয়াপাড়ায় দলীয় আধিপত্য বজায় রাখার দ্বন্দ্বে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ দু পক্ষের সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তঃসত্ত্বা নাজমা বেগম পেটে গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধ হন আরও দুজন। তাদের একজন ওই দিন রাতে মাগুরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গত শনিবার রাতে মাগুরা সদর হাসপাতালে জরুরি অস্ত্রোপচারে কন্যাশিশু জন্ম দেন আহত গুলিবিদ্ধ নাজমা বেগম। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর দেখা যায় নবজাতক শিশুটিও মায়ের গর্ভে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। ভোর রাতের দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়।

এ ঘটনার সাথে জড়িত ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হলেও পুলিশ আটক করেছে মাত্র ২ জনকে। বাকি এক ডজন আসামি প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে বুক ফুলিয়ে। পুলিশ তাদের আটক করার সাহস পাচ্ছে না তারা এলাকায় প্রভাবশালী বলে। প্রতিকারহীন শক্তের অপরাধে বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে বলে শতবর্ষ আগে কবি আক্ষেপ করেছিলেন। কিন্তু শতবর্ষ পরে আমরা দেখছি শক্তের কৃত অপরাধকে অপরাধ দমনের সাথে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তরা হয় ভয় পাচ্ছে অথবা অর্থের বিনিময়ে উল্টো অপরাধীর জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে! তাদের নিরাপদে বিদেশে পালিয়ে যেতে দিচ্ছে অথবা খুঁজে পাচ্ছে না বলে প্রতিবেদন রচনা করে মানবতার অপমান করছে। মাতৃগর্ভে শিশু হন্তারক সন্ত্রাসীদের কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে না পারলে এমন ঘটনা হয়তো আরও ঘটবে। সেটা আমাদের কারোরই কাম্য নয়। প্রসঙ্গত কারণেই এ ঘটনার সাথে জড়িত সব সন্ত্রাসীকে ধরে উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করার দাবি রাখে।