মাথাভাঙ্গা মনিটর: মুম্বাই সিরিজ বোমা হামলার আসামী ইয়াকুব মেমনের ফাঁসি স্থগিত রাখার শেষ আবেদনও খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। ১৯৯৩ সালের ওই হামলার মূল অভিযুক্ত ইয়াকুবের ফাঁসির সাজাই গত মঙ্গলবার বহাল রাখলেন ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। ফলে ইয়াকুবের ফাঁসি দিতে আর আইনগত কোনো বাধা থাকলো না। এবার রাষ্ট্রপতি সম্মতি দিলেই আজ বৃহস্পতিবার সকাল৭টায় নাগপুর জেলে ফাঁসি হতে পারে তার।
ফাঁসির আদেশ স্থগিত করতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে মেমন। আবেদনে বলা হয়, ফাঁসি এড়াতে এখনো আইনি পন্থা বাকি রয়েছে তার। সেই আবেদনের শুনানিতে দু বিচারপতির মতভেদের জেরে মামলা যায় উচ্চতর বেঞ্চে। তিন বিচারপতির বেঞ্চে সেই আবেদনের শুনানির পর গতকাল বুধবার ফাঁসির সাজাই বহাল রাখলেন সুপ্রিমকোর্ট। সুপ্রিমকোর্টে শুনানি চলাকালীনই রাষ্ট্রপতির কাছে নতুন করে প্রাণভিক্ষার আর্জি জানান মেমনের আইনজীবী। এদিকে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ইয়াকুবের প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ করে দেন। ১৯৯৩ সালের সেই সিরিজ বোমা হামলায় ২৫৭ জন নিহত হয়।
সরকারি সূত্রে খবর, ৩০ জুলাই বৃহস্পতিবার ৫৪তম জন্মদিনে নাগপুর জেলে ফাঁসি হচ্ছে ৯৩ মুম্বই বিস্ফোরণ মামলার অন্যতম অপরাধী ইয়াকুব মেমনের। এ কারণে মুম্বই থেকে ইয়াকুবের স্ত্রী এবং পরিবার নাগপুরের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। প্রধান বিচারপতি এইচ এল দাত্তুর গঠিত তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার জানিয়ে দিলেন, বিচারের প্রক্রিয়া এবং মৃত্যু পরোয়ানায় কোনো গলদ ছিলো না। এদিন সকাল থেকে এ বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে ওই বেঞ্চ মেমনের আর্জি খারিজ করে দেয়। ইতোমধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে এ দিন আরও এক বার ফাঁসি মকুবের আর্জি জানিয়েছে মেমন। পাশাপাশি মহারাষ্ট্রের রাজ্যপালের কাছেও একই আবেদন করেছিল মেমন। এ দিন রাজ্যপাল সেই আর্জিও খারিজ করে দিয়েছেন। এই অবস্থায় মেমনের শেষ আশা, রাষ্ট্রপতির কাছে জানানো প্রাণভিক্ষার আবেদন। একটি সংবাদ সংস্থা জানাচ্ছে, রাষ্ট্রপতির কাছে এ দিন যে আর্জি জানানো হয়েছে সেটি তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আজ সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সাথে দেখা করতে যান।
আজ বৃহস্পতিবার তার ফাঁসি হবে কি-না তাই নিয়ে গত মঙ্গলবার দু ভাগ হয়ে গিয়েছিলেন শীর্ষ আদালতের দু বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। ওই দিন এক বিচারপতি ইয়াকুবের শেষ আর্জি মেনে তার ফাঁসিতে স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন। অন্য বিচারপতি খারিজ করে দিয়েছিলেন তার সেই আর্জি। শেষে ইয়াকুবের আর্জি শুনতে তিন বিচারপতিকে নিয়ে নতুন ডিভিশন বেঞ্চ গঠন করেন প্রধান বিচারপতি দাত্তু। ওই বেঞ্চের তিন সদস্য বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি অমিতাভ রায় এবং বিচারপতি পি সি পন্থ এ দিন সকালেই এজলাসে বসেন।
১৯৯৩’র মুম্বাই বিস্ফোরণে প্রায় আড়াইশো মানুষ মারা যান। ওই বিস্ফোরণে মূল অভিযুক্ত এই ইয়াকুব মেমন। এদিন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশের কাছে ওই বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের সদস্যেরা দেখা করেন। তাদের দাবি, মেমনকে ফাঁসি দেয়া হোক। প্রায় ১২০০ জনের স্বাক্ষরসহ একটি স্মারকলিপিও ফড়নবীশের হাতে তুলে দিয়েছেন তারা।
এর আগে সুপ্রিমকোর্ট ইয়াকুবের প্রাণদণ্ডই বহাল রেখেছিলেন। সেই আদেশের পুনর্বিবেচনা চেয়ে শীর্ষ আদালতে তার আর্জি খারিজ হয়ে যায় গত ৯ এপ্রিল। টাডা কোর্ট ৩০ জুলাই ফাঁসির দিন ঠিক করার পর অন্তিম আবেদন (কিউরেটিভ পিটিশন) নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় ইয়াকুব। তা-ও গত ২১ জুলাই খারিজ হয়ে যায়। এর পরেই ফাঁসি নিয়ে দেশজুড়ে শুরু হয়ে যায় বিতর্ক। শেষে বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই তার প্রাণদণ্ডের নির্দেশ হয়ে গিয়েছিলো এই অভিযোগ জানিয়ে ফের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান মেমন। রাষ্ট্রপতি যখন তার প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ করেছিলেন, তখনও আদালতে মামলাটির নিষ্পত্তি হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।