রেলের মৃধাকে দায়মুক্তি দিয়ে শাস্তির মুখে দুদক কর্মকর্তা

স্টাফ রিপোর্টার: চট্টগ্রামে রেলে নিয়োগ-সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলায় বরখাস্ত হওয়া রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক ইউসুফ আলী মৃধাকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দেয়ায় শাস্তি পেতে যাচ্ছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক রাশেদুর রেজা। হাইকোর্টের নির্দেশে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, নিয়োগ দুর্নীতির সাথে ইউসুফ আলী মৃধার সম্পৃক্ততার বিষয়টির দালিলিক প্রমাণ থাকলেও দুদকের এ তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে তাকে বাদ দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দুদক সূত্র জানিয়েছে, কয়েক দিন আগে এ বিষয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণসহ পুরো রায় দুদকের কাছে এসেছে। সেটি এখন সংস্থাটির আইন শাখায় রয়েছে। আদালতের নির্দেশমতো এখন দুদককে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান গতকাল মঙ্গলবার রাতে বলেন, ‘২৬ এপ্রিল আদালতের এ রায় হলেও দুদকের তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনার বিষয়ে আমরা এতোদিন অবগত ছিলাম না। কয়েক দিন আগে পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর জানতে পারি, আদালত তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দিয়েছেন।’

এ আইনজীবী আরও বলেন, মামলার এজাহারে মৃধার নাম ছিলো। পরে অভিযোগপত্র থেকে তার নাম বাদ দেয়া হয়। নাম বাদ যাওয়াটা আদালতের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। তাই মৃধার বিরুদ্ধে নিয়োগ-সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলার অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচার শুরুর জন্য চট্টগ্রাম মহানগরের সিনিয়র স্পেশাল জজকে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা রাশেদুর রেজার বিরুদ্ধেও ডিপার্টমেন্টাল প্রসিকিউশন করতে বলেছেন আদালত।

২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানায় রেলওয়ের সহকারী লোকো মাস্টারপদে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করা হয়। ওই মামলায় ইউসুফ আলী মৃধাসহ তিনজনকে আসামি করা হয়। দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুর রেজা মামলাটি করেন। তিনিই মামলার তদন্ত করেন। তদন্ত শেষে গত বছরের ৩০ নভেম্বর চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম মশিউর রহমান চৌধুরীর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। সেখানে মৃধাকে বাদ দিয়ে ৩২ জনকে আসামি করা হয়। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত তিন ব্যক্তি হাইকোর্টে আবেদন করেন। এরা হলেন-খাগড়াছড়ি সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক মো. আবদুল ওয়াদুদ ভূঞা, জহিরুল ইসলাম ও তপন কুমার দাস। তারা মামলা বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনের শুনানি শেষে হাইকোর্ট গত ২৬ এপ্রিল এ তিনজনের আবেদনও খারিজ করে দেন। একই সাথে ইউসুফ আলী মৃধার বিরুদ্ধে কর্মচারী নিয়োগ-সংক্রান্ত মামলা আমলে নিয়ে বিচার করতে চট্টগ্রাম সিনিয়র বিশেষ আদালতকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন খুরশীদ আলম খান।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল তৎকালীন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বাসায় যাওয়ার পথে টাকার বস্তাসহ আটক হন মৃধা। রেলের ‘কালো বিড়াল’ খোঁজার ঘোষণা দিয়ে আলোচিত মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ব্যাপক সমালোচনায় পড়েন। তাকে সরিয়ে দেয়া হয় রেল মন্ত্রণালয় থেকে। টাকার বস্তাসহ আটক মৃধার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক। ২০১১ সালে রেলের পূর্বাঞ্চলে ২৫টি শ্রেণিতে ১ হাজার ১৭৭ জনের বিপরীতে ১ হাজার ১১৭ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। রেলের কন্ট্রোল অপারেটর, কার্পেন্টার, কোর্ট ইন্সপেক্টর, টিকিট ইস্যুয়ার, সহকারী কেমিস্ট, সহকারী লোকোমাস্টার, ট্রেড অ্যাপ্রেনটিস, ফুয়েল চেকার ও টুলকিপারসহ ২৫ শ্রেণিতে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে মৃধা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ২০১২ ও ২০১৩ সালে দুদক ১৪টি মামলা দায়ের করে। এসব নিয়োগের উত্তরপত্র ও টেব্যুলেশন শিটে ঘষামাজা ও কাটাকাটিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তীতে মামলার তদন্ত শেষ ৬টি মামলার অভিযোগপত্র থেকে মৃধাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। ওই সব অভিযোগপত্রে বলা হয়, ইউসুফ আলী মৃধা নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন না। তিনি তার দৈনন্দিন কার্যক্রম হিসেবে এসব নিয়োগ অনুমোদন করেছেন মাত্র। তিনি এ অপরাধের সাথে জড়িত ছিলেন, তদন্তে এ ধরনের কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।