বুঝতে না বুঝতেই মৃত্যু : মৃতদেহের মুখে ওঝার দাওয়ায়

চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের কেদারগঞ্জে ঘুমন্ত কিশোরকে সর্প দংশন

 

স্টাফ রিপোর্টার: গভীর রাতে ঘুম থেকে জেগে যখন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে কিশোর সিজান তখন পরিবারের সদস্যরা বুঝতেই পারেনি, যন্ত্রণায় কাতরানোর কারণ। যন্ত্রণা তীব্র থেকে তীব্রতর হওয়ার এক পর্যায়ে হাসপাতালে নেয়া হলেও কিশোরকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। মৃতদেহ নিজ বাড়ি চুয়াডাঙ্গা কেদারগঞ্জ জোলপাড়ায় নিয়ে ধোয়ানোর সময় পাওয়া যায় গলায় ও পায়ে সাপে দংশনের দাগ। এরপরই শুরু হয় মৃত কিশোর সিজানকে বাঁচিয়ে তোলার ঝাড়ফুঁকসহ দাওয়ায় সেবনের ব্যর্থ চেষ্টা।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা কেদারগঞ্জ জোলপাড়ার কৃষক নাজের আলীর ছেলে মনিরুল ইসলাম সিজান (১৩) আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। সে প্রতিরাতের মতো গতপরশু রাতে নিজ বাড়িতে দাদির পাশে ঘুমিয়ে ছিলো। রাত আনুমানিক ৩টার দিকে সিজান ঘুম থেকে জেগে ওঠে। দাদি চায়নাকে ডেকে তোলে। বুকেসহ শরীরের মধ্যে যন্ত্রণার কথা জানায়। দাদি বুকে তেল মালিশ করে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়তে বলেন। কিছুক্ষণ পর সিজান ফের দাদিকে জাগিয়ে তুলে তীব্র যন্ত্রণার কথা জানায়। সিজানের পিতাকে ডেকে তোলা হয়। তিনি প্রথমে সকালে ডাক্তারের নিকট নেয়ার কথা জানালেও ছেলের অসহনীয় যন্ত্রণার কথা শোনার পর বিছানা ছেড়ে হাসপতালে নেয়ার প্রক্রিয়া করেন। ততোক্ষণে বড্ড দেরি হয়ে যায়। হাসপাতালে নেয়া হয় ভোর ৫টার দিকে। কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. এহসানুল হক কিশোর সিজানকে মৃত বলে ঘোষণা দেন। তবে তিনি বুঝতে পারেন না, কি কারণে সিজানের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদেহ বাড়ি ফিরিয়ে নেয়া হলে নানাজনে নানা মন্তব্য করতে শুরু করে। মৃত্যুকে রহস্যজনক বলেও মন্তব্য করতে থাকেন কেউ কেউ। এরই এক পর্যায়ে বাদ জোহর নামাজে জানাজা শেষে দাফন কাজ সম্পন্ন করার প্রাথমিক প্রস্তুতি নেয়া হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মৃতদেহ ধোয়ানোর সময় চোখে পড়ে গলায় ও পায়ে সাপে দংশনের দাগ। এরপরই কেউ কেউ বলতে শুরু করেন, ওঝা কবিরাজের চিকিৎসা দিলে সুস্থ হয়ে উঠবে সিজান। এ কথায় কান দিয়ে কেউ ছোটেন ঝিনাইদহের কোর্টচাঁদপুরের সেই ভণ্ড কবিরাজ হবির পুত্রবধূর বাড়ি, কেউ ছোটেন অন্য কবিরাজের বাড়ি। কোর্টচাঁদপুর থেকে হবি কবিরাজের স্ত্রী গাছড়ার দাওয়ায় দিয়ে বলে, মুখের মধ্যে এ ওষুধ ঢেলে দিতে হবে। এরপর আধাঘণ্টা থেকে ৩৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে।

কোটচাঁদপুর থেকে দাওয়ায় নিয়ে যখন এক ব্যক্তি ফেরেন চুয়াডাঙ্গায় তখন মৃতদেহ কাফনে মুড়িয়ে নামাজে জানাজার জন্য নেয়া হয়েছে তারা জামে মসজিদে। সেখানেই মৃতদেহের মুখে দেয়া হয় দাওয়ায়। এরপর কেউ বলে, মৃতদেহের বর্ণ উজ্জ্বল হয়ে উঠতে শুরু করেছে, কেউ বলে অপেক্ষা করুন ভালো খবর আসছে। এসব নিয়ে উত্তেজনা দানা বাধতে থাকে। অবশেষে ওঝা কবিরাজের ওসব জারিজুরিতে কিছুই হচ্ছে না দেখে মৃতদেহ দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়।

কৃষক নাজের আলীর দু ছেলের মধ্যে মনিরুল ইসলাম সিজান ছিলো বড়। সে ছিলো মেধাবী ছাত্র। পরশু রাতে ঘুমের মধ্যেই তাকে সাপে দংশন করে। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে না পারায় যেমন হাসপাতালে নিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয়নি, তেমনই মৃত্যুর পর নানাজনের নানা কথায় কান দিয়ে দিনভর হয়রানি হতে হয়েছে সিজানের নিকটজনদের।