অর্থ সঙ্কটে সড়ক-মহাসড়ক উন্নয়ন পরিকল্পনা

 

স্টাফ রিপোর্টার: মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী সড়ক-মহাসড়ক উন্নয়ন পরিকল্পনা অর্থ সঙ্কটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে আগামীতে প্রয়োজনীয় অর্থের তুলনায় বরাদ্দ রাখা হয়নি। ফলে অগ্রাধিকারমূলক একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ মাঝপথে থেমে যেতে পারে। এ অবস্থায় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।

অর্থ সঙ্কট কাটাতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদকে একটি চিঠি দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এমএএন ছিদ্দিক। ওই চিঠিতে সড়ক ও মহাসড়ক উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আগামী ২০১৬-১৮ অর্থবছরের জন্য ২২ হাজার ২৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়ন এবং ২০৪১ সালে দেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। এ পরিকল্পনার আওতায় চলতি অর্থবছরের (২০১৫-১৬) মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প ও ইস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইম্প্রুভমেন্টসহ ৪৪টি প্রকল্প শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া গত অর্থবছর (২০১৪-১৫) নেয়া ৪৬টি প্রকল্প শেষ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়।

পাশাপাশি উন্নয়ন পরিকল্পনার আওতায় রাজধানী ও পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসনের জন্য ঢাকা ম্যাস ৱ্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (ডিএমআরটিডিপি) এবং গ্রেটার ঢাকা সাস্টেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট (বিআরটি) দুটি মেগা প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু এসব প্রকল্প সঠিক সময়ে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের অর্থ সংকট দেখা দিতে পারে।

অর্থ সঙ্কটের কথা তুলে ধরে সড়ক পরিবহন ও সেতু সচিব চিঠিতে বলেন, ২০১৬-১৮ অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত বরাদ্দ দিয়ে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। এ বিভাগের কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য চলতি বাজেটের চেয়ে আগামী দু বাজেটে বরাদ্দ আরও ২৫ শতাংশ উন্নীত করা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, এই বিভাগের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রায় নয় হাজার ৮৯০ কোটি টাকা এবং পরবর্তী অর্থবছরের জন্য ১২ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ সীমা নির্ধারণ করতে হবে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, ঢাকা ম্যাস ৱ্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প একটি জাতীয় জনগুরুত্বপূর্ণ ফাস্ট ট্রাক প্রকল্প। আগামী ২০১৯ সালের মধ্যে এ প্রকল্পের আংশিক কমিশনিংয়ের জন্য সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এজন্য মধ্যমেয়াদি বাজেটে অগ্রিম ও চলমান বিল পরিশোধ বাবদ সাত হাজার ২২৩ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। ফলে আগে যে অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা দিয়ে এ ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে না।

জানা গেছে, গাজীপুরের শিববাড়ী থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত বাস ৱ্যাপিড ট্রানজিট চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ হচ্ছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। এ প্রকল্পের দীর্ঘ হচ্ছে ৪০ কিলোমিটার। এ পথের নির্ধারিত লেনে বিআরটিএর ১৮ মি. দৈর্ঘের আর্টিকুলেটেড বাস চলাচল করবে। দ্রুতগতির এসব বাস ঘণ্টায় ২০ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।

জানা গেছে, মধ্যমেয়াদী বাজেট (২০১৬-১৮) কাঠামোর আওতায় এ প্রকল্পের জন্য দু হাজার ৫২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক হাজার ২০ কোটি টাকা এবং ২০১৭-১৮ এর জন্য বরাদ্দ রাখা হয় এক হাজার ৫১৮ কোটি টাকা। এছাড়া অপর প্রকল্প সাস্টেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্টও (বিআরটি) অর্থ সংকটের মুখে পড়তে পারে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আগামী ২০১৬-১৮ এই দুই অর্থবছরের জন্য এক হাজার ১৭৮ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু সচিবের চিঠিতে। সড়ক-মহাসড়ক উন্নয়ন পরিকল্পনার মধ্যে আরও আছে দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু প্রকল্প, দ্বিতীয় মেঘনা সেতু প্রকল্প এবং দ্বিতীয় গোমতি সেতু নির্মাণ প্রকল্প, যা আগামী ২০১৬-১৮ অর্থবছরে পূর্ণমাত্রায় চলবে। একই সময়ে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক নির্মাণ প্রকল্প এবং সিলেট বিমানবন্দর বাইপাস ইন্টারসেকশন-লালবাগ-সালুটিকর-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ সড়ক প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজও চলবে। এজন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন।

কিন্তু সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে চলতি অর্থ বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয় প্রায় সাত হাজার ৯১২ কোটি টাকা। মধ্যমেয়াদী বাজেট কাঠামোর আওতায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কমিয়ে বাজেট প্রক্ষেপণ করা হয় সাত হাজার ৬০৩ কোটি টাকা, যা চলতি বাজেটের চেয়ে ৩০৯ কোটি টাকা কম। পাশাপাশি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বরাদ্দ রাখা হয়েছে আট হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা।