সড়ক দুর্ঘটনা : মৃত্যুর মিছিলে আরো ২৩ প্রাণ

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীসহ সারাদেশে গতকাল সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরে গেলো আরো ২৩টি প্রাণ। আগের দিন সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৯ জন নিহত হন। গতকাল রাজধানীতে পুলিশের একজন কনস্টেবলসহ ৪ জন পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। গাজীপুরের নাওজোর এলাকার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে কাভার্ড ভ্যান-লেগুনা মুখোমুখি সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হন। মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার মেলকাই নীলখোলা স্থানের ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হন। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের সোহাগপাড়ায় বাস খাদে পড়ে গেলে ২ জন নিহত হন।

রাজধানী ঢাকা কাওরান বাজারে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউতে গতকাল দুপুরে বাসের ধাক্কায়  পুলিশের কনস্টেবল সোহেল রানা (৩২) নিহত হয়েছেন। তিনি পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) কর্মরত ছিলেন। তার বাবার নাম খলিলুর রহমান। কুষ্টিয়ার থানা পাড়ার পুলিশ লাইন এলাকায় তার বাড়ি। এ ঘটনায় পুলিশ মিরপুর শেওড়া পাড়া থেকে বিটিসিএল পরিবহনের বাস ও চালক আব্দুল খালেককে আটক করেছে। তেজগাঁও থানার এসআই রকিবুল ইসলাম জানান, দুপুরে মোটরসাইকেলে করে সোহেল ঐ সড়ক দিয়ে যাচ্ছিলেন। ভোরে খিলক্ষেত কুড়িল বিশ্বরোড ফ্লাইওভারের নিচে আইল্যান্ডের সাথে ধাক্কা লেগে বাসের তিন যাত্রী জানালার গ্লাস ভেঙে পড়ে যান। এতে নাসরিন আক্তার নামে এক গার্মেন্টস কর্মী নিহত হন। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি অবনী শংকর কর জানান, সকালে যাত্রাবাড়ীর কলাপট্টি থেকে রাস্তা পার হওয়ার সময় বাসের ধাক্কায় মজিবুর রহমান নিহত হন। তার বাড়ি ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকার কালিন্দায়। সকালে শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ডে আরিফুল ইসলাম সেলিম (৪৫) নামে এক ব্যক্তি রাস্তা পার হওয়ার সময় বাসের ধাক্কায় মারা যান। নিহত সেলিম একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। গাজীপুরে সকালে নাওজোর এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে কাভার্ডভ্যান ও লেগুনার সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫ জন। হতাহতরা সকলেই লেগুনার যাত্রী। দুর্ঘটনার পর পুলিশ লেগুনা ও কাভার্ড ভ্যান আটক করলেও কাভার্ড ভ্যানের চালক ও সহকারী পালিয়ে গেছে। নিহতরা হলেন লেগুনার চালক সাইদুর (২০), মনি আক্তার (২৬), কেয়া কসমেটিকস কারখানার কর্মচারী সোহেল মিয়া (৩০), সেলিনা বেগম (৩০) ও অজ্ঞাত পুরুষ (৩৫)। আহতদের মধ্যে এনামুল হক, আব্দুল কুদ্দুস, মামুন, পমির ও ফখরুল ইসলামসহ ১৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মাদারীপুরে দুপুরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের কালকিনি উপজেলার মেলকাই নীলখোলায় বাসের সাথে মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ৫ জন মারা যান। নিহতদের পরিচয় জানা যায়নি। তাদের সবার বাড়ি বরিশাল জেলায়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় সুমন খন্দকার, আনসারী, শারমিন, মকবুল হোসেন ও আনোয়ার হোসেনসহ কমপক্ষে ১২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। টাঙ্গাইল: সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর উপজেলার সোহাগপাড়ায় বাস খাদে পড়ে একজন মহিলাসহ ২ জন নিহত ও ১৭ জন আহত হন। নিহতরা হলেন গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জের শাহানুল বেগম (৩০) ও নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের রোকনুজ্জামান (২৫)। গোড়াই হাইওয়ে থানার ওসি হুমায়ূন কবির জানান, গাইবান্ধা থেকে ছেড়ে আসা তিতাস এন্টারপ্রাইজের মিনিবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। অপরদিকে, টাঙ্গাইল সদর থানার দরুন এলাকায় বাসের চাপায় সেলিম মিয়া (২৬) নামে এক সাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন।

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার কটকস্থলে দুপুরে বাসের ধাক্কায় নাসির উদ্দিন হাওলাদার (৩০) নামের এক মোটরসাইকেল চালক নিহত, শহীদ ও সেলিম মিয়া নামের দুইজন আরোহী গুরুতর আহত হয়েছেন। নিহত নাসির উজিরপুরের ওটরা গ্রামের উজ্জ্বল হাওলাদারের পুত্র। একইদিন দুপুরে গৌরনদী-সরিকল সড়কের পিঙ্গলাকাঠী বাজারের সিরাজ মৃধার চায়ের দোকানে চলন্ত প্রাইভেটকার ঢুকে গেলে আটজন আহত হয়েছেন। বগুড়া-নওগাঁ সড়কে দুপচাঁচিয়া উপজেলার চৌমুহনী বাজার এলাকায় দুপুরে মাইক্রোবাস ও ভটভটির মুখোমুখি সংঘর্ষে মোস্তাফিজার রহমান বুলু (৫০) নামের এক পথচারি নিহত এবং দুইজন আহত হন। সকালে দুপচাঁচিয়ার তালুচ বাজার এলাকায় পুলিশের পিকআপ ভ্যানের সাথে একটি মাইক্রোবাসের ধাক্কায় দুপচাঁচিয়া থানার এসআই আবু মূসাসহ মাইক্রোবাসের চালক আহত হন। বিকালে বিশ্বনাথ-জগন্নাথপুর সড়কের কালিগঞ্জবাজার নামক স্থানে বাসের চাপায় মনিরুল ইসলাম (৬) নামে এক শিশু নিহত হয়। এ সময় স্থানীয় জনতা বাস ও গাড়ির চালককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। সকালে ঝিনাইগাতী থেকে ঢাকাগামী বাস আহমদনগরে অটোরিকশাকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই আবুল কাসেম (৩৫) নিহত ও ৪ জন আহত হন। নারায়ণগঞ্জ কাঁচপুর ব্রিজে সকালে ট্রাকের ধাক্কায় মুজিবুর রহমান (৫৩) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। সকালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় বাসের চাপায় বেগম (৪০) নামে এক নারী নিহত হন।