নীতি নৈতিকতার স্খলন? নাকি বিকৃত মানসিকতার হিংস্র প্রকাশ? শিশু রাজনকে বেঁধে পিটিয়ে হত্যাকারীদের হিংস্রতাকে হিংস্র পশুর সাথে তুলনা করলে বোধকরি পশুদেরও মর্যাদার হানি হয়। হত্যার ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় শুধু দেশ নয়, বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাঙালিরা তীব্র ঘৃণা জানিয়ে দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে। স্বরাস্ট্রমন্ত্রীও এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের কেউ পার পাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা সৌদিতে গ্রেফতার হয়েছে। মুহিতকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। মুহিত আলমের শ্যালক ইসমাইল হোসেন আবলুচকেও রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
ভিডিও থেকে জানা গেছে, কতোটা বর্বরোচিতভাবে শিশু রাজনকে হত্যা করা হয়েছে। ঠাণ্ডা মাথায় নির্যাতন চালানো হয়েছে। অমানবিক নির্যাতনের মুখে শিশুটি যখন তার শেষ আশ্রয় হিসেবে পুলিশের হাতে সোপর্দ করার জন্য অনুনয় করেছে, তখন নিপীড়নকারীদের একজন নিজেকে পুলিশ বলে দাবি করেছে। তারা যে রাজনকে হত্যা করতে চেয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহের কারণ নেই। কেননা, ভিডিওতে তার সাক্ষ্য রয়েছে- শেষ দিকে নির্যাতনকারীদের একজন সঙ্গীদের কাছে জানতে চায়, ‘কিতা করতাম?’ আরেকজনকে তখন বলতে শোনা যায়, ‘মামায় যে কইছন, ওই কাম করি ছাড়ি দে!’ এই ‘মামা’ যে নির্দেশদাতা, তা বুঝতে কারো বাকি নেই। শুধু তা-ই নয়, হত্যাকারীরা লাশ গুমের চেষ্টা চালিয়েছিলো। শেখপাড়ার মুহিত আলমের মাইক্রোবাসে তুলে স্থানীয় কুমারগাঁও এলাকার ভেতরের দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় লোকজন দেখে ফেললে মাইক্রোবাসটি সেখানে ফেলে এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট নির্যাতনকারীরা পালিয়ে যায়। মখলিছ মিয়া নামের এক যুবককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয় জনতা। এ যাবত যে বর্ণনা পাওয়া গেছে, তাতে স্পষ্ট যে স্থানীয় কিছু লোক এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলো। তারা খুনিদের ভয়ে প্রতিবাদ করেনি? নাকি সমাজ অসভ্যতার কাছে অসহায়ের মতো আত্মসর্পণ করেছে?
সারাদেশে যতো ঘটনা ঘটে, তার কিয়দংশ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। অনুমান কঠিন নয় যে, এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটেছে, ঘটে। শিশু রাজন হত্যাকাণ্ড, সমাজের সামনে যে প্রশ্নটি ছুড়ে দিয়েছে তা হলো- সমাজে এ রকম ঘটনা কেন ঘটছে? প্রতিকারই বা কী? অবশ্যই আইন সমাজের অপরাধ প্রবণতা রোধে সহায়ক। আইনের যথাযথ প্রয়োগই পারে অপরাধ প্রবণতা রুখতে। শিশু রাজন হত্যাকাণ্ডের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক বিচার ওই ধরনের হত্যাকাণ্ডই শুধু নয়, আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার মতো ক্ষতিকর প্রবণতা হ্রাস পাবে। পুলিশকেও আইন প্রয়োগে আন্তরিক হতে হবে। ন্যায় অন্যায়ের পার্থক্য বুঝে সমাজের সচেতন মানুষগুলোকেও সামাজিক দায়িত্বপালনে এগিয়ে আসা দরকার।