আল বিদা মাহে রমজান

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউসুফ আলী: আজ ২৭ রমজান। গতকাল শবেকদরের রাতটি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণ ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলীল, ধর্মীয় আলোচনা ও কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অতিবাহিত করেছেন। পবিত্র মাহে রমজানের শেষ প্রান্তে এসে আমাদের হিসাব মিলানো দরকার যে পবিত্র রমজান মাস থেকে আমরা কি অর্জন করলাম। মহিমান্বিত এই মাস যে বার্তা আমাদের কাছে পেশ করেছিলো তার কতোটুকু আমাদের জিন্দেগীতে প্রতিফলিত হল। ভালো ছাত্র মাত্রই পরীক্ষার আগ মুহূর্তে হিসাব-নিকাশ করে আর নিজের মনকে জিজ্ঞাসা করে, প্রস্তুতি সব ঠিক ঠাক তো? কতোটুকু পড়লাম আর কতোটুকু বাকি? ব্যবসায়ী বা দোকানদার দিনের শেষে অংক কষতে বসে, কতোটুকু লাভ হলো আর কি পরিমাণ লোকসান হলো? যদি লোকসান হয় কিংবা লাভ কম হয় তাহলে পরিকল্পনা করে, কিভাবে আগামীতে আরও বেশি বেশি লাভ করা যায়। রমজানও এসেছিলো আখেরাতের এক মহান ব্যবসা নিয়ে। লাভের পরিমাণও ঘোষনা করা হয়েছিলো ন্যূনতম ৭০ গুণ, ঊর্ধ্বে অগণিত, মহান আল্লাহর শান অনুযায়ী। বরকত, মাগফেরাত ও নাজাতের পসরা নিয়ে পবিত্র এই মাস মেহমান হয়ে এসেছিলো আমাদের আঙিনায়। আমরা কি তার ঠিকমত সমাদর করতে পেরেছি? রোজার সমস্ত আহকাম কি আমরা ঠিকমতো আদায় করতে পেরেছি এবং দয়ালু মাওলার সাধারণ ক্ষমার আওতায় নিজেকে আনার মতো যোগ্য বানিয়েছি? সময় একেবারে শেষের পথে। আর দেরি না করে এখনই এ সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খোঁজা উচিত। যদি উত্তর হাঁ বাচক হয় তাহলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি, আর যদি না বাচক হয় তাহলে মহান আল্লাহর কাছে চোখের পানি ফেলে মাফ চাই। নিজ পাপের জন্য অনুশোচনা করি এবং ভবিষ্যতে পাপ না করার ওয়াদা করি। কারণ আল্লাহ তায়ালা তো গফুরুর রহিম, তিনি সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিতে পারেন, এতে কারো অভিযোগ ওঠানোর এখতিয়ার নেই। মহান আল্লাহপাক নিজেই পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন, আমার রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন (সুরা যুমার: আয়াত ৫৩)। রমজানের শিক্ষা যেন শুধু রমজানেই সীমাবদ্ধ না থাকে সেদিকেও আমাদের খেয়াল রাখা দরকার। রমজান আমাদেরকে দিয়েছিলো ধৈর্য, সময়ানুবর্তিতা, সহানুভূতি, আত্মত্যাগ, আত্মসংযম এবং আত্মসংশোধনের ছক। রমজানের বাইরেও আমাদের বাস্তব জীবনে যদি এর প্রতিফলন দেখা যায় তাহলেই রমজানের সার্থকতা।