ঈদ মার্কেট হাইওয়ে শিল্পাঞ্চলে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা

স্টাফ রিপোর্টার: ঈদ মার্কেটে ক্রেতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী ও মলম পার্টির দৌরাত্ম্য বন্ধ এবং টানা ছুটিতে শিল্পাঞ্চলে বিশেষ সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। ঘরমুখি মানুষের বাড়তি চাপে সৃষ্ট হাইওয়ের যানজট নিরসনে হাইওয়ে ও স্থানীয় জেলা পুলিশকে ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেয়া হয়। ঈদ উপলক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকের আলোকে সংশ্লিষ্টদের এসব নির্দেশ দেয়া হয়। বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

তবে ওই বৈঠকে নেয়া বেশ কিছু সিদ্ধান্তের প্রতিফলন এখনও দেখা যায়নি। বিশেষ করে বাস ও লঞ্চের টিকিট কালোবাজারে বিক্রি প্রতিরোধে কয়েকটি সংস্থা ও মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু বাস্তবে শেষ পর্যন্ত ওই নির্দেশ বাস্তবায়ন হয়নি। রেল ও বাসের টিকেট আগাম বিক্রি হয়েছে। অনেক টিকেট কালোবাজারে চলে গেছে। পাশাপাশি তৈরি পোশাক খাতে বেতন ও ভাতা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো। বাস্তবতা হচ্ছে অনেক কারখানায় এখনও বেতন-ভাতা বকেয়া রয়েছে। কার্যবিবরণীতে সার্বিক বিষয়ে ১২টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের স্বাক্ষরিত ওই সিদ্ধান্তগুলোর একটি প্রতিবেদন অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে অধিকাংশ পদক্ষেপের সাথে জড়িত আছে পুলিশ বাহিনী।

ঈদের নিরাপত্তা নিয়ে মঙ্গলবার ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সংবাদমাধ্যমকে বলেন, লোকজন যাতে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদ উৎসবের জন্য ঢাকার বাইরে যেতে পারে এবং উৎসব শেষে আবার ঢাকায় ফিরে আসতে পারে সে জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হবে। বায়তুল মোকাররম মসজিদসহ অন্যান্য স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। এ ক্ষেত্রে সাদা পোশাকে এবং পোশাকে কাজ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দু ধরনের ব্যবস্থা নেবে।

ঈদকে সামনে রেখে মার্কেট ও বিপণিবিতানে জনসাধারণের ঢল নেমেছে কেনাকাটার জন্য। এ সুযোগে বিভিন্ন ধরনের অপরাধী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ওই বৈঠকের কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, জনসাধারণ যাতে ঈদ উপলক্ষে নির্বিঘ্নে কেনাকাটা করতে পারে সে জন্য মার্কেট ও ক্রেতা সাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়। পুলিশের আইজি ও সব পুলিশ কমিশনারসহ এসবিকে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি জুয়েলারি মার্কেটগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, ক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পোশাকধারীর পাশাপাশি শাদা পোশাকে নজরদারি অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়।

ঈদকে সামনে রেখে সন্ত্রাসী চক্র ও দুষ্কৃতকারীদের তৎপরতা রোধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি বাস-লঞ্চ টার্মিনাল ও রেলস্টেশনে অজ্ঞান ও মলম পার্টির খপ্পর রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এখনও সক্রিয় রয়েছে অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টি।

ঈদের আগে তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিক ছাঁটাই না করা এবং লে-অফ ঘোষণা না করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি মঙ্গলবার থেকে পোশাক খাতের শ্রমিকদের পর্যায়ক্রমে ছুটির ব্যবস্থার কথা বলা হয়। তা বাস্তবায়নের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএকে বলা হয়। এ ছাড়া ঈদকে সামনে রেখে অনেক গার্মেন্ট বেতন-বোনাস দিতে পারছে না। বিশেষ করে সোয়ান গার্মেন্টসহ অন্যান্য ফ্যাক্টরির শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, শিল্প পুলিশ, জয়েন্ট স্টক কোম্পানি, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএ ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়।

ঈদকে সামনে রেখে সাভারের আশুলিয়াসহ দেশের শিল্পাঞ্চলে যাতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় সে জন্য পুলিশ, এসবি ও এনএসআইকে অতিরিক্ত সতর্ক দৃষ্টি রাখা এবং গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়।

ঈদকে ঘিরে ঢাকাসহ সারাদেশে যানজট সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে ঈদের দু দিন আগে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হয় হাইওয়েগুলোতে। এ জন্য রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল ও লঞ্চ টার্মিনালে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে মনিটরিঙের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি সব জেলা পুলিশকে সর্বদা টহল অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে। ওই বৈঠকে মেট্রোপলিটন পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা পর্যায়ে স্থানীয় পুলিশ নিজ নিজ এলাকায় কমিউনিটি পুলিশসহ অন্যান্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথাও বলা হয়। এ ছাড়া লঞ্চ ও ফেরি ঘাটগুলোতে সিরিয়াল, চাঁদাবাজি ও টোলের টাকার বিনিময়ে সিরিয়াল বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়।

ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখি মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ট্রেন, বাস ও লঞ্চে যাতে অতিরিক্ত যাত্রী বহন না করা হয়, তা নিশ্চিত করতে রেল মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঈদের পূর্বে বাতিল ও মেরামত অযোগ্য লঞ্চ কোনোরকম মেরামত করে নৌযান হিসেবে পরিচালনা এবং অদক্ষ ও সার্টিফিকেটবিহীন সারেং দিয়ে পরিচালনা না করার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নিতে বলা হয়। পাশাপাশি বাস, ট্রেন এবং লঞ্চের টিকিট ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে।

ঈদের সময় বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে আকস্মিক দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় উদ্ধারকাজ পরিচালনার জন্য ফায়ার সার্ভিস, স্পেশাল টিম, রেসকিউ বোট, ডুবুরি, অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জামাদি ও প্রয়োজনীয় অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখার জন্য ডিজি ফায়ার সার্ভিসকে এবং ডিজি কোস্টকার্ডকে নির্দেশ দেয়া হয়। কোস্টকার্ড প্রয়োজনীয় স্পিড বোর্ড দিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে সহায়তা করবে। এছাড়া শিল্প এলাকাসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক এলাকায় সম্ভাব্য অগ্নিনির্বাপণ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

Leave a comment