অমায়িক ব্যবহারে মুগ্ধ করা কলেজপড়ুয়া মুগ্ধের মৃত্যুতে এলাকাজুড়ে শোক

আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের খাল থেকে ভাসমান অবস্থায় মৃতদেহ উদ্ধার

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: শিক্ষক দম্পতির একমাত্র সন্তান কলেজপড়ুয়া ইনাবুন নাঈম মুগ্ধ বৃষ্টির উপচেপড়া পানির খালে পড়ে মারা গেছে। পরিবারের সদস্যরা এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, বাইসাইকেল চালাতে গিয়ে সাঁতার না জানা মুগ্ধ খালে পড়ে ডুবে মারা গেছে। সাঁতার না জানার কারণে গত শুক্রবার রাতে নিখোঁজ থাকার পর গতকাল শনিবার সকালে উপজেলা পরিষদের রাস্তার পাশের খালের পানিতে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তার মৃতদেহ। বেদনাবিধূর পরিবেশে মুগ্ধ’র দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলা শহরের কলেজপাড়ার বাসিন্দা জামসিদুল হক মুনি সাংবাদিকতা করেন। তিনি একটি কিন্ডারগার্টেনরও অধ্যক্ষ। জামসিদুল হক মুনি’র স্ত্রী নাসিমা পারভীন লোভা আলমডাঙ্গা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। এ দম্পতির একমাত্র সন্তান ছিলো ইনাবুন নাঈম মুগ্ধ। সে আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি ২য় বর্ষের ছাত্র। অমায়িক ব্যবহার আর সহজ-সরল আচরণে সকলকেই মুগ্ধ করতো মুগ্ধ। সে কবিতা লিখতো, ফাংশন হলে গান গাইতো, প্রতিযোগিতায় উপস্থিত বক্তৃতা ও আবৃত্তিতে অংশ নিতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার স্বপ্ন দেখতো বলে সে বন্ধুদের জানাতো। বন্ধুদের সাথে হাসি ও মজার গল্প বলতে ভালোবাসতো। কিন্তু সাঁতার জানতো না। আর সেটাই হলো তার কাল! সে উপজেলা পরিষদ চত্বরের রাস্তায় একাকী বাইসাইকেল চালাতে পছন্দ করতো। বন্ধুদের বলতো- সেখানকার মুক্ত বাতাস তার বড় পছন্দের। প্রতিদিনিই সে উপজেলা পরিষদ চত্বরের ভেতরের রাস্তায় বাইসাইকেল নিয়ে ঘুরতো। গত শুক্রবার মুগ্ধ অন্য বন্ধুদের সাথে উপজেলা জামে মসজিদে ইফতারের আয়োজন করে। ইফতার শেষে নামাজ পড়ে বের হয়ে বাইসাইকেলে চড়ে উপজেলা চত্বরে যায়। অনেকেই মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, উপজেলা পরিষদ ভবনের পেছনে রাস্তার পাশের খালে বাইসাইকেল চালাতে গিয়ে খালে পড়ে যায় মুগ্ধ। গতকাল শনিবার সকালে এলাকাবাসী মুগ্ধ’র লাশ ভাসতে দেখে আত্মীয়-স্বজনদের খবর দেয়। খবর পেয়ে সকাল ৯টার দিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃত মুগ্ধ’র হাতঘড়িতে রাত ৯টার আশপাশে কাঁটা গিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে। এ থেকে ধারণা অনেকে করছেন, মুগ্ধ হয়তো রাত ৮টার দিকে খালে পড়ে যায়। তার প্রায় ১ ঘণ্টা পর ঘড়িতে পানি ঢোকায় সেটি বন্ধ হয়ে যায়। মুগ্ধ’র লাশ উদ্ধারের পর প্রথমে থানা চত্বরে নেয়া হয়। পরে তাদের কলেজপাড়াস্থ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। বাদ আছর স্থানীয় দারুস সালাম মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হয়। এ ব্যাপারে থানায় অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। সকলের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। একমাত্র সন্তান হারানোর কষ্টে মুগ্ধ’র পিতা-মাতাসহ স্বজনরা পাগলপ্রায়।

এদিকে মুগ্ধ’র মৃত্যুতে আলমডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দীন ও পৌর মেয়র মীর মহিউদ্দীন তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।

পৃথকভাবে মুগ্ধের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক হামিদুল ইসলাম আজম, রহমান মুকুল, শরিফুল ইসলাম রোকন, প্রশান্ত বিশ্বাস, ফিরোজ ইফতেখারসহ আলমডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকবৃন্দ।

Leave a comment