সালাউদ্দীন কাজল: লাশের মিছিলে যোগ দিলেন দক্ষিণ-পশ্চিম জনপদের আরও একজন সাংবাদিক সহকর্মী। সমকালের জীবননগর প্রতিনিধি আবু সায়েম দুর্বৃত্তের হামলায় আহত হয়ে গত বুধবার মারা গেছেন। তার মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে এ অঞ্চলের সাংবাদিক হত্যার তালিকা আরও দীর্ঘ হলো। বিগত দু যুগে অন্তত ১৯ জন সাংবাদিক খুন হলেন। গত বছর সাংবাদিক হত্যার তালিকায় নাম ছিলো দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকার সাংবাদিক সদরুল আলম নিপুল। পরপর দু বছরে চুয়াডাঙ্গার দুজন সাংবাদিক খুন হলেন। এ অঞ্চলের সাংবাদিক খুনের ঘটনার পর হত্যার বিচার চাইতে চাইতে স্বজন, সহকর্মীরা ক্লান্ত। প্রতিবছর শোকসভা, স্মারকলিপি প্রদান, প্রতিবাদ সভা করে চলেছে সহর্কীরা। বছরের পর বছর স্বজন, বন্ধু সহকর্মীর বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। আমরা মৃত্যুবার্ষিকীতে অশ্রুসিক্ত নয়নে স্মরণ করি অগ্রজদের। এ জনপদের সাংবাদিকতার ইতিহাস, ত্যাগ গর্ববোধের, কিন্তু সাংবাদিক হত্যার বিচারের ক্ষেত্রে আমার মাথা উচুঁ করতে পারি না। কারণ অগ্রজদের হত্যার বিচার আমরা করতে পারিনি বছরের পর বছরেও।
গত দু যুগে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ১৯ জন সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন। এ তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হলেন সমকালের জীবননগর প্রতিনিধি আবু সায়েম। বাকিরা হলেন- দৈনিক সংগ্রামের খুলনা ব্যুরো প্রধান শেখ বেলাল উদ্দিন, খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক জন্মভূমির সম্পাদক হুমায়ুন কবির বালু, দৈনিক সংবাদের খুলনা প্রতিনিধি মানিক সাহা, দৈনিক অনির্বাণের সরদার শুকুর আলী, দৈনিক পূর্বাঞ্চলের সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার হারুন অর রশিদ, সাংবাদিক এসএম নহর আলী, দৈনিক লোকসমাজের বিএল কলেজ প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম, সাতক্ষীরা পত্রদূত সম্পাদক স ম আলাউদ্দিন, দৈনিক জনকণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি শামছুর রহমান কেবল, যশোরের দৈনিক রানার সম্পাদক আর এম সাইফুল আলম মুকুল, নওয়াপাড়ার সাংবাদিক ফারুক হোসেন, দৈনিক স্ফুলিঙ্গের সাংবাদিক গাফ্ফার চৌধুরী, ঝিনাইদহের বীরদর্পনের সম্পাদক মীর ইলিয়াস হোসেন দিলীপ, দৈনিক সদ্য খবরের কালীগঞ্জ প্রতিনিধি রেজাউল করিম, সমকালের ফরিদপুরের ব্যুরো প্রধান গৌতম দাস, চুয়াডাঙ্গার বজলুর রহমান, যশোরের শার্শার জামাল উদ্দিন, ২০১৪ সালে মাথাভাঙ্গা পত্রিকার সাংবাদিক সদরুল নিপুল খুন হন।
নিহত সাংবাদিকের মধ্যে ফরিদপুরের গৌতম দাস ছাড়া কোনো সাংবাদিক হত্যার বিচার হয়নি। ক’দিন আগে খুলনার সাংবাদিক মানিক সাহা ও হুমায়ুন কবির বালুর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করলেন খুলনার সাংবাদিক বন্ধুরা। এবারও তারা হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন, স্মারকলিপি পেশ, প্রতিবাদসভা, দোয়া মাহফিল করেছেন। আসছে ১৬ জুলাই যশোরের সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবলের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। এবারও যশোরের সাংবাদিক বন্ধুরা একই কর্মসূচি পালন করবেন। বিচারের দাবি জানিয়েই যাবে। তবে কবে নাগাদ অগ্রজ হত্যার বিচার হবে সেটি কেউ নিশ্চিত নয়। লাশের মিছিলে সদ্য যোগ দেয়া আবু সায়েমের হত্যার বিচারও হয়তো আমরা পাবো না। প্রতিবছর তার জন্য অশ্রুসিক্ত নয়নে শুধু শোক প্রকাশ করবো। আর পরিবার স্বজনের শুধু সান্ত্বনা দেবো বিচার একদিন হবে। অপঘাতে সাংবাদিকদের অকাল যাত্রার শেষ কোথায়? এ প্রশ্নের উত্তর সাংবাদিকদের কাছে নেই।