শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রী উত্ত্যক্তের অভিযোগ এবং

শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ উত্থাপন হয়েছে। অভিযোগ উত্থাপন হলেই তদন্তের পূর্বে যেমন দোষী বলা যায় না, তেমনই একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ অমূলক ভাবারও কোনো কারণ নেই। কেননা, শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত অনেকেরই যে নৈতিকতার স্খলন ঘটে, ঘটেছে তা নানাভাবেই প্রতীয়মান হয়েছে, হচ্ছে।

কুষ্টিয়ার পরিমল শুধু কালো উদাহরণই সৃষ্টি করেননি, শিক্ষক সমাজের আত্মমর্যাদায় কলঙ্কের দাগ লাগিয়েছেন। শিক্ষকতার মুখোশে পরিমল একের পর এক ছাত্রীকে সর্বনাশই করেননি, তার লালসার শিকার ছাত্রীদের ধর্ষণচিত্র ধারণ করে ছড়িয়েও দিয়েছেন। সমাজে শুধু পরিমল একা নন, তার মতো অনেকেই যে রয়েছেন তা বলাই বাহুল্য। তা না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককেও কি ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত ও শ্লীলতাহানির দায়ে দণ্ডিত হতে হয়? প্রাইভেট টিউটরের কুদৃষ্টির বলি হয়েছে চুয়াডাঙ্গা সরোজগঞ্জের নাবিলা। এই তো কিছুদিন আগে চুয়াডাঙ্গা সিনেমাহলপাড়া কাঠের গোলা এলাকার এক বাড়িতে ভাড়ায় বসবাসকারী এক ব্যক্তি কোচিং খুলে এক ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দিয়ে বাটামপেটার শিকার হন। এরপর যখন ডিঙ্গেদহ শহীদ সোহরাওয়ার্দ্দী স্মরণী বিদ্যাপীঠের একজন সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৮ম শ্রেণির ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ উত্থাপন হয় তখন যথাযথ গুরুত্বসহকারে দ্রুত তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি অত্যাবশ্যকীয় হয়ে দাঁড়ায়। অভিযোগ হাতে পাওয়ার সাথে সাথে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দ্রুত সুষ্ঠু তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তড়িৎ পদক্ষেপ অবশ্যই কর্তব্যপরায়নতারই প্রকাশ।

শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগের আড়ালে যে ষড়যন্ত্র থাকতে পারে না তা যেমন নয়, তেমনই ৮ম শ্রেণির ছাত্রী অন্যের প্ররোচনায় অভিযোগ উত্থাপন করছে বলে ভেবে নিয়ে পক্ষপাতমূলক তদন্ত কাম্য নয়। সমাজে শিক্ষকরাই আদর্শ। শিক্ষকের ওপর আস্থা রাখতে না পারলে শিক্ষা ব্যবস্থাই যে ভেঙে পড়বে তা বলাই বাহুল্য। শিক্ষকদের অবশ্যই আস্থাভাজন অভিভাবক হিসেবেই দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হওয়া দরকার। সমাজের শিক্ষানুরাগী মহলের বিশ্বাস, অধিকাংশ শিক্ষকই শিক্ষাদানে আন্তরিক। গুটি কয়েক শিক্ষকের কারণে শিক্ষক সমাজের গৌরবে কালি পড়ছে, তেমনই অভিভাবকদের মধ্যেও রোপিত হচ্ছে আস্থাহীনতার বীজ। যাদের কারণে এমনটি হচ্ছে তাদের নৈতিকতার স্খলন? নাকি তদবির আর উপঢৌকনের বদৌলতে শিক্ষকতার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেতাইয়ে মেতে উঠছে? খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। শিক্ষকতা পেশায় যারা ব্রত তারা অবশ্যই সমাজের আদর্শ। যারা অনুকরণীয় আচরণে উত্ত্যক্ত দুরস্ত, দৃষ্টিও তেমন সন্দেহের হওয়া বাঞ্চনীয় নয়। আবার শিক্ষকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগ উত্থাপনও সমাজের জন্য ভয়ানক ক্ষতির কারণ।

স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। মোবাইলফোনে উত্ত্যক্ত করার কিছুটা প্রমাণও পেশ করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্দেশপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসার বিষয়টির প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে প্রভাবমুক্ত সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উন্মোচনে সক্ষম হবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস।

 

Leave a comment