অন্তিম শয়ানে সাংবাদিক আবু সায়েম

তথ্যমন্ত্রী ঢাকা মেডিকেলে মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে জানালেন শোক

 

বৃষ্টি উপেক্ষা করে নামাজে জানাজায় মানুষের ঢল

Chuadanga Repotar Sayem_Wyafer Ahagare

জীবননগর ব্যুরো: দুর্বৃত্তের হানায় নিহত জীবননগরের সাংবাদিক আবু সায়েম অন্তিম শয়ানে শায়িত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৮টায় নামাজে জানাজা শেষে বেদনাবিধূর পরিবেশে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়। বৃষ্টি উপক্ষো করে তার নামাজে জানাজায় মানুষের ঢল নামে। এ সময় উপস্থিত সুধীজনেরা সাংবাদিক আবু সায়েমের হত্যার প্রকৃত রহস্য দ্রুত উন্মোচনের দাবি জানান। অপরদিকে গ্রেফতারকৃত ঘাতক রাজিবকে গতকাল আদালতে সোপর্দ করা হয়।

দৈনিক সমকাল পত্রিকার জীবননগর প্রতিনিধি আবু সায়েমের মৃতদেহ বহন করা অ্যাম্বুলেন্সটি গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে তার বাড়ি উপজেলার পিয়ারাতলা গ্রামে পৌঁছুলে নিকটজনসহ এলাকাবাসীর কান্নায় শোকের ছায়া নেমে আসে। এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। কান্নায় ভেঙে পড়েন তার সহকর্মী সাংবাদিকরা। সাংবাদিক আবু সায়েমের স্ত্রী রেশমা খাতুন জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে তড়িঘড়ি করে হাসপাতালে নেয়া হয়। সায়েমের ছোট ছেলে রনন বাবার জন্য অঝরে কাঁদছিলো আর বলছিলো আমার আব্বুকে খুন করলি কেন! আমিও মরে যাবো। নিহত সাংবাদিক আবু সায়েমের পরিবারকে এ সময় সান্ত্বনা দিতে শ শ মানুষ তার বাড়িতে ভিড় করে শোক প্রকাশ করাসহ ঘাতকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১০টা ৫০ মিনিটে সাংবাদিক আবু সায়েমের মৃতদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। তার লাশ নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স জীবননগরের উদ্দেশে রওনা দেয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্যমন্ত্রী জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এ সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর শোক জানিয়ে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সকে তিনি বিদায় জানান। জাসদের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম বাবু এ সময় লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে করে আবু সায়েমের বাড়িতে আসেন। এদিকে সায়েমের ঘাতক দর্শনা ঈশ্বরচন্দ্রপুরের মতিয়ার রহমানের ছেলে রাজিব আটক হলেও তার নিকট হতে পুলিশ গতকাল পর্যন্ত হত্যার মূল রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি। গতকাল বৃহস্পতিবার তাকে চুয়াডাঙ্গা সংশ্লিষ্ট আদালতে সোপর্দ পূর্বক রিমান্ডের আবেদন করেছে পুলিশ। হত্যার মোটিভ উদ্ধার না হওয়ায় তার পরিবার, এলাকাবাসী ও উপজেলার সাংবাদিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে হত্যা রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হলে জীবননগর প্রেসক্লাব কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার কথা পুনরায় ব্যক্ত করা হয়েছে।

নিহত সাংবাদিক আবু সায়েমের প্রতি শোক জানিয়ে জীবননগর উপজেলা প্রশাসন গতকাল বৃহস্পতিবার এক ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুরুল হাফিজের উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময় নিহত সাংবাদিক আবু সায়েমের রুহের মাগফেরাত কামনা করা হয়। এদিকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে শ শ মানুষ নিহত সাংবাদিক আবু সায়েমের জানাজায় শরিক হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। পিয়ারাতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তার লাশ নেয়া হলে মুহূর্তের মধ্যে মাঠটি মানুষে ভরে যায়। এ সময় সাংবাদিক আবু সায়েমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে ও খুনের রহস্য উদঘাটনসহ ঘাতকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জীবননগর উপজেলা চেয়ারম্যান আবু মো. আ. লতিফ অমল, উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুরুল হাফিজ, জাসদের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম বাবু, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মো. শহিদুল্লাহ, প্রেসক্লাব সভাপতি আনোয়ারুল কবির, সেলিম উদ্দিন ও ভাতিজা রিপন হোসেন। উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক শামসুল আলম জানাজার পূর্বে আলোচনা অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন। জানাজায় সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সুধী, সাংবাদিকসহ এলাকাবাসী অংশগ্রহণ করেন।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার দিনগত রাতে লাল সালু পরিহিত সাধু সেজে ঘাতক রাজিব সরকার সাংবাদিক আবু সায়েমের বাড়ির দোতলায় ওঠে। শয়নকক্ষ থেকে বের হওয়া মাত্রই এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে আবু সায়েমকে। এ সময় সায়েমের চিৎকারে তার বাবা আবুল খায়ের ওরফে বাচ্চু মোল্লা এগিয়ে এলে তাকেও ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় ওই খুনি। তাদেরকে উদ্ধার করে প্রথমে জীবননগর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখানে আবু সায়েমের অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাকে যশোর সদর হাতপাতাল নেয়া হয়। পরে তাকে ঢাকা বক্ষব্যাধি হাসপাতালে নিয়ে জরুরি অপারেশন করা হলে বুধবার বিকেলে তার মৃত্যু হয়। অপরদিকে খুনি মনোহরপুরে তার এক আত্মীয়বাড়িতে আশ্রয় নেয়। সে পোশাকের রক্ত পরিষ্কার করে আত্মগোপনের চেষ্টা করতে থাকে। এ সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জীবননগর থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার করা হলেও তার মুখ থেকে খুনের কারণ যেমন বের করতে পারেনি পুলিশ, তেমনই আদায় করতে পারেনি স্বীকারোক্তি।

এদিকে আলমডাঙ্গায় গতকালও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দৈনিক সমকাল পত্রিকার জীবননগর প্রতিনিধি আবু সায়েমকে সন্ত্রাসী কর্তৃক হত্যার প্রতিবাদে ও হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আলমডাঙ্গা প্রেসক্লাবে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন আলমডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি খন্দকার শাহ্ আলম মন্টু। সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেনের উপস্থাপনায় বক্তব্য রাখেন সহসভাপতি অধ্যক্ষ জামসিদুল হক মুনি, সহকারী অধ্যাপক শেখ শফিউজ্জামান, মোলভী আবুল কাশেম, মহাসিন আলী হোসেন, যুগ্মসম্পাদক বিএম নাহিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ইউনুস আলী মণ্ডল, অর্থ সম্পাদক মামুন কাইরুল, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক জামিরুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, আইন বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুল হক মুনি, সাংবাদিক সাজ্জাদুল ইসলাম স্বপন, তন্ময় কুমার পাল, তানভির আহমেদ সোহেল, মাহফুজ আহমেদ, সোহাগ প্রমুখ। বক্তারা দোষী ব্যাক্তিদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে সাংবাদিকরা প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

মহেশপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মহেশপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জীবননগর উপজেলার দৈনিক সমকালের প্রতিনিধি আবু সায়েমকে নির্মমভাবে হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় এবং হত্যাকরীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়। এছাড়া ঝিনাইদহের দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার প্রতিনিধি আজাদ রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন অধীর সরকার, আব্দুস সেলিম, আমিরুজ্জামান সুফি, রাজেদুল ইসলাম রাজা, আব্দুল গফুর, দাউদ হোসেন প্রমুখ।