এ বছর আর ওমরাহ ভিসা পাবে না বাংলাদেশিরা

স্টাফ রিপোর্টার: প্রতিবছর পবিত্র মাহে রমজানে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২০ হাজার মানুষ ওমরাহ পালনে সৌদি আরবে যান। পবিত্র হজের পরে রমজানই হচ্ছে ওমরাহর বড় মরসুম। তাই রাজধানীর গুলশান নর্থ এভিনিউয়ের ৯২ নাম্বার রোডের ১২ নাম্বারের ভবনটির সামনে গমগম করতো ধর্মপ্রাণ মানুষ। এই ভবনেই বাংলাদেশে সৌদি আরবের দূতাবাস। ভিসা চাইলেই অনায়াসে মিলতো ওমরাহ ভিসা। কিন্তু এ বছর বদলে গেছে সব। দূতাবাসের সমুখের দৃশ্যপট প্রায় জনশূন্য। কারণ ভিসা বন্ধ। গত ২২ মার্চ থেকে বাংলাদেশিদের ওমরা ভিসা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। ভিসা বন্ধের কারণ সম্পর্কে সৌদি কর্তৃপক্ষ, হজ এজেন্ট এবং ধর্ম মন্ত্রণালয় পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে। সৌদি আরবের নির্দেশনা মোতাবেক বাংলাদেশ সরকার কতিপয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও তাতে ফল হয়নি।

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছর আর ওমরাহ ভিসা পাবে না বাংলাদেশ। তবে আসন্ন হজযাত্রীদের ক্ষেত্রে এর কোনো প্রভাব পড়বে না বলে আশা করছেন ট্রাভেল এজেন্সির মালিকরা। হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি ইব্রাহিম বাহার বলেন, এবছর ১ লাখ ১ হাজার ৭৫৮ জনকে হজে যাওয়ার ভিসা দিবে সৌদি আরব। ওমরা ভিসার প্রভাব হজে পড়বে না। একদিকে ট্রাভেল এজেন্সির একাধিক মালিক জানান, ওমরাহ ভিসা প্রাপ্তির জন্য কয়েক হাজার আবেদন জমা পড়ে আছে। ভিসার জন্য অনেক দেনদরবার করা হয়েছে। তবে কোনো লাভ হয়নি। ভিসা দেয়া যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে সৌদি দূতাবাস।

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতিসহ কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, যে তিন কারণে ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ তার পুরোভাগে আছে প্রায় ৫ হাজার ওমরাহ গমনকারীর লাপাত্তা হওয়া। গত ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ওমরাহ পালন করতে সৌদি যান। তাদের ভিসার মেয়াদ ছিলো ১৪ থেকে ২৮ দিন। এদের বেশির ভাগ ওমরাহ পালন শেষে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করলেও ৪ হাজার ৬শ জন ফেরেননি বলে জানান হাব সভাপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম বাহার। তারা অবৈধভাবে সৌদি আরবে রয়ে গেছেন। এই অবৈধদের সেখানে থেকে যাওয়ার পেছনে সৌদি মেয়াল্লেমরাও জড়িত বলে দাবি করেন হাব সভাপতি। সৌদি মেয়াল্লেমদের কিছু টাকা দিলেই তারা পাসপোর্টসহ ডকুমেন্ট দিয়ে দেয়। ফলে তারা পালানোর সুযোগ পায়। এদের মধ্যে কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অ্যাসোসিয়েশন এজেন্সি হজ বাংলাদেশ-হাব-এর নেতারা জানিয়েছেন, এক ভাগের নিচে যাত্রী অবৈধ হলে সেটি সৌদি সরকার মার্জনা করে। কিন্তু এবার অতিরিক্ত ওমরাহ যাত্রী দেশটিতে রয়ে গেছেন। এজন্য সে দেশের সরকার বাংলাদেশকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। এখন নিষেধাজ্ঞা তুলতে হলে অবৈধ হওয়া ওমরা যাত্রীদের চিহ্নিত করে ফেরত আনতে হবে। যা সহজসাধ্য নয়।

দ্বিতীয় কারণ সৌদি আরবের বহিরাগত হামলা এবং আইএস’র ক্রমাগত হুমকির প্রেক্ষাপটে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ফলে ওমরাহ করতে ইচ্ছুকদের আগমন নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ছাড়াও অনেক দেশের ওমরাহ প্রার্থীদের আগমন নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ভিসাও কমিয়ে দেয়া হয়েছে। শেষ কারণটি হলো- মসজিদুল হারাম শরিফের ব্যাপক উন্নয়ন কাজ চলছে। বাদশা ফাহাদ গেট ও আবদুল আজিজ গেট ছাড়া কাবা শরিফে প্রবেশের সব গেট এখন বন্ধ। সেখানে যাতে কমসংখ্যক লোক গমন করে সে বিষয়ে ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ওমরাহ ভিসা হ্রাস করা হয়েছে। তবে হাব সভাপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম বাহার জানান, বাংলাদেশে ওমরাহর জন্য এ বছর ভিসার কোটা ছিলো ৫২ হাজার। গত বছর ছিলো ৫১ হাজার। গত ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ৫০ হাজার লোক ভিসা নিয়ে ওমরা করতে গেছেন। কোটা শেষ হয়ে গেছে। এরপরও ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিশেষ কোটায় ২ হাজার ২শ জনকে দেয়া হচ্ছে। তাদের টোকেন নিয়ে গেলে ভিসা দেয়া হচ্ছে। এই ভিসা পাচ্ছেন বিশেষ ব্যক্তিরা। সাধারণ কেউ পাচ্ছেন না। এছাড়া প্রতি বছর ১২-১৫ রোজা পর্যন্ত ভিসা দেয়া হয়। তারপর আর কোনো ভিসা দেয়া হয় না। সেই সময়ও শেষ হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশের ৩১টি এজেন্সিকে অনিয়মের জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষ কালো তালিকাভুক্ত করে। ইতোমধ্যে এই তালিকা থেকে ২১ ট্রাভেল এজেন্টের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।

এদিকে একটি সূত্র জানায়, ওমরা ভিসা বন্ধ হওয়ায় বাংলাদেশ বিমানের ঢাকা-জেদ্দা রুট বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিমান সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ওমরা ভিসা বন্ধ থাকায় ৬ মাসে তাদের আয় কমবে ২২৫ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে জেদ্দা, রিয়াদ ও দাম্মাম রুটের যাত্রীসংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। সৌদি আরবের অভিযোগ, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৬০ থেকে ৭০ হাজার মানুষ ওমরা করতে যায়। তাদের মধ্যে অনেকেই ওমরা শেষে আর দেশে ফিরে যায় না। এ তালিকার বড় অংশটি হচ্ছে বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী রোহিঙ্গারা। জানা গেছে, সৌদি সরকার মানবপাচারে সহযোগিতা করার অভিযোগে তাদের দেশেরও ৭টি বড় ধরনের হজ ও ওমরা এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করেছে। একই সাথে ১ জুন ৫৫টি এজেন্সির নাম উল্লেখ করে তাদের লাইসেন্স বাতিলের জন্য তালিকা তুলে দিয়েছে বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয়কে। মন্ত্রণালয় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।