কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নিয়ে চলছে নীরব বাণিজ্য!

বিশেষ ব্যবস্থায় ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে অযোগ্য ছাত্রছাত্রী : বিপাকে দরিদ্র মেধাব শিক্ষার্থীরা

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজসহ জেলার কলেজগুলোতে একাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রী ভর্তিতে মনগড়া ফি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। কলেজে ভর্তি জন্য মন্ত্রণালয় নির্ধারিত ফি’র চেয়ে কলেজে নামে-বেনামে বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে, অনুসন্ধানে মিলেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। ভর্তি ফি ধার্য করে নীতিমালা জারি করলেও চুয়াডাঙ্গার কলেজগুলো মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের কোনো তোয়াক্কাই করছে না। এতে করে সন্তানকে ভর্তি করাতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ছেন অভিভাবকরা। এর ফলে মেধাবী দরিদ্র শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তি হতে না পারার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৮ মে থেকে সারাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়। গত ১২ জুন মোবাইলফোনের এসএমএস’র মাধ্যমে ভর্তির আবেদনপত্র গ্রহণ করে কলেজগুলো। গত রোববার ভর্তির জন্য মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। বিলম্ব ফি ছাড়া ভর্তি ও টাকা জমার সময় চলে গেছে গত ৩০ জুন। গতকাল ১ জুলাই থেকে একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হওয়ার কথা।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, যেসব শিক্ষার্থী ফরম তুলছে কলেজ থেকে তাদেরকে কলেজ ভেদে ২শ টাকা থেকে ৫শ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত ফি দিতে হচ্ছে তাও আবার রসিদ ছাড়া। গলাকাটা ফি আর নীরব চাঁদাবাজির কবলে পড়ে নাভিশ্বাস উঠেছে অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের। আর এ কাজে জড়িত রয়েছেন খোদ আদায়কারী। বাড়তি টাকা আদায়ের ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে বখশিস দিয়ে যাও। তবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায়ের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. কামরুজ্জামান। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে বাড়তি টাকা আদায়ের পাশাপাশি নির্ধারিত পয়েন্টের চেয়ে কম পয়েন্ট প্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদেরকেও ভর্তির সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। এ কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে আসন রয়েছে ২০০টি, ভর্তি হতে ন্যূনতম যোগ্যতা এসএসসিতে ৪ দশমিক ৭২ পয়েন্ট, মানবিক বিভাগে ৩৫০ আসনে ভর্তি হতে গেলে শিক্ষার্থীর যোগ্যতা ধরা হয়েছে ৪ দশমিক ২২ পয়েন্ট এবং বাণিজ্য বিভাগের ৩০০ আসনের জন্য চাওয়া হয়েছে ৩ দশমিক ৬৭ পয়েন্টের যোগ্যতা। অথচ বিভিন্ন ধরনের তদবিরে এসএসসিতে অনেক কম পয়েন্ট পেয়ে ভর্তি হচ্ছে ছাত্রছাত্রী। অধ্যক্ষ অবশ্য জানিয়েছেন, কোনো ধরনের তদবির গ্রহণ করা হচ্ছে না। তবে বিভিন্ন কোটায় কয়েক জন ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির জন্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার টাকা এবং মানবিক, বাণিজ্য বিভাগের জন্য এক হাজার ৯৯০ টাকা। নীতিমালা অনুযায়ী ভর্তি ফি নির্ধারণ করা হলেও আদায় করা হচ্ছে ২ হাজার ৩শ টাকা থেকে ২ হাজার ৫ শ টাকা অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এ চিত্র শুধু চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের নয় জেলার প্রায় সকল সরকারি এবং এমপিওভুক্ত কলেজগুলোর।

একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে প্রথমবারের মতো স্মার্ট অ্যাডমিশন সিস্টেম নিয়ে দীর্ঘ চার দিনে নজিরবিহীন হয়রানির পর তিন দিন ধরে সারাদেশের কলেজগুলোতে চলছে ভর্তি কার্যক্রম। ভর্তিপ্রক্রিয়ার শুরুতেই বেসরকারি কলেজগুলোতে অতিরিক্ত ফি আদায়ের কবলে পড়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলার অভিভাবকরা।

২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ঘোষিত নীতিমালা অনুযায়ী, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী ভর্তিতে ৯ হাজার টাকার বেশি চার্জ নির্ধারণ করতে পারবে না। আংশিক এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য মাধ্যমে ৯ হাজার এবং ইংরেজি মাধ্যমে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া মফস্বল বা পৌর (উপজেলা) এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেশন চার্জসহ সর্বসাকুল্যে ১ হাজার টাকা, পৌর (জেলা সদর) এলাকায় দু হাজার টাকা এবং ঢাকা ছাড়া অন্য মেট্রোপলিটন এলাকায় তিন হাজার টাকার বেশি ফি নিতে পারবে না। অতিরিক্ত ফি নিলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে। অথচ চুয়াডাঙ্গা জেলাজুড়ে চলা ভর্তি নিয়ে অনিয়ম গত দু দিন ধরে যেন দেখার কেউ নেই অবস্থায় চলছে। অবিলম্বে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন অভিভাবক এবং শিক্ষার্থী।