গাংনীতে ছাতার কারিগরদের সুদিন

 

গাংনী প্রতিনিধি: বর্ষার অবিরাম বৃষ্টি যেন ভাগ্য বদলে দিয়েছে ছাতার কারিগরদের। বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে ছাতা পরম বন্ধুর মতো কাজ করে। তবে নতুন ছাতা কেনার খরচ বাঁচাতে অনেকেই পুরোনো ছাতা সারিয়ে নেন। আর এতেই বৃষ্টির দিন মানে ছাতা কারিগরদের জন্য সৌভাগ্যের দিন। মেহেরপুরের গাংনীর বিভিন্ন এলাকায় অন্তত অর্ধশতাধিক কারিগর রয়েছেন। শুধু হাট-বাজার নয়, বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গিয়েও এরা ছাতা সারিয়ে থাকেন। ছাতা ও কাজের ধরন ভেদে মজুরি নিয়ে থাকেন তারা। ছাতার কাপড় ও শিক বদল কিংবা তার কেটে যাওয়া সব কিছুই সারাতে এরা পটু।

গাংনীর রায়পুর গ্রামের ছাতার কারিগর মোফাজ্জল হোসেন জানান, বছর দশেক আগে ফরিদপুর, ভাঙ্গা ও বরিশাল এলাকার লোকজন ছাতা সারাতে এসব এলাকায় আসতেন। এখন এলাকার লোকজন ছাতা সারতে বেশ পটু। ছাতার খুচরা যন্ত্রাংশের মুল্য বাড়লেও এ পেশায় যারা জড়িত তাদের কাজের মজুরি বাড়েনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। গাংনী ভিটাপাড়ার কারিগর রশিদ প্রায় ২০ বছর যাবত গাংনী শহরে ছাতার কারিগর হিসেবে কাজ করে আসছেন। তিনি জানান, বছরখানেক আগেও যে ছাতার কাপড় মাত্র ৫০ টাকায় পাওয়া যেতো তা এখন কিনতে হচ্ছে ৯০ টাকা থেকে ১০০ টাকায়। তাই অনেকেই পুরোনো ছাতা না সারিয়ে নতুন ছাতা কিনছেন। হিজলবাড়িয়ার মোহাম্মদ আলী জানান, সারা বছর ছাতার তেমন কোনো কাজ থাকে না। গরমকালে কিছুটা কাজ থাকে। বর্ষাকালে ছাতার ব্যবহার বেশি হয় তাই কাজও একটু বেশি থাকে। আয় রোজগারও বেশি হয়।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া ৭ দিনের টানা বর্ষণের কারণে জীবননগরে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং গোখাদ্যের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের দেয়া তথ্য মতে, টানা বর্ষণের কারণে ৫ হেক্টর আউশ ধানের বীজতলাসহ ৪৬৫ হেক্টর রোপা আমন ও আউস ধানক্ষেত একেবারে পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া উপজেলার ১শ একর কপিক্ষেত, ৫০ একর শিম, ২শ একর বেগুন, ১শ একর মরিচ, ২০ একর বরবটি ও ৫০ একর ধনেপাতা ক্ষেত পচে গিয়েছে। তাছাড়া টানা বৃষ্টির কারণে গোখাদ্যের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির কারণে গবাদি পশু মালিকরা তাদের পালিত পশু ঘর থেকে বের করতে পারছেন না। গোয়ালঘরে রেখেই খাওয়াতে হচ্ছে পশুকে। জীবননগরে ছোট-বড় প্রায় শতাধিক গরুর খামার রয়েছে। এ খামারগুলোতে প্রায় ৫ শতাধিক গরু পালন করা হয়। কিন্তু লাগাতার বর্ষায় মাঠঘাট সব ঢুবে যাওয়ায় মাঠ থেকে গোখাদ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না

উথলী গ্রামের চাষি আব্দুস সালাম মন্টু জানান, এবার ১ বিঘা জমিতে ধনেপাতার আবাদ করেছি। বীজ, সার ও সেচসহ অন্যান্য খরচ বাবদ জমিতে ইতোমধ্যে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। কিন্তু অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ক্ষেতের ধনেপাতা চারা পচে যাচ্ছে।

অপরদিকে টানা বর্ষার কারণে উপজেলা শহরের অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ৭ দিনের টানা বৃষ্টিতে জীবননগর পৌর শহরের কোর্টপাড়া, মুক্তিযোদ্ধাপাড়া, শাপলাকলি পাড়া, হাসপাতালপাড়া, আশতলা পাড়া, পোস্টঅফিস পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া জীবননগর বাসস্ট্যান্ড থেকে উপজেলা সড়কের দু পাশে পানি জমে আছে। এ কারণে সড়কের পাশের অনেক দোকান বন্ধ রয়েছে।