পাবনায় ভেজাল দুধ-ঘির রমরমা ব্যবসা

স্টাফ রিপোর্টার: রমজান মাসে ও ঈদকে সামনে নিয়ে পাবনায় ভেজাল দুধ ও ঘির রমরমা ব্যবসা চলছে। জেলার দুধ উৎপাদন প্রধান এলাকাগুলোতে বছরের প্রায় সব সময়ই এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ভেজাল দুধ ও ঘি তৈরি এবং বাজারজাত করলেও ঈদকে সামনে রেখে তা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক ইউরিয়া, গ্লুকোজ, সাবান, পামওয়েল, সোডা, পশুরচর্বি, রং ও ফরমালিন ব্যবহার করে পাবনায় দেদারছে তৈরি হচ্ছে ভেজাল দুধ ও ঘি। এখান থেকে দৈনিক ৪৫ হাজার লিটারের বেশি ভেজাল দুধ ও ঘি স্থানীয় ও রাজধানীর বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। এদিকে সর্বশেষ রোববারও সাঁথিয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে দুজনকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

জানা গেছে, তৈরি করা ভেজাল দুধের বেশির ভাগই খাঁটি দুধের সাথে মিশিয়ে সরবরাহ করা হয় রাজধানীর বাজারগুলোতে। আর সামান্য কিছু বিক্রি হয় স্থানীয় বাজারে। স্থানীয় সূত্রগুলোর হিসাবে, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪৫ হাজার লিটার ভেজাল দুধ আর ১৫শ লিটার ভেজাল ঘি বাজারজাত হচ্ছে। রমজান মাস ও আসন্ন ঈদের জন্য দুধের চাহিদা ও দাম বাড়ায় এ ভেজাল ব্যবসা বেড়ে গেছে বলে জানা গেছে। স্থানীয়রা জানান, ঘোষ নামে অসাধু ব্যবসায়ীচক্র এসব ভেজাল দুধ ও ঘি পাবনায় উৎপাদন করে তা স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি রাজধানীতেও সরবরাহ করছে। ঘোষ সরবরাহকারীদের প্রতিটি কারখানায় অভিযান চালিয়েই কেবলমাত্র এ ভেজাল দুধ, ছানা ও ঘি তৈরি বন্ধ করা সম্ভব।

গতকাল রোববার দুপুরে সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শফিকুল ইসলাম পুলিশ ফোর্সসহ উপজেলার নাগডেমরা ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাতলা গ্রামে অভিযান চালিয়ে দুটি ভেজাল দুধের কারখানার সন্ধান পান। ওই গ্রামের নৃত্যানন্দ ঘোষের ছেলে সুমন ঘোষ ও মানিক ঘোষ কারখানা স্থাপন করে দীর্ঘদিন ধরে ভেজাল দুধ তৈরি করে বাজারজাত করে আসছিলো। ভ্রাম্যমাণ আদালত মানিক ঘোষকে তিন লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ৩ মাসের জেল দেন আর সুমন ঘোষকে তিন মাসের জেলসহ ২ লাখ টাকা জরিমানা করেন। এ সময় ভেজাল দুধ তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। ভেজাল দুধ তৈরির দুটি কারখানা মালিক জানায়, ভেজাল দুধ তৈরিতে ইউরিয়া সার, গ্লুকোজ, কাপড় কাচা সাবান, সয়াবিন তেল, সোডা, কস্টিক এসিড ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।

গত বছর এই ভেজাল দুধ ও ঘি নিয়ে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হলে টনক নড়ে প্রশাসনের। এরপর ওই বছর ১৯ নভেম্বর রাতে সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শফিকুল ইসলাম উপজেলার ফেচুয়ান গ্রামে অভিযান চালিয়ে একটি ও ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে সাঁথিয়া উপজেলার ধোপাদহ ইউনিয়নের মটকা গ্রামে আরেকটি ভেজাল দুধের কারখানার সন্ধান পান। সে সময়ও জড়িতদের জেল জরিমানা করা হয়েছিলো।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, কুদ্দুস, নাজমুল, মানিক, সুমন, কালা ঘোষের মতো অনেক ঘোষ ভেজাল দুধ, ছানা ও ঘি তৈরির সাথে জড়িত। পাবনার ফরিদপুর, সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলার দুগ্ধ উৎপাদন প্রধান এলাকায় অনেক ছানা তৈরির কারখানায় প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার ভেজাল দুধ তৈরি হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানায়, বগুড়ায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে সেখানে বি.নগর (বনওয়ারিনগর ফরিদপুর) স্পেশাল ঘি নামে বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কালা ঘোষ নকল ঘি বাজারজাত করে আসছেন।

পাবনা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পাবনা জেলায় ছোট-বড় প্রায় ১৫শ দুগ্ধ খামার রয়েছে। এই দুগ্ধ অঞ্চলকে টার্গেট করে মিল্কভিটার পাশাপাশি প্রাণ ডেইরি, আকিজ ডেইরি, আফতাব ডেইরি, ব্র্যাক ডেইরি ফুড (আড়ং), আমো ফ্রেস মিল্কসহ বেশ কিছু বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান দুধ সংগ্রহ করতে এ অঞ্চলে তাদের আঞ্চলিক দুগ্ধ সংগ্রহশালা স্থাপন করেছে। তবে বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভেজাল দুধ তৈরি, ক্রয়-বিক্রয় ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. শাফিকুল হাসান জানান, ভেজাল দুধ পান করলে লিভার রোগ, কিডনি রোগ, ক্যান্সার এবং স্কিমড মিল্ক পাউডার খাওয়ার ফলে মানবদেহে হাড়ের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হতে পারে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পাবনার সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান জানান, ভেজাল খাবার তৈরিকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান অব্যাহত আছে। ভেজাল দুধ ও ঘি কারখানার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a comment