ইবি প্রতিনিধি: চাকরির দাবিতে গতকাল সোমবার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য অফিসে তালা লাগিয়ে দিয়েছে চাকরি প্রত্যাশি ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে তারা প্রশাসন ভবনের কলাপসিবল গেটসহ সব অফিসে তালা লাগিয়ে দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস থেকে বের করে দেয়। চাকরি প্রত্যাশীদের বাধার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো গাড়ি দুইটার পর ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারেনি। চাকরির বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে বাধা ও অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন অবরোধের ডাক দিয়েছে তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, চাকরির দাবিতে গতকাল সোমবার দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য আশিকুর রহমান জাপান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি তৌফিকুর রহমান হিটলার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান লেলিন, মিজানুর রহমান টিটু, কাশেম মাহমুদ, ছাত্রলীগ কর্মী মোহাম্মদ আলী শিমুল, মাসুদরানাসহ ১২-১৫ জন চাকরি প্রত্যাশী উপাচার্য অফিসে গিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বের করে দিয়ে তালা লাগিয়ে দেন। এক পর্যায়ে তারা প্রশাসন ভবনের সব অফিসকক্ষে তালা লাগিয়ে দেয় এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বের করে দেন। তবে চাকরি প্রত্যাশীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমান ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আফজাল হোসেনের কক্ষে তালা দেননি বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) মীর জিল্লুর রহমান বলেন, কিছু চাকরি প্রত্যাশী অফিসে এসে আমাদরকে বের হয়ে যেতে বলেন এবং অফিসে তালা লাগিয়ে দেন। তবে এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার তার কার্যালয়ে ছিলেন না বলে তিনি জানান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চাকরি প্রত্যাশীরা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস থেকে বের করে দিলে তারা প্রশাসন ভবনের নিচতলায় করিডোরে অবস্থান নেন। পরে সেখান থেকে তাদেরকে বের করে দিয়ে প্রশাসন ভবনের দু পাশের কলাপসিবল গেটে তালা লাগিয়ে দেন চাকরি প্রত্যাশীরা। ঘটনার সময় উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমান ও রেজিষ্ট্রার ড. মসলেম উদ্দিন অফিসে ছিলেন। তবে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আফজাল হোসেন অফিস থেকে বের হয়ে প্রশাসন ভবনের নিচ অবস্থান নেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। চাকরি প্রত্যাশিদের বাধার কারণে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ শহর থেকে আসা দুপুর দুইটার কোনো বাস ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারেনি। চাকরি বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে বাধা প্রদান ও অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন অবরোধের ডাক দিয়েছেন তারা।
চাকরি প্রত্যাশী ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আশিকুর রহমান জাপান বলেন, ভিসি চাকরি দেয়ার নাম করে আমাদেরকে কয়েক বছর ধরে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছেন। বিভিন্ন বিভাগে একের পর এক জামায়াত-বিএনপিপন্থিদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলেও ছাত্রলীগের ত্যাগী ও মেধাবীদের অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে চাকরির বিষয়ে ইতিবাচক বার্তা না আসা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ করতে দেয়া হবে না। এছাড়া কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো গাড়ি ক্যাম্পাসে আসতে দেয়া হবে না। অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে বলে তিনি জানান।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার বলেন, যারা তালা দিয়েছে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না। কোনো অছাত্র এ ধরনের আচরণ করলে তা মেনে নেয়া হবে না। তবে হ্যাঁ, তারা চাকরির বিষয়টি বলতে পারে। তবে সেটি হতে হবে সঠিক পন্থায়। তারা বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে আমাকে জানালে আমি বিষয়টি ভেবে দেখবো। বর্তমানে চাকরির বিষয়ে ইউজিসি থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বলে তিনি জানান।