গাংনীর নিহত সুমনের লাশ দাফন : আত্মগোপনে হামলাকারী আওয়াল

গাংনী প্রতিনিধি: হাতুড়িপেটায় নিহত মেহেরপুর গাংনী উপজেলার কাজিপুর গ্রামের সুমন হোসেনের (৩০) লাশ গতকাল শুক্রবার বিকেলে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। তার মৃত্যুর পর থেকেই পরিবারে বিরাজ করছে শোকের মাতম। তবে হত্যকারীর গ্রেফতারের জোর দাবি উঠলেও এখনো সে রয়েছে পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে। স্ত্রীকে ভাগিয়ে নেয়ার সন্দেহে গত ১৪ জুন সুমনের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে হাতুড়িপেটায় গুরুতর জখম করে একই গ্রামের আওয়াল। চিকিৎসায় সুস্থ না হলে গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে বাড়ি আনার পরে মারা যান সুমন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকালে নিহতের বাড়ি থেকে লাশ গ্রহণ করে গাংনী থানা পুলিশের একটি দল। সেখান থেকে লাশ প্রেরণ করা হয় মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে। দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। বিকেল বাড়ির নিকটবর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে গ্রাম্য কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাজায় গ্রামবাসী ছাড়াও নিহতের স্বজন, পরিবারের লোকজনসহ স্থানীয়রা অংশগ্রহণ করেন। তাকে নিরপরাধ উল্লেখ করে করুণ মৃতৃতে চোখের পানি ফেলেছেন জানাজায় অংশগ্রহণকারীরা। হত্যাকারী আব্দুল আওয়ালকে দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি উঠছিলো বারবার।
জানাজায় অংশগ্রহণকারী কয়েকজন জানান, আওয়ালের স্ত্রী বাড়ি থেকে পাড়ি জমানোর পরে তার শ্বশুর তার নামে একটি জিডি করেন। মূলত স্ত্রী নিখোঁজের ব্যাপারে তাকেই দায়ী করা হয়। কিন্তু আওয়ালের সন্দেহের তীর ছিলো সুমনের দিকে। স্ত্রী দু মাস পর বাড়ি ফিরলে আবারো সংসার শুরু করেন আওয়াল। কিন্তু মনে মনে তিনি সুমনের ওপর প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ওঠেন। সুমনের ওপর হামলার কয়েক দিন আগে থেকেই কোমরে হাতুড়ি নিয়ে ঘুরতো আওয়াল। কিন্তু এ বিষয়টি তখন কেউই গুরুত্ব দেয়নি। শুধুমাত্র সন্দেহের জেরে একটি প্রাণ কেড়ে নেয়ার ঘটনায় বিভিন্ন মহল থেকে তীব্র নিন্দার ঝড় উঠেছে। দাবি উঠেছে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির।
এদিকে হামলার পর থেকেই সুমনের পরিবারে বইছে শোক। গত বৃহস্পতিবার রাতে নিজ বাড়িতে সুমন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের মধ্যদিয়ে থেমে গেছে একটি সংসারের সারা জীবনের সুখ ও আনন্দ। এমনটি জানিয়ে সুমনের কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, কসাইয়ের কাজ করে সংসার চালাতেন সুমন। সব সময় ছিলেন হাসি-খুশি ও সবার সাথে মিশুক। একজন ভালো মানুষ হিসেবেই গ্রামে পরিচিতি ছিলো। সুমনের চলে যাওয়ায় তার স্ত্রী ও সন্তান এবং পিতা-মাতার চোখে এখন শুধু অন্ধকার। চার বছর বসয়ী পুত্র সন্তানকে এখন কি করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না স্ত্রী।
গাংনী থানার ওসি আকরাম হোসেন জানান, হামলার পর সুমনের পিতা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার সাথে হত্যাকাণ্ডের ধারা ৩০২ যুক্ত হয়েছে। একজন এসআইকে মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আওয়ালকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার রাত থেকে সম্ভাব্য কয়েকটি স্থানে অভিযান চালানো হয়। ওই অভিযান ব্যর্থ হলেও দ্রততম সময়ের মধ্যে আওয়ালকে গ্রেফতার করতে পারবে বলে জানান ওসি।