গাংনীর কাজিপুরে অতর্কিত হামলায় যুবককে হাতুড়িপেটা

 

পাঁচ দিন মৃত্যুর সাথে লড়ে হেরে গেলেন সুমন

মাজেদুল হক মানিক: পাঁচ দিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে অবশেষে হেরে গেলেন মেহেরপুর গাংনী উপজেলার কাজিপুর গ্রামের সেই সুমন হোসেন (৩০)। গতরাত সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতাল থেকে নিজ বাড়িতে ফিরিয়ে আনার পরই চলে গেলেন না ফেরার দেশে। সুমন হোসেন ওই গ্রামের সমশের আলীর ছেলে। গত ১৪ জুন দিনেদুপুরে একই গ্রামের আওয়াল হোসেনের হাতুড়ি পেটায় তিনি গুরতর আহত হয়েছিলেন।

নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পর মাথায় গুরুতর ক্ষত নিয়ে সুমনকে প্রথমে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং একই রাতে ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলার পর থেকে তিনি অজ্ঞান ছিলেন। চিকিৎসকরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেও তার জ্ঞান ফেরাতে ব্যর্থ হন। সময় গড়ানোর সাথে সাথে শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। সুস্থতার বদলে মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়তে থাকায় চিকিৎসকদের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে। চিকিৎসকরা বিফল হলে তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নেয়ার পরামর্শ দেন। অযথা টাকা খরচ না করার পক্ষে মত দেন তারা। চিকিৎসায় তার সুস্থ করা সম্ভব নয় বলে পরিবারকে জানিয়ে দেন সেখানকার কয়েকজন চিকিৎসক। অবশেষে মৃতপ্রায় সুমনকে গতরাতে একটি অ্যাম্বুলেন্সযোগে নিজ বাড়িতে আনা হয়। বাড়িতে পৌঁছানোর মিনিক দশেক পরে রাত সাড়ে বারটার দিকে শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন সুমন।

সুমনের মৃত্যুতে চার বছর বয়সী শিশু পুত্রকে নিয়ে অথই সাগরে পড়েছেন তার স্ত্রী। দিশেহারা পিতা-মাতা বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন। পাশাপাশি পরিবার ও স্বজনদের মুখে মুখে ফিরছিলো হামলাকারী আওয়ালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিষয়টি। এদিকে হামলার পর সুমনের পিতা বাদী হয়ে গাংনী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। আওয়ালকে প্রধান আসামি করে আরো একজনকে আসামি করা হয়েছে। ওই মামলার সাথে হত্যাকাণ্ডের ৩০২ ধারা যুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকরাম হোসেন। আজ সকালে নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হবে বলেও জানান তিনি। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত আওয়াল পলাতক রয়েছে। তবে তাকে গ্রেফতারে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মাস দুয়েক আগে কাজিপুর গ্রামের খুরশিদ আলীর ছেলে আওয়ালের স্ত্রী দু সন্তানের জননী মিনুয়ারা খাতুন বাড়ির লোকজনকে না জানিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমায়। এ দোষ পড়ে সুমনের ওপর। সুমনকে অভিযুক্ত করে বিভিন্ন রটনা রটাতে থাকেন আওয়াল। পালিয়ে যাওয়ার দু মাস পর স্ত্রী বাড়ি ফিরলেও সুমনের ওপর প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ওঠেন আওয়াল। এর জেরে গত ১৪ জুন দিনদুপুরে গ্রামের সড়ক দিয়ে বাইসাইকেলযোগে যাওয়ার সময় অতর্কিত হামলা চালিয়ে সুমনকে হাতুড়িপেটা করে আওয়াল ও তার এক সঙ্গী। সুমনের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক বুঝতে পেরে আত্মগোপন করেন আওয়াল।