কবরস্থান নিয়ে রাজাপুর-মনিরামপুর গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা : উভয়পক্ষই যুক্তিতে অটল

স্টাফ রিপোর্টার: কবরস্থানের উন্নয়নে গঠিত কমিটি নিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের রাজাপুর-মনিরামপুর গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে। কর্তৃত্বের প্রশ্নে পাশাপাশি দুটি গ্রামবাসী যেমন অনমনীয়, তেমনই উভয়পক্ষই যুক্তিতেও অটল।

আলুকদিয়া ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামবাসীর পক্ষে লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রায় ১৩৫ বছর আগে কবরস্থানটি স্থাপিত হয়। নামককরণ করা হয় রাজাপুর জান্নাতুল মাওয়া কবরস্থান। মনিরামপুর মৌজার ১ একর ৮৪ শতক জমি কবরস্থান হিসেবেই রেকর্ডকৃত। এক সময় মনিরামপুর গ্রামটি ছিলো হিন্দু অধ্যুষিত। দেশ ভাগের সময় ও পরবর্তীতে মুসলিম পরিবারের বসবাস শুরু হয়। এ গ্রামে কবরস্থান না থাকায় রাজাপুর জান্নাতুল মাওয়া কবরস্থানেই দাফন কাজ সম্পন্ন করা হতো। পরবর্তীতে মনিরাপুর গ্রামে দুটি পারিবারিক কবরস্থান করা হলেও যাদের পারিবারিক কবরস্থান নেই, তাদের পরিবারের সদস্যদের দাফন কাজ রাজাপুর কবরস্থানেই দাফন করা হয়। অথচ মনিরামপুরের কিছু ব্যক্তি অসত্য প্রকাশের মাধ্যমে কবরস্থানের কর্তৃত্ব ফলাতে নানা প্রকার চক্রান্ত করছে। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে দুটি গ্রামবাসী নিজ নিজ পক্ষে যুক্ত তুলে ধরে একপক্ষ অপর পক্ষকে দোষারোপ করতে থাকে।

আলুকদিয়া ইপির সাবেক মেম্বার মাদার আলী মল্লিক বলেন, জমিদার বজরাজের আমলে জনৈক মুসলিম পেয়াদার মৃত্যু হলে ওই স্থানে দাফনের মধ্যদিয়ে কবরস্থানটি গড়ে ওঠে। সম্প্রতি মনিরামপুরের নাসির উদ্দীন লাভলু, আছের উদ্দীনসহ কিছু ব্যক্তি কবরস্থান উন্নয়ন কমিটির নামে একটি মনগড়া কমিটি গঠন করলে উত্তেজনার সূত্রপাত হয়। অপরদিকে রাজাপুরের সাধারণ মানুষ সম্মিলিতভাবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে একটি কমিটি গঠন করেছে। বর্তমান মেম্বার আলী হোসেন বলেন, প্রবীণদের নিকট থেকে শুনে আসছি কবরস্থানটি রাজাপুরের মুরুব্বিরাই পরিচালনা করে এসেছেন। তাদের বাদ দিয়ে মনিরামপুরের কমিটি গ্রহণযোগ্য হয় কীভাবে? পক্ষান্তরে মনিরামপুরের মৃত ইয়াকুব আলী বিশ্বাসের ছেলে আনারুল হক বলেছেন, আমাদের গ্রামের লোকজন কবরস্থানের উন্নয়ন করতে চায়। কিন্তু রাজাপুরের লোকজন সেটা চায় না বলেই সমস্যা দেখা দিয়েছে। কবরস্থানটির উন্নয়নে ইতোমধ্যে চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ১ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন। হুইপ উন্নয়নে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমরা কবরস্থানের উন্নয়নে রাজাপুর গ্রামবাসীকে সাথে নিয়েই করতে চেয়ছি। কিন্তু তা হচ্ছে না। তাছাড়া কবরস্থানটি মনিরামপুর মৌজাভুক্ত। দীর্ঘদিন ধরে যেহেতু দু গ্রামেরই কবরস্থান হিসেবে দাফনের কাজ করা হয়ে আসছে সেহেতু এখন একটি গ্রামের বলে দাবি করা কতোটুকু যুক্তিযুক্ত? অপরদিকে রেজুলেশন করে গঠিত কমিটির সভাপতি নাসির উদ্দীন লাভলু বলেন, কবরস্থানের জমি দখল করে পুকুর খনন করে মাছচাষ চাষ শুরু করে কিছু ব্যক্তি। পুকরে মৃত মানুষের হাড়-মাংস ভেসে উঠতে দেখে এলাকার সাধারণ মানুষ কবরস্থানের উন্নয়ন প্রশ্নে কমিটি গঠন করেছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাসের গ্রামের বাড়ি মনিরামপুরে। তিনি বলেন, ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে মনিরামপুর গ্রামটি ছিলো হিন্দু অধ্যুষিত। দেশ ভাগের পর গ্রামে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ হতে থাকে। এর বহু আগে থেকেই কবরস্থানটি রাজাপুর কবরস্থান হিসেবেই পরিচিতি পায়। সে হিসেবে রাজাপুর গ্রামবাসীকে বাদ দিয়ে কিছু ভাবা অবান্তর নয়কি? তাছাড়া রাজাপুর গ্রামবাসীতে সম্মিলিত কমিটি গঠন করেছে। এলাকার প্রবীণদের নিকট থেকে যা শুনেছি তা বিশ্লেষণ করলে রাজাপুর গ্রামবাসীর পক্ষেই বিষয়টি গড়ায়।

Leave a comment