সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মূল বেতন জুলাইয়ে ভাতা আগামী বছর

 

স্টাফ রিপোর্টার: সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বহু আকাঙ্ক্ষিত অষ্টম পে-স্কেলের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন আগামী পয়লা জুলাই থেকে হচ্ছে না। বড় ধরনের ব্যয় জড়িত থাকায় ধাপে ধাপে তা বাস্তবায়ন করা হবে। আগামী জুলাই থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নতুন পে-স্কেলের শুধু মূল বেতনের অংশ পাবেন। এর সাথে পাবেন আগের স্কেল অনুযায়ী প্রদত্ত ভাতাগুলো। নতুন স্কেলের ভাতাগুলো পাওয়ার জন্য তাদের আরও এক বছর অপেক্ষা করতে হবে। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে নতুন পে-স্কেলের মূল বেতনের সাথে অন্য ভাতাগুলোও পাওয়া যাবে। অর্থাৎ ২০১৬ সালের জুলাই থেকে নতুন পে-স্কেল পুরোপুরি কার্যকর হবে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। অষ্টম বেতন কাঠামো পর্যালোচনার জন্য গঠিত সচিব কমিটির প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করা হয়েছে। চলতি মাসে নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়নের সুপারিশ অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। ওই বৈঠকে অনুমোদিত হলে তা রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে গেজেট আকারে জারি করা হবে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আগামী পহেলা জুলাই থেকে নতুন পে-স্কেলের শুধু মূল বেতনের অংশ দেয়ার বিষয়টি কার্যকর করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বহাল রাখা বা বাদ দেয়ার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় কোনো দায়িত্ব নিচ্ছে না। বিষয়টি ছেড়ে দেয়া হয়েছে মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্তের ওপর। তবে সরকারি চাকরিজীবীরা নতুন মূল বেতনের সাথে সব ধরনের ভাতা পুরনো হারেই পাবেন। উদাহরণস্বরূপ অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে সর্বনিম্ন বেতন স্কেল হচ্ছে ৮ হাজার ২৫০ টাকা। পয়লা জুলাই থেকে সর্বনিম্ন স্কেলধারী একজন কর্মচারী বেতন পাবেন ৮ হাজার ২৫০ টাকা। তার সাথে সব ধরনের ভাতা পাবেন আগের হিসাবে অর্থাৎ সপ্তম বেতন কাঠামো হারে। তিনি নতুন বেতন স্কেলে কোনো ভাতা পাবেন না।

এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং অষ্টম পে-স্কেল পর্যালোচনা সংক্রান্ত সচিব কমিটির সদস্য মাহবুব আহমেদ মঙ্গলবার যুগান্তরকে জানান, প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী নতুন বেতন স্কেল পয়লা জুলাই থেকে বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন। ওই হিসাবে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে নতুন বেতন কাঠামো চূড়ান্ত করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী তা বাস্তবায়নের আগে মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকের অনুমোদন নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের জন্য নতুন বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নতুন স্কেলের শুধু বেতন বাস্তবায়নের জন্য অতিরিক্ত ১৫ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ খাতে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ ছিলো ২৯ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪৫ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু বেতন বাবদ সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে একই খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা।

তবে বিভিন্ন ধরনের ভাতা বাস্তবায়ন করা হবে না বিধায় প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ বেশি বাড়ানো হয়নি। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বিভিন্ন ধরনের ভাতা বাস্তবায়নের জন্য ১৬ হাজার ২৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে একই খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৬ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, নতুনভাবে অনেকে চাকরিতে যোগদান করায় তাদের কারণে ভাতার বরাদ্দ বেড়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অষ্টম পে-স্কেলে সর্বোচ্চ বেতন হচ্ছে ৭৫ হাজার টাকা ও সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২৫০ টাকা। নতুন কাঠামোতে বেতনের গ্রেড থাকছে ২০টি। তবে মন্ত্রিপরিষদ ও মুখ্য সচিবের বেতন ধরা হয়েছে ৯০ হাজার টাকা (নির্ধারিত) এবং সিনিয়র সচিবের বেতন ৮৪ হাজার টাকা (নির্ধারিত)।

অষ্টম পে-স্কেল পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, গ্রেড-এক সচিবের বেতন ৭৫ হাজার টাকা, গ্রেড-দুই ৬৪ হাজার ৬০০ টাকা, গ্রেড-তিন ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা, গ্রেড-চার ৫০ হাজার টাকা, গ্রেড-পাঁচ ৪৩ হাজার টাকা, গ্রেড-ছয় ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা, গ্রেড- সাত ২৯ হাজার টাকা, গ্রেড-আট ২৩ হাজার টাকা, গ্রেড-নয় ২২ হাজার টাকা, গ্রেড-দশ ১৬ হাজার টাকা, গ্রেড-এগারো ১২ হাজার ৫০০ টাকা, গ্রেড-বারো ১১ হাজার ৩০০ টাকা, গ্রেড-তেরো ১১ হাজার টাকা, গ্রেড-চৌদ্দ ১০ হাজার ২০০ টাকা, গ্রেড-পনেরো ৯ হাজার ৭০০ টাকা, গ্রেড-ষোল ৯ হাজার ৩০০ টাকা, গ্রেড-সতেরো ৯ হাজার টাকা, গ্রেড-আঠারো ৮ হাজার ৮০০ টাকা, গ্রেড-উনিশ ৮ হাজার ৫০০ এবং গ্রেড-বিশ (সর্বনিু) ৮ হাজার ২৫০ টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশ কোনো ধরনের কাটছাঁট করা হয়নি।

উল্লেখ্য, প্রস্তাবিত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বেতন ও চাকরি কমিশন ২০১৩ গঠন করেছিলাম। আমি এ মহান সংসদে আগামী ১ জুলাই ২০১৫ থেকে নতুন বেতন স্কেল বাস্তবায়ন শুরুর ঘোষণা দিচ্ছি। এক্ষেত্রে গৃহীত পদক্ষেপগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করবো। আশা করি নতুন বেতন কাঠামো সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহে স্বস্তি এনে দেবে। অতিরিক্ত অর্থ সঞ্চালনে আর একটি অবদান হবে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি, যা অর্থনীতির সার্বিক প্রবৃদ্ধির হারে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে।

জানা গেছে, অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্যে সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে ব্যাপক আশার সঞ্চালন করেছে। পাশাপাশি কয়টি ধাপে নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করা হবে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে বিষয়টি পরিষ্কার হয়নি। ফলে এ নিয়ে তাদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে।

এর ধারাবাহিকতায় বাজেট ঘোষণার পরের দিন বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে সরকারি চাকরিজীবীদের নতুন বেতন স্কেল কয়টি ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে এ নিয়ে একাধিকবার অর্থমন্ত্রীকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো উত্তর তিনি দেননি। তবে সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার আগে অর্থমন্ত্রী জানান, অনেক প্রশ্নের উত্তর সব সময় দেয়া সম্ভব হয় না। যতোটুকু সম্ভব উত্তর দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত বেতন কমিশন গত ২১ ডিসেম্বও যে প্রতিবেদন দিয়েছিল তাতে ১৬টি গ্রেডে বেতন কাঠামো প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে পাঁচ সদস্যের সচিব কমিটির সুপারিশে আগের মতো ২০টি গ্রেড রাখা হয়েছে। জানা গেছে, অষ্টম জাতীয় বেতন কমিশনের অধিকাংশ সুপারিশ বহাল থাকছে।