মাথাভাঙ্গা বাঁচাও স্লোগানে আন্দোলন সফল হোক

 

মাথাভাঙ্গা নদীর উৎসমুখ বন্ধ। নিজস্ব উৎস তথা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঝরনা এখনও নদীটিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। বর্ষায় পানি বাড়লে নদীর বুকে কোমরসহ নানা প্রকারের বাঁধে পলি পড়ে। বর্ষার পর এসব স্থানই স্র্রোতের চরম প্রতিবন্ধকতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

চুয়াডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার প্রাণ মাথাভাঙ্গা বাঁচাতে না পারলে এলাকা মরুভূমিতে রূপ নেবে। চরম এই বাস্তবতা উপলব্ধিতেই ‘মাথাভাঙ্গা বাঁচাও, চুয়াডাঙ্গা বাঁচাও স্লোগান সামনে রেখে শুরু হয়েছে নদীর বুক থেকে অবৈধ কোমর ও স্রোতে প্রতিবন্ধকতা অপসারণের কাজ। মাথাভাঙ্গাকে বাঁচানোর উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।

মাথাভাঙ্গা পদ্মারই শাখা। এর উৎসমুখের পলি বা বালির স্তুপ সরিয়ে পানি নিতে পারলে মাথাভাঙ্গার আয়ু যে বাড়তো তা বলাই বাহুল্য। যদিও তা অতো সহজ নয়। কারণ, উৎসমুখটি ভারত সীমান্ত ঘেঁষে। সেখানে খনন দু দেশের দ্বিপাক্ষিক আলোচনাই যথেষ্ট নয়, বড় ধরনের বাজেট বরাদ্দও দরকার। সূত্র বলেছে, মাথাভাঙ্গার উৎসমুখ ইতোমধ্যেই চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন দেশের পানি সম্পদ বিভাগের পদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে পরিদর্শনও করেছেন। মাথাভাঙ্গায় পানি নেয়ার প্রকল্প গ্রহণের লক্ষ্যেই তিনি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে বেড়েছে দীর্ঘশ্বাস। তবে হাল ছাড়েননি।

নদীমাতৃক দেশ হলেও পড়শি দেশের কয়েকটি বাঁধে শুষ্ক মরসুমে আমাদের পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দেয়, বর্ষায় বন্যায় ভাসায়। যদিও আন্তর্জাতিক বিধি মোতাবেক শুষ্ক মরসুমে হিস্যা মতো পানি পাওয়ার কথা। এ নিয়ে দেনদরবার অব্যাহত। বর্তমানে তিস্তা চুক্তি বহুল আলোচিত। ফারাক্কাও। একদিকে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার অন্য দিকে নদী রক্ষায় আমাদের উদাসীনতা ক্রমশ ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকেই নিয়ে যাচ্ছে। এ থেকে উত্তরণ জরুরি। নদী ভরাটের অন্যতম কারণ নদীর পাড় কেটে আবাদ। মাথাভাঙ্গার তীর কেটে আবাদ করা হলেও আইনের তেমন প্রয়োগ ইতঃপূর্বে পরিলক্ষিত হয়নি। আর কোমরসহ বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার? প্রকাশ্যেই চলে দীর্ঘদিন ধরে।

নদী থাকতে নদী বাঁচাতে না পারা মানে দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা না বোঝা। বিলম্বে হলেও গত কয়েক বছর ধরে মাথাভাঙ্গার স্বাভাবিক স্রোতধারা ধরে রাখার বিশেষ উদ্যোগ লক্ষণীয় হলেও তার ধারাবাহিকতায় মাঝে মাঝে ছেদ পড়ে। নদীর বাঁধ-কোমর অপসারণের পাশাপাশি নদী ভরাটের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অনমনীয় আইন প্রয়োগ জরুরি।

মাথাভাঙ্গা বাঁচাও, চুয়াডাঙ্গা বাঁচাও স্লোগান ছড়িয়ে পড়ুক সর্বস্তরে। স্লোগান স্থানভেদে কিছুটা বদল করে হলেও মেহেরপুরের গাংনী, কুষ্টিয়ার মিরপুর ও ভেড়ামারার মাথাভাঙ্গা তীরবর্তী বাসিন্দাদের সোচ্চার হওয়া দরকার। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বেঁচে থাকুক মাথাভাঙ্গা।