অপহরণের অপবাদ দিয়ে ইবি ছাত্রীকে মানসিক নির্যাতন, হল বন্দি

 

ইবি প্রতিনিধি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের এক ছাত্রকে অপহরণের অপবাদ দিয়ে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের এক ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মানসিকভাবে হয়রানি ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রের পরিবারের পক্ষ থেকে ছাত্রীর বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রভোস্টের নির্দেশে ওই ছাত্রীকে কয়েকদিন ধরে হল বন্দি করে রাখা হয়েছে। একইসাথে প্রক্টরের বিরুদ্ধে ওই ছাত্রীর নামে থানায় তিনটি জিডি করার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পর থেকে ওই ছাত্রী মানসিক কষ্ট দিন যাপন করছেন। গতকাল সোমবার বিভাগীয় সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরারব করা পৃথক তিনটি লিখিত দরখাস্তে ওই ছাত্রী ও তার অভিভাবক এসব অভিযোগ তোলেন।

লিখিত দরখাস্তে ছাত্রী ও তার অভিভাবকের জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের ছাত্র কাজল ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের এক ছাত্রীকে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলো। প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নাহিদ কাজল আত্মহত্যার হুমকি দেয়। সর্বশেষ গত ৬ জুন দুপুর ১২টা থেকে ওই ছাত্র তার দু ফোন বন্ধ করে রাখে এবং তার বন্ধুকে বলে ছাত্রীর পরিবার তাকে অপহরণ করে আটকে রেখেছে। দরখাস্তে ছাত্রী ও তার অভিভাবক আরও জানান, ঘটনার সাথে ওই ছাত্রী ও তার পরিবারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এ ঘটনার পর ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তার চেয়ে ওই ছাত্রী তার বিভাগীয় সভাপতি বরাবর দুটি এবং মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাহারের দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার বরাবর একটি লিখিত দরখাস্ত করেছেন। জানা গেছে, একই ঘটনায় ওই ছাত্রীর পরিবারকে দোষী সাব্যস্ত করে ছাত্রের পরিবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. ত ম লোকমান হাকিম বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ থেকে আরও জানান যায়, নিখোঁজ ছাত্রের পরিবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পর ওই ছাত্রীকে হলের বাইরে যেতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি ওই ছাত্রীর হলের গেস্ট রুম পর্যন্ত আসাও নিষিদ্ধ রয়েছে। ওই ছাত্রী শেখ হাসিনা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. এএইচএম আক্তারুল ইসলাম জিল্লু তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। ওই ছাত্রী লিখিত অভিযোগে আরও জানান, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের ছাত্র কাজল নিখোঁজ হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. ত ম লোকমান হাকিম তার নামে থানায় তিনটি জিডি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। ছাত্রীর অভিভাবক লিখিত অভিযোগে জানান, ছাত্র নাহিদ কাজলের অভিভাবক আমার বাসায় গিয়ে আমাদের উপর চাপ প্রয়োগ করে ও আমার মেয়ে তার ছেলেকে কিডন্যাপ করেছে বলে জানায়। অপহরণের অভিযোগে ক্যাম্পাসে আমার মেয়ের উপর মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে।

ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ওই ছাত্রী বলেন, ‘হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের এক ছাত্র নিখোঁজ হওয়ার পর আমার পরিবারের উপর অপরহণের অপবাদ দেওয়া হয়েছে। আমাকে হলের বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। হলের প্রভোস্ট বলেছেন, হলের বাইরে গেলে সিট বাতিল করে দেয়া হবে। প্রক্টর স্যার আমার নামে থানায় তিনটি জিডি করেছেন। তিনি আমাকে আরও বলেন, আমি তোমার পক্ষ নেব না। আমাকে ছেলের পক্ষ নিতে হবে। এমতাবস্থায় আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। ঘটনার সাথে আমার ও আমার পরিবারের বিন্দু পরিমাণ সম্পৃক্ততা নেই। প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় আমাকে ব্লাকমেইল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও নিরাপত্তা দাবি করেন।

শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. এএইচএম আক্তারুল ইসলাম জিল্লু বলেন, ‘যেহেতু মেয়েটির ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ উঠেছে তাই আমি হলের প্রভোস্ট হিসেবে আমার যা করনীয় করেছি। মেয়েটির স্বার্থেই হলের বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে বলে তিনি জানান। প্রক্টর অধ্যাপক ড. ত ম লোকমান হাকিম বলেন, ‘ছেলের পরিবারের পক্ষ লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জিডি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে সেটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তিনি বলেন, ছেলে বা মেয়ে কারও প্রতিই পক্ষপাতমূলক আচরণ করা হয়নি। যা করেছি লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে করেছি।

ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘মেয়েটির পক্ষ আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি আমলে নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও দোষী ব্যক্তির শাস্তি প্রদানসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বিভাগের পক্ষ থেকে তিনটি সুপারিশ করা হয়েছে।

এদিকে নিখাঁজ ছাত্র নাহিদ কাজলকে রোববার রাতে যশোরের বসুন্দিয়া বাজার থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে কুষ্টিয়া সদর হাসপতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। নাহিদের পরিচিত আশিকুর রহমান জাপান জানান, নাহিদকে কে বা কারা অপহরণ করে তার পরিবারের কাছে এক লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে নাহিদের পরিবার থেকে বিষয়টি ৱ্যাবকে জানানো হলে অপহরণকারীরা তাকে যশোরের বসুন্দিয়া বাজারে ফেলে যায়।