দামুড়হুদার মাদরাসা পাড়ায় শোকের ছায়া : দিশেহারা দু সন্তানহারা মাতা-পিতা
বখতিয়ার হোসেন বকুল: দামুড়হুদা সদর ইউনিয়নের সংরক্ষিত ১নং ওয়ার্ড সদস্য দামুড়হুদা মাদরাসা পাড়ার সাবিয়া খাতুনের মেধাবী পুত্র সাব্বির (২০) ইন্তেকাল করেছে (ইন্না…….রাজেউন)। গত শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করে। মেধাবী ছাত্র সাব্বির প্রায় দু বছর ধরে অজ্ঞাত রোগে ভুগছিলো। শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে জানাজার নামাজ শেষে দামুড়হুদার ব্র্যাকমোড়স্থ কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়। এদিকে একমাত্র ছেলে মেধাবী ছাত্র সাব্বিরের অকাল মৃত্যুতে পরিবারে নেমে এসেছে শোকের মাতম। পিতা আতিয়ার রহমান সর্দার ও মা ইউপি সদস্য সাবিয়া খাতুন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
নিহতের পরিবারের লোকজন জানান, প্রায় ২৭ বছর আগে দামুড়হুদা বেগো পাড়ার আতিয়ার তার প্রতিবেশী সহপাঠী সাবিয়াকে ভালবেসে বিয়ে করেন। শুরু হয় দাম্পত্য জীবন। ১৯৯৩ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক দিনে তাদের ঘর আলো করে জন্ম নেয় এক ফুটফুটে কন্যাসন্তান। নাম রাখা হয় সুবর্ণা ইয়াছমিন কাকলী। এর দু বছর পর তাদের সংসারে আরো এক পুত্রসন্তান জন্ম নেয়। নাম রাখা হয় সাব্বির। কাকলী ও সাব্বির দু ভাই বোনই ছোটবেলা থেকেই ছিলো খুবই মেধাবী। দু ভাই বোনই ৫ম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিলাভ করে। প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কাকলী দামুড়হুদা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে এবং সাব্বির দামুড়হুদা ডিএস দাখিল মাদরাসায় পড়ালেখা করতো। প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত কাকলী যেমন ছিলো ক্লাসের ফাস্ট গার্ল। তেমনিভাবে নবম শ্রেণি পর্যন্ত সাব্বিরও ছিলো ক্লাসের ফাস্ট বয়। কাকলী নবম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত অবস্থায় এক অজ্ঞাতরোগে আক্রান্ত হয়। ফিকে হয়ে যায় তার উজ্জ্বল ভবিষ্যত। পিতা আতিয়ার ও মা সাবিয়া তার একমাত্র কন্যাকে সুস্থ করে তুলতে সহায়সম্বল যা ছিলো সব বিক্রি করে দীর্ঘ দু বছর ধরে ঢাকা, কলকাতাসহ দেশ বিদেশের বিভিন্ন নামি-দামি ডাক্তার দেখালেও আর সুস্থ হয়ে ওঠেনি। ২০১৩ সালের ৬ জুন বিকেলে কাকলী চলে যায় না ফেরার দেশে। একমাত্র কন্যাকে হারিয়ে মা-বাবা যখন পাগল প্রায় ঠিক সে মুহূর্তে একমাত্র ছেলে মেধাবী ছাত্র সাব্বিরও একই ধরণের অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়। সাব্বির তখন দামুড়হুদা ডিএস দাখিল মাদরাসায় নবম শেণিতে অধ্যয়নরত। বন্ধ হয়ে যায় পড়ালেখা। দীর্ঘ দু বছর পর গত ৬ জুন বিকেল ৫টার দিকে সাব্বিরও সকলকে কাঁদিয়ে পাড়ি জমায় না ফেরার দেশে। দু বছরের ব্যবধানে একই সময়ে একই তারিখে (৬ জুন ২০১৩ এবং ৬ জুন ২০১৫) দু ভাই বোনের মৃত্যু এ যেন সৃষ্টিকর্তার এক অপার লীলা। নিহতের পরিবারের লোকজন আরো জানান, ২০১৩ সালের ৬ জুন যেদিন কাকলীর মৃত্যু হয় সেদিন দুপুরে সামান্য ঝড়-বৃষ্টি হয়েছিলো এবং গত ৬ জুন যেদিন সাব্বির মারা গেলো সেদিনও দুপুরে সামান্য ঝড়-বৃষ্টি হয়।