ভারত আরো দুই বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে

 

স্টাফ রিপোর্টার: ভারত থেকে আরো দুই বিলিয়ন ডলার (২০০ কোটি ডলার) নমনীয় ঋণ (এলওসি) পাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশের অবকাঠামো বিশেষ করে রেল, বিদ্যুত ও তথ্য প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশ এই অর্থ ব্যবহার করতে পারবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরে এ ঋণ সহায়তার ঘোষণা দেয়া হবে।

এর আগে ২০১০ সালে ভারত বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তার ঘোষণা দেয়। এই অর্থ দিয়ে এখনো প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলার নমনীয় ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় ভারত সরকার। ওই বছরের ৭ আগস্ট ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পরবর্তীতে এ ঋণের ২০ কোটি ডলার অনুদানে রূপান্তর করা হয়।  অনুদানের অর্থ বাংলাদেশ সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় করছে।

দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, এবারে যে ঋণের ঘোষণা দেয়া হবে তাতেও থাকবে অনুদানের অংশ।নতুন ভারতীয় ঋণের জন্য বাংলাদেশ ইতিমধ্যে ১৫টি প্রকল্পের প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করেছে। এ প্রকল্পগুলোর মধ্যে রেল যোগাযোগের উন্নয়ন, বিআরটিসিরি জন্য যানবাহন সংগ্রহ, বিদ্যুত্ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ সড়ক ও জনপথের উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহুপাক্ষিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিষয়ক সচিব সুজাতা মেহতার নেতৃত্বে ভারতীয় উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল চলতি বছর ৫ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকা সফর করেন। সফরকালে এলওসি ঋণের বিষয় ছাড়াও ভারতীয় বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পায়। সেসময় পায়রা সমুদ্র বন্দর নির্মাণ, বিদ্যুত্, এলএনজি গ্যাস, তেল সরবরাহের ক্ষেত্রে পাইপলাইন নির্মাণে ভারতীয় বেসরকারি উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসতে পারে জানানো হয়।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নতুন এলওসির আওতায় রেলের চার প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, পার্বতীপুর-কাউনিয়া পর্যন্ত মিটার গেজ লাইনকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর, খুলনা-দর্শনা ডাবল লাইন প্রকল্প। এতে ভারতের ঋণ প্রস্তাব করা হয়েছে যাথক্রমে ১০ কোটি ৫০ লাখ ডলার এবং ৩০ কোটি ডলার। এছাড়াও ৩০ কোটি ডলার ঋণ প্রস্তাব করা হয়েছে বগুড়া-সিরাজগঞ্জ থেকে রায়পুর ও সাদানান্দাপুর পর্যন্ত নতুন ডুয়েল গেজ লাইন স্থাপন প্রকল্পের জন্য। সৈয়দপুর রেল কারখানা উন্নয়নে ঋণ প্রস্তাব করা হয়েছে ৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার। বিদ্যুতের ৩৩/১১ কে ভি সাব-স্টেশন এন্ড গ্রিড প্রকল্পে ৮২ কোটি ডলার এবং বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০কেভি লাইন প্রকল্পে ২১ কোটি ডলার ভারতীয় ঋণ প্রস্তাব করা হয়েছে। বিআরটিসির ৫০০ ট্রাক কেনার জন্য ঋণ প্রস্তাব করা হয়েছে তিন কোটি ৫৩ লাখ ডলার। বিআরটিসির বাস ক্রয়ের জন্য চার কোটি ৪১ লাখ ডলার, সড়ক ও জনপদ বিভাগের জন্য যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য চার কোটি ৯৪ লাখ ডলার ঋণের প্রস্তাব করা হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তির প্রকল্পে প্রস্তাব করা হয়েছে ২০ কোটি ৩০ লাখ ডলার ঋণ। চারটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং একটি  জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউট স্থাপনে ভারতের কাছে ঋণ প্রস্তাব করা হয়েছে ২৫ কোটি ডলার। এছাড়াও দেশের ৪৯ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট স্থাপনে ২৮ কোটি ডলার, আশুগঞ্জ নৌ কন্টেইনার টার্মিনাল স্থাপনে তিন কোটি ৩৪ লাখ ডলার এবং আশগঞ্জ বন্দর-ডারকার-আখাউড়া স্থল বন্দর সড়ক উন্নয়নে ২২ কোটি ৯৭ লাখ ঋণের ঋণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ইআরডির সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, বিদ্যমান ৮০ কোটি ডলারের নমনীয় ঋণ থেকে ৭৫ কোটি ১৯ লাখ ডলার বরাদ্দে ইতঃমধ্যে ১৫টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১টি প্রকল্পের আওতায় ২৭ কোটি ১৪ লাখ ডলারের ১৫টি বাণিজ্যিক চুক্তি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ অনুমোদন করেছে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক থেকে অর্থছাড় হয়েছে ১৭ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। বাংলাদেশ রেলওয়ে ব্রড গেজ প্যাসেঞ্জার কোচ ক্রয় সংক্রান্ত একটি প্রকল্পের আওতায় সম্প্রতি একটি বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এলওসির আওতায় ১৫ প্রকল্পের মধ্যে ৭ প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে। কিছু প্রকল্পের পণ্য সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে এবং কিছু প্রকল্পের দরপত্র চলমান রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে অর্থ ছাড়ের আকারও অনেক বেড়ে যাবে।