প্রসঙ্গ : রোগী সেজে ভর্তি হয়ে হাসপাতালে চুরি

 

যাত্রীবেশে বাস, ট্রেন, লঞ্চে পকেটমারের পাশপাশি যুক্ত হয়েছে অজ্ঞান করে নগদ টাকাসহ মূল্যবান মালামাল হাতিয়ে নিয়ে চম্পট দেয়ার ঘটনা। রোগী সেজে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন রোগীর মালামাল চুরির ঘটনা? একেবারে নতুন না হলেও চুরির সময় হাতেনাতে ধরা পড়ার পর ওস্তাদ-শিষ্যের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মধ্যে কিছুটা হলেও অভিনবত্ব রয়েছে। সে কারণে হাসপাতালে ভর্তির সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের তাগিদ অনুধাবন অমূলক নয়।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরেই চোরচক্রের উৎপাত লেগেই রয়েছে। মাঝে মাঝে চোর ধরা পড়লেও বন্ধ হচ্ছে না চুরি। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসকের চেম্বারের সামনের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে সুযোগ বুঝে ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে টাকা চুরির সময় হাতেনাতে ধরা পড়া সঙ্ঘবদ্ধ নারী চোর স্বীকারোক্তিতে জানায়, তারা বহিরাগত। মাঝে মাঝে হাসপাতালে এসে সুযোগ বুঝে চুরি করে। কয়েকদিন আগে হাসপাতালের এক শিশু বিশেষজ্ঞের চেম্বারের সামনের লম্বা লাইনে দাঁড়ানো এক নারীর ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে নগদ ৩০ হাজার টাকা চুরি হলে সেই বহিরাগত নারী চোরের প্রসঙ্গ আলোচনায় উঠে আসে। এর জের কাটতে না কাটতে গত বুধবার রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর মোবাইলফোন চুরির সময় হাতেনাতে এক ব্যক্তি ধরা পড়লে ওস্তাদ-শিষ্যের রোগী সেজে হাসপাতালে ভর্তির বিষয়টি প্রকাশ পায়। পুলিশ অবশ্য দুজনকে ধরে ব্যবস্থা নিয়েছে।

বুধবার গভীর রাতে চুরির সময় ধরা পড়া দুজনের তাৎক্ষণিক স্বীকারোক্তি ও অন্য রোগীদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে যে বিষয়টি স্পস্ট হয়েছে তা হলো- ওরা চুরির জন্যই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলো। সন্ধ্যায় এক ঘণ্টার ব্যবধানে দুজন ভর্তি হয়। ভর্তির সময় একজন বলেছিলো তিন দিন ধরে কিছু খেতে পারছে না। অপরজন বলেছিলো শরীরে বল নেই। দুর্বল। এসব বলার পাশাপাশি ওরা এমন আচরণ করেছিলো যে, চিকিৎসক ভর্তি করার প্রয়োজন বোধ করেছিলেন বলেই হয়তো ভর্তি করেছিলেন। যেহেতু ভর্তি হয়ে চুরির ঘটনা ইতঃপূর্বে ঘটলেও তা প্রকাশ না পাওয়ার কারণে বাড়তি সতর্কতার তাগিদ ছিলো না। কিন্তু এখন? এলো আর মনগড়া গল্প বলে অসুস্থতার নাটক করে ভর্তির আকুতি জানালো। অমনি ভর্তি হয়ে গেলো। হাসপাতালে ভর্তি যদি এরকম সহজলভ্য থাকে তা হলে নেশাখোর চোরের দল সুযোগ তো নেবেই।

সেবার ব্রত নিয়ে মহান পেশায় নিয়োজিতদের কাছে রোগী ভর্তির সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের বিষয়টি খানেকটা অমানবিক বলে মনে হলেও সমাজের বাস্তবতা তো আর অস্বীকার করতে পারবেন না! আর পুলিশ? অপ্রতুলতা যেহেতু এখনো পর্যন্ত অস্বীকার করার জো নেই, সেহেতু পুলিশে খবর দিয়ে দ্রুত সহযোগিতা নেয়ার মতো পরিবেশ গড়ার দিকে বাড়তি নজর দেয়া দরকার। তা ছাড়া হাসপাতালে রাতে পুলিশের একটি দল সার্বক্ষণিক রাখার বিষয়টিও গুরুত্বপুর্ণ।