ক্যান্সার গবেষণা ও চিকিৎসায় প্রফেসর ড. মেহেদীর অবিস্মরণীয় সাফল্য

 

দীর্ঘ ৮ ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচারসহ ওষুধ প্রয়োগে বোনক্যান্সার আক্রান্ত সুমি খাতুন পেলেন সুস্থ জীবন

স্টাফ রিপোর্টার: চিকিৎসা বিজ্ঞানে একের পর এক অবিস্মরণীয় অবদান রেখে চলেছেন চুয়াডাঙ্গার কৃতীসন্তান প্রফেসর ড. মাহবুব হোসেন মেহেদী। কুঁজো রোগের গবেষণালব্দ সফল অস্ত্রোপচারের পর এবার হাড়ে তথা বোনক্যান্সার আক্রান্ত রোগী সুমি খাতুনকে প্রয়োজনীয় অপারেশনসহ ওষুধ প্রয়োগে সুস্থ করে চমক সৃষ্টি করেছেন।

জানা গেছে, কুষ্টিয়া কুমারখালীর চড়াইকোল গ্রামের আলাউদ্দীনের মেয়ে সুমি খাতুনের জীবনে আনুমানিক ১০ বছর আগে নেমে আসে কালোঘন অন্ধকার। হঠাত করেই তার ডান পায়ের হাটুঁর নিচ থেকে গিরা পর্যন্ত ফুলে যায়। ফোলা সমস্যা বেড়ে প্রকট রূপ নেয়। কুসংস্কারাচ্ছন্ন গ্রামবাংলার সরলসোজা মানুষগুলোর মতো সুমির অভিভাবকও ওঝা কবিরাজের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। গাছগাছড়া আর ঝাড়ফুঁকের নামে অপচিকিৎসায় সুমির পায়ের সমস্যা বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে নেয়া হয় কুষ্টিয়ার অর্থপেডিক এক চিকিৎসকের নিকট। অনেক টাকার বিনিময়ে অপারেশনও করেন কুষ্টিয়ার ওই চিকিৎসক। রোগ নিরাময় দুরস্ত অপারেশনের সময় একটি শিরা কেটে ফেলায় সমস্যা তীব্রতর হয়ে ওঠে। ঢাকায় ডা. শহীদুজ্জামানের নিকট নেয়া হয়। দ্বিতীয় দফা অপারেশন করার পর তিনি জানান, বোনক্যান্সার। এ কথা শুনে সুমিকে তার পিতা নেন ভারতে। ভারতের ডা. এলকে আদভানী ও ডা. টিকে ব্যনার্জীসহ অনেকেই রোগী সুমিকে দেখেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। চিকিৎসা দেন। লাভ হয়নি। এরই মাঝে ছড়াতে থাকে ঘাতক ক্যান্সার। এক পর্যায়ে ভারতীয় ওই চিকিৎসকদের কেউ কেউ সাফ জানিয়ে দেন সুমিকে বেশিদিন বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। যা খেতে চায় তা খাওয়াতে থাকুন। দেশে ফিরিয়ে নেয়া হয়।

রোগী সুমির নিকটজন ও চিকিৎসকসূত্র উপোরক্ত তথ্য দিয়ে বলেছে, সুমিকে সুস্থ করে তোলার আশা যখন ছেড়েই দেয়া হয়, তখন শেষবারের মতো চেষ্টা করে দেখার জন্য উপমহাদেশের প্রখ্যাত অর্থোপেডিক সার্জন প্রফেসর ড. মাহবুব হোসেন মেহেদীর ঢাকার প্লাজমা মেডিকেল সার্ভিসেস অ্যান্ড রিচার্স ইন্সটিটিউট বর্তমানের বাংলাদেশ অর্থোপেডিক ট্রমা স্পাইন হাসপাতাল ও ইন্টারন্যাশনাল রিচার্স ইন্সটিটিউটে নেয়া হয়। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সহকর্মীদের সাথে নিয়ে প্রফেসর ড. মাহাবুব হোসেন মেহেদী দীর্ঘ ৮ ঘণ্টা অপারেশন করেন। ড. মেহেদী বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়ে গবেষণা করে গবেষণালব্ধ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে বিশেষ ইনজেকসন বা ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে সুমিকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়েছে। সকল প্রশংসা মহান সৃস্টিকর্তা আল্লাহতায়লার। এ সফলতা তিনি তার পিতা চুয়াডাঙ্গা তালতলার মরহুম মোরাদ হোসেন ও মাতা মরহুমা হাজেরা বেগমসহ চুয়াডাঙ্গাবাসীকে উৎসর্গ করেছেন।

উল্লেখ্য, প্রফেসর ড. মাহবুব হোসেন মেহেদী আমেরিকার ইউএসসি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিসম্পদ বিভাগসহ নিজস্ব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্লাজমা অর্থোপেডিক ট্রমা স্পাইন হাসপাতাল ও আন্তর্জাতিক গবেষণা কেন্দ্রে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ক্যান্সারসহ অন্যান্য বিষয়ে গবেষণা করে আসছেন। এরই মাঝে তিনি চুয়াডাঙ্গা ঈদগাপাড়ার সাইফুল ইসলাম সোহাগকে কাইফো সহকাত্তসিস রোগ থেকে সুস্থ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনে চিকিৎসা বিজ্ঞানে উদাহরণ সৃষ্টি করেন। এরপর তিনি সুমিকে সুস্থ করে চিকিৎসার ক্ষেত্রে সৃষ্টি করলেন অনন্য দৃষ্টান্ত।