মাহিদুর ও আফসারের আমৃত্যু কারাদণ্ড

স্টাফ রিপোর্টার: মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তাদের বিরুদ্ধে আনা তিনটি অভিযোগের মধ্যে ১ নম্বর অভিযোগে এ দণ্ড দেয়া হয়। এছাড়া ২ নম্বর অভিযোগে ৫ বছর কারাদণ্ড এবং ৩ নম্বর অভিযোগ আমলে না নেয়ায় দুজনকেই খালাস দেয়া হয়। গতকাল বুধবার দুপুরে বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেনের উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন। এটি যুদ্ধাপরাধ বিচার ট্রাইব্যুনারের ১৮তম রায়।

এর আগে গত ২২ এপ্রিল মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন ট্রাইব্যুনাল। রায়ে সন্তুষ্টি জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষ। অন্যদিকে ন্যায়বিচার পাননি দাবি করে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষ। একাত্তরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ এলাকায় হত্যা ও গণহত্যার সুনির্দিষ্ট তিনটি অভিযোগ আনা হয় এ দুজনের বিরুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধের সময় শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর স্কুলমাঠ ও আশপাশের এলাকায় গণহত্যার ঘটনায় ২০১৩ সালে মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুসহ ১২ জনকে আসামি করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আদালতে একটি মামলা করা হয়। মামলাটি করেন গণহত্যার শিকার শহীদ পরিবারের সদস্য শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের পারচৌকা গ্রামের বদিউর রহমান।

প্রসিকিউশনের তদন্ত দল ওই দুজনের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের তদন্ত শুরু করে গত বছর ১১ ফেব্রুয়ারি। একই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর শিবগঞ্জের দুর্লভপুর ইউনিয়ন থেকে মাহিদুর এবং বিনোদপুর থেকে আফসারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত বছরের ১১ ডিসেম্বর মাহিদুর ও আফসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্যদিয়ে এ মামলার বিচার শুরু হয়। ২২ এপ্রিল বিচার শেষে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়। মাহিদুর ও আফসারের বিরুদ্ধে তিন অভিযোগ : অভিযোগ ১. ১৯৭১ সালের ৬ অক্টোবর সকাল ৬টা থেকে ৭ অক্টোবর সন্ধ্যা পর্যন্ত দুদিনে মাহিদুর ও আফসারের সহায়তায় পাকিস্তানি দখলদার ও রাজাকার বাহিনী অপারেশন চালিয়ে ৩৯ জনকে আটক, অপহরণ, নির্যাতন করে এবং ২৪ জনকে হত্যা করে। অভিযোগ ২. ১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবর বেলা ১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাহিদুর ও আফসারের সহায়তায় রাজাকার বাহিনী শিবগঞ্জের এরাদত বিশ্বাসের টোলা এবং কবিরাজ টোলা গ্রামের ৭০টি বাড়িতে লুণ্ঠন চালায় এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। অভিযোগ ৩. ১৯৭১ সালের ২ নভেম্বর (১২ রমজান, ১৫ কার্তিক, মঙ্গলবার) দুপুর ২টা থেকে পরের দিন ৩ নভেম্বর রাত পর্যন্ত তৎকালীন চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহকুমার শিবগঞ্জ থানাধীন শেরপুর ভাণ্ডার (লক্ষ্মীপুর), আদিনা ফজলুল হক সরকারি ডিগ্রি কলেজ, শিবগঞ্জ সিও দেভ অফিস আর্মি ক্যাম্প এবং উপজেলাসংলগ্ন ইয়াকুব বিশ্বাসের আমবাগান এলাকায় মাহিদুর ও আফসারের সহায়তায় রাজাকার বাহিনী অপারেশন চালিয়ে আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ করে এবং চারজনকে হত্যা করে। এ তিন অভিযোগের মধ্যে ১নং অভিযোগে দুজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড, ২নং অভিযোগে ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ৩ নং অভিযোগ আমলে না নেয়ায় তাদের খালাস দেয়া হয়।