ফয়সাল গুলি করে হবির বুকে : অন্যরা কোপায়

দামুড়হুদাহাবি হত্যার দায়ে দণ্ডিত ফেরারি সুজন ধরা পড়ার পর বললো

 

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদা বাজারপাড়ার যুবদলকর্মী হাবি হত্যামামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ফেরারি সুজনকে (৩২) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দর্শনা পৌর শহরের পূর্বাশা কাউন্টারের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সে কার্পাসডাঙ্গার কোমরপুর গ্রামের ফজলু ডাক্তারের ছেলে।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি কামরুজ্জামান জানান, সে দামুড়হুদা বাজারপাড়ার সুলতান গাইনের ছেলে হাবিবুর ওরফে হাবি হত্যামামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ফেরারি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে দামুড়হুদা থানায় চাঁদাবাজী ও মাদকসহ একাধিক মামলায় ওয়ারেন্ট আছে। তিনি আরো বলেন, হাবি হত্যামামলায় সাজাপ্রাপ্ত অপর আসামি ফয়সাল এখনও পলাতক আছে। ২০০৬ সালের ২৫ নভেম্বর বিকেলে নিহত হাবি, সুজন ও ফয়সাল তিন বন্ধু উপজেলার দর্শনা হল্টচাঁদপুরের রবিউল ডাক্তারের বাড়িতে যায় এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ওই বাড়িতেই ফয়সাল ও সুজনের হাতে খুন হয় অপর বন্ধু হাবি।

হাবি হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে সুজন জানায়, আমাদের বাড়ি কোমরপুর হলেও আমি ও আমার ছোট বোন মার সাথে দামুড়হুদা ঘাটপাড়ায় ভাড়ায় বাড়িতে থাকতাম। মা আমাদের দু ভাই বোনকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করার জন্য অনেক কষ্ট করতো। পাড়ায় পাড়ায় কাপড়ও বিক্রি করতো। আমি তথন ক্লাস টেনের ছাত্র। এ সময় বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ি। সুজন আরো জানায়, ওই সময় স্থানীয় রাজনীতিতে বিএনপি নেতা চেয়ারম্যান মনির ও থানা বিএনপির সেক্রেটারি জহুরুলের সাথে অন্তঃদ্বন্দ্ব চলছিলো। আমি ও ফয়সাল ছিলাম চেয়ারম্যান মনিরের পক্ষে আর হাবি ছিলো জহুরুলের পক্ষে। আমি ফয়সাল ও হাবি দু পক্ষে থাকলেও প্রায়ই একসাথে দর্শনা হল্টচাঁদপুরের রবিউল ডাক্তারের বাড়িতে যেতাম এবং একসাথে মদপান করতাম। এরই মাঝে জহুরুল ও মনিরের অন্তঃদ্বন্দ্ব আরো জোরালো হয়ে ওঠে এবং একে অপরকে ঘায়েল করতে দু পক্ষই চেষ্টা চালাতে থাকে।

পুলিশি জিজ্জাসাবাদে সাংবাদিকদের সামনে এসব তথ্য দিয়ে সুজন আরো বলেছে, জনযুদ্ধের আঞ্চলিক নেতা দাদা তপনকে টাকার বিনিময়ে জহুরুল ভাড়া করে বলে শুনতে পাই। কিন্তু আমি ও ফয়সাল সব সময় মনিরের সাথে থাকায় তাকে মারার সুযোগ না পাওয়ার কারণে আমাদের দুজনকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন বিকেল ৩টার দিকে আমি ফয়সাল ও হাবি একই সাথে দর্শনায় যাই এবং মদপান করি। সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৬টার দিকে ওই বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় বাড়ির গেটের সামনে অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনকে দেখে আমি ও ফয়সাল সটকে পড়ার চেষ্টা করি। এ সময় হাবি তার কাছে থাকা পিস্তল বের করে এবং ফয়সালকে গুলি করতে যায়। কিন্তু হাবি গুলি করার আগেই ফয়সাল তার কাছে থাকা নাইন এমএম পিস্তল দিয়ে গুলি করে হাবির বুকে। ফয়সাল মাত্র একটিই গুলি করেছিলো। এ সময় আমরা বাড়ির সীমানা পাঁচিল টপকে পালিয়ে যাই এবং ওই বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে এবং গুলিতে আহত হাবিকে ফয়সাল মনে করে তারা এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে হাবিকে রক্তাক্ত জখম করে। ফলে ঘটনাস্থলেই হাবি মারা যায়।

দামুড়হুদা বাজারপাড়ার যুবদলকর্মী হাবি হত্যা নিয়ে ইতঃপূর্বে এলাকায় নানা গুঞ্জন থাকায় সুজনের কাছে হত্যার প্রকৃত কারণ জানতে চাইলে সুজন ওই হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা এভাবেই তুলে ধরে। সাংবাদিকদের সামনেও কোনো রকম রাখঢাক ছাড়াই এসব বর্ণণা দেয় সুজন।