সাত বাংলাদেশিকে সাগরে ফেলে পালালো পাচারকারীরা

কোনরকম সাহায্য না করতে জেলেদের নির্দেশ দিয়েছে ইন্দোনেশিয়া

 

স্টাফ রিপোর্টার: দালালদের খপ্পরে পড়ে অবৈধপথে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টাকালে সাগরে ভেসে বেড়ানোর কিংবা জঙ্গলে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করার কথা এখন সবার মুখে মুখে। একই সাথে এসব মানব পাচারের সাথে জড়িত দালালদের কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করার খবরও আলোচনায় এসেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মানব পাচারকারী উখিয়ার উপকূলীয় এলাকার ফয়েজ মাছধরা জেলে থেকে কোটিপতি হয়েছেন। তিনি উখিয়া সদরে গাড়ি-বাড়িসহ অঢেল জমিজমার মালিক বনে গেছেন। কিন্তু তিনি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। কক্সবাজার ভিত্তিক এনজিও হেলপ কক্সবাজার দাবি জানিয়েছে, অবৈধ উপায়ে আয় করা কোটি টাকার এসব সম্পত্তি জব্দ করে সর্বশান্ত পরিবারদের দেয়া হোক।

মালয়েশিয়ার উদ্দেশে অবৈধভাবে সাগরপথে যাওয়া অভিবাসীদের মানবিক বিপর্যয়েও উদাসীন দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের দেশগুলো। যে কারণে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডের উপকূলের কাছে আন্দামান সাগরে আড়াই-তিন মাস ধরে নৌকায় ভাসতে থাকা কয়েক হাজার মানুষের জীবন এখন চরম শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। নৌকায় খাদ্যের জন্য মারামারিতে জড়িয়ে ইতোমধ্যে একশোর বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রাষ্ট্রগুলো অবৈধ অভিবাসীদের বহনকারী নৌকাগুলো যেমন তীরে ভিড়তে দিচ্ছে না, আবার সাধারণ জেলেদেরও অভিবাসীদের সাহায্য না করার নির্দেশ দিচ্ছে। অভিবাসীদের উদ্ধারে রাষ্ট্রগুলোর চরম উদাসীনতায় হতাশা ও নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা বলেছে, অভিবাসীদের উদ্ধারে যত দেরি করা হচ্ছে ক্ষতি ততোই বাড়ছে। রাষ্ট্রগুলোর উচিত সবার আগে এসব মানুষের জীবন বাঁচানো।

এদিকে, থাইল্যান্ডে সন্দেহভাজন প্রধান পাচারকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর মানবপাচার বন্ধে উপায় ও করণীয় ঠিক করতে আগামীকাল বুধবার মালয়েশিয়ায় আলোচনায় বসছে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। অন্যদিকে, রাষ্ট্রগুলো যখন এসব মানুষকে বাঁচাতে এগিয়ে আসছে না সেখানে জেলেদের মতো সাধারণ মানুষই সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে।

বঙ্গোপসাগর থেকে সাত বাংলাদেশিকে উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড। এদের মালয়েশিয়ায় পাচার করার উদ্দেশে বোটে তোলা হয়েছিলো। কোস্টগার্ডের টহল টিম দেখে পাচারকারীরা সাতজনকে সাগরে নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায়। এদিকে পাচারকারীদের মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে এসেছেন ১৩ বাংলাদেশি। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিনের ছেঁড়াদ্বীপ এলাকা থেকে তারা পৃথকভাবে ফিরে আসেন। অপরদিকে কয়েক দিন আগে ডুবে যাওয়া বোট থেকে উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশিরা ইন্দোনেশিয়ার আশ্রয় শিবিরে মানবেতর জীবন পার করছেন বলে জানা গেছে। সেখানকার কর্তৃপক্ষ খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। দেশটির আচেহ প্রদেশে আশ্রয় নেয়া বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গা অভিবাসীদের জন্য খাদ্য সহায়তা চেয়েছেন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। থাই উপকূলে অভিবাসী বোঝাই চারটি বোটের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না বলে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। এসব বোটে দু শতাধিক যাত্রী ছিলো, যাদের সলিল সমাধি হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উদ্ভূত এ পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। এ বিষয়ে সোমবার তিনি বলেন মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে।

অন্যদিকে এ সংকটের জন্য মিয়ানমারকে দায়ী করেছেন মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ। এ ব্যাপারে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করার জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

সাত বাংলাদেশি উদ্ধার: মালয়েশিয়ায় পাচারের সময় কোস্টগার্ডের টহল টিম দেখে বোট থেকে সাত বাংলাদেশিকে বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করে দালাল চক্র। এই চক্র বোট নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। রোববার রাত ৩টার দিকে কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের একটি টহল টিম সেন্টমার্টিন দ্বীপের অদূরে ছেঁড়াদ্বীপের উত্তর এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃতরা হলেন- শাহাদাত সরকার (৩৫), আলাউদ্দিন শেখ (২৮), মামুন মোল্লা (১৯), জসীম মুন্সী (৩৭), ইদ্রিস আলী (২০), ইসমাইল হোসেন (২২) ও ইমরান আলী (২২)।

কোস্টগার্ড পূর্ব জোন সূত্র জানায়, মানব পাচার রোধে সাম্প্রতি টহল জোরদার করে কোস্টগার্ড। এর অংশ হিসেবে জোনের একটি টিম সেন্টমার্টিনের অদূরে বঙ্গোপাসাগরে টহল দিচ্ছিলো। একটি ইঞ্জিন বোটের সন্দেহজনক গতিবিধি দেখে টহল দল সেটিকে ধাওয়া করলে বোটে থাকা সাতজনেক সাগরে নিক্ষেপ করে পাচারকারীরা। ভাসমান অবস্থায় টহল টিমের হাতে উদ্ধার হওয়া যাত্রীরা কোস্টগার্ডকে জানান, শহীদ গাজী (৩৪) ও ওয়াদুদ (২৮) নামে দুই দালাল তাদের মালয়েশিয়া পাচার করছিলো। কোস্টগার্ড দেখে তাদের সাগরে নিক্ষেপ করে তারা পালিয়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে কোস্টগার্ডের জোনাল কমান্ডার এম নুরুল হুদা জানান, এ ঘটনায় কক্সবাজারের টেকনাফ থানায় দালালদের বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে এলেন ১৩ জন: মানব পাচারের ব্যবহৃত থাই ট্রলার থেকে মুক্তিপণ দিয়ে আরও ১৩ মালয়েশিয়াগামী ফিরে এসেছেন। রোববার রাত ১১টার দিকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিনের ছেড়াদ্বীপ এলাকা থেকে তারা পৃথকভাবে ফিরে আসেন। ফিরে আসা ব্যক্তিদের কোস্টগার্ড ও বিজিবি আটক করার পর সোমবার দুপুরে টেকনাফ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। আটককৃতরা সিরাজগঞ্জ, ঝিনাইদহ, জয়পুরহাট ও চট্টগ্রাম জেলার বাসিন্দা।

ফিরে আসা ব্যক্তিরা জানান, কক্সবাজারের মহেশখালীসহ কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে দুই থেকে আড়াই মাস পূর্বে সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য তারা দালালদের মাধ্যমে সাগরে অপেক্ষমাণ থাই ট্রলারে উঠেন। দু মাসের বেশি সময় তারা ট্রলারে ছিলেন। পরে থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশে মানব পাচারের বিরুদ্ধে জোরদার অভিযান শুরু হলে তাদের বহনকারী ট্রলার থাইল্যান্ড সীমান্তের দিকে এগুতে পারেনি। এ অবস্থায় ট্রলারে থাকা দালালরা মুক্তিপণের বিনিময়ে যাত্রীদের কূলে নামিয়ে দেয়ার কৌশল গ্রহণ করে। তারা পরিবারের সাথে মোবাইল যোগাযোগের মাধ্যমে বিকাশের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা করে মুক্তিপণের বিনিময়ে ফিরে আসেন। ফিরে আসা এসব ব্যক্তি আরও জানান, মিয়ানমার জলসীমায় সীতা পাহার নামক স্থানে যেখানে মানব পাচারের ট্রলারগুলো অবস্থান করে থাকে সেখানে আরও ৩টি বড় ট্রলার অন্তত পাঁচ শতাধিক অভিবাসী ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। বিজিবি-৪২ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ ও কোস্টগার্ড সেন্টমার্টিন স্টেশন কমান্ডার লে. কমান্ডার ডিকসন চৌধুরী সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আটককৃতদের টেকনাফ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জড়িত দালালদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আতাউর রহমান খোন্দকার জানান, মালয়েশিয়াগামী ভিকটিমদের জিজ্ঞাসাবাদের পর জড়িত দালালদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর আদালতে প্রেরণ করা হবে।

ইন্দোনেশিয়ায় উদ্ধার অভিবাসীদের পরিচয় শনাক্তকরণের কাজ চলছে: ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অভিবাসীদের শনাক্তকরণের কাজ চলছে। সেখানে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তারা। গত সপ্তাহে বোটডুবির পর এদের উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তাদের জন্য খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। তবে কর্র্র্তৃপক্ষ জানিয়েছে তাদের কাছে যে খাবার আছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এ জন্য তারা কেন্দ্রীয় সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়োর কাছে খাদ্য সাহয্যের আবেদন জানিয়েছেন। শনাক্তকরণের পর এদের নিজ নিজ দেশে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে ইন্দোনেশিয়া কর্তৃপক্ষ।

থাই উপকূলে কয়েকশঅভিবাসীর সলিল সমাধির আশঙ্কা: থাইল্যান্ড উপকূলের সামান্য দূরে অপেক্ষমাণ অভিবাসী বোঝাই ৪টি বোটের সন্ধান মিলছে না। ঝড়ের কবলে পড়ে বোটগুলো ডুবে কয়েকশ’ অভিবাসীর সলিল সমাধি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মালয়েশিয়া ও থাই প্রধানমন্ত্রীকে বান কি মুনের ফোন : দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অভিবাসী সংকট নিরসনে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। ফোনালাপে এ অঞ্চলে উদ্ভূত অভিবাসী সংকট ইস্যুতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। মহাসচিব বলেন, অভিবাসী সঙ্কট নিরসনে সব ধরনের প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত জাতিসংঘ। অভিবাসী সঙ্কট মোকাবেলায় থাইল্যান্ডের সংলাপ আয়োজনের পরিকল্পনায় জাতিসংঘ আশ্বস্ত।

এদিকে মুনের সহকারী জান এলিয়াসন বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার মন্ত্রীদের সাথে সঙ্কট নিয়ে আলোচনা করেছেন। এক বিবৃতিতে বান কি মুনের মুখপাত্র বলেন, এ অঞ্চলের নেতাদের সাথে আলোচনায় তারা (মহাসচিব ও তার সহকারী) অভিবাসীদের প্রাণ রক্ষায় ও আন্তর্জাতিক আইন সমুন্নত রাখার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এ সময় দেশগুলোর নেতাদের সমুদ্রে উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনার বাধ্যবাধকতা ও অভিবাসীদের না ফেরানোর বিষয়ে অনুরোধ করেন তারা।

অভিবাসীদের জন্য খাদ্য সাহায্যের আবেদন ইন্দোনেশিয়ার: উদ্ধার হওয়া অভিবাসীদের জন্য সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে ইন্দোনেশিয়া। সোমবার আচেহ প্রদেশের লংসা শহরের মেয়র সেখানে অবস্থানরত দেড় হাজার অভিবাসীর জন্য যে বরাদ্দ রয়েছে তা অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন। গত সপ্তাহে ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে একটি বোট ডুবে যাওয়ার সময় ৭শ’ অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়। এরা সবাই মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশের নাগরিক। খাদ্য ও পানিবিহীন অবস্থায় নিজেদের মধ্যে মারামারি করার সময় বোটটি ডুবে যায়। পরে ইন্দোনেশিয়ার জেলেদের থেকে খবর পেয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের উদ্ধার করে। তাদের আচেহ প্রদেশের লংসায় আশ্রয় দেয়া হয়েছে। লংসার মেয়র উসমান আবদুল্লাহ বলেন, তাদের কাছে যে বাজেট বরাদ্দ আছে তা খুবই সীমিত। নগরীর অন্য খাতের বরাদ্দ অর্থ অভিবাসীদের জন্য ব্যয় করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার অথবা যে কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে আমাদের জরুরি সাহায্য প্রয়োজন। আমরা সাময়িকভাবে নগর বাজেট থেকে মানবিক সহায়তার জন্য অর্থ ব্যয় করছি। তবে বাস্তবে ত্রাণ কিংবা জরুরি সহায়তার জন্য আমাদের কোনো বাজেট নেই। আমাদের অর্থের উৎস খুবই সীমিত।’ অপরদিকে ইন্দোনেশিয়ান কর্তৃপক্ষ সে দেশের জেলেদের নির্দেশ দিয়ে বলেছে- তারা যেন সাগরে ভাসতে থাকা অভিবাসীদের উদ্ধারে কোনোরকম সাহায্য না করে।

থাইল্যান্ড থেকে বিবিসির সংবাদদাতা জোনাথন হেড জানিয়েছেন, মিয়ানমার এবং বাংলাদেশ থেকে আসা অভিবাসী ভর্তি আরও বোট ইন্দোনেশিয়ার দিকে আসছে। দক্ষিণ থাইল্যান্ডের জেলেরা বলেছেন, তারা কমপক্ষে দুটি বোট ইন্দোনেশিয়ার উপকূলের দিকে যেতে দেখেছেন। মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগের আহ্বান মাহাথিরের: মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন, সাগরে ভাসমান হাজার হাজার বিপন্ন মানুষের জীবন বাঁচাতে এ মুহূর্তে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নেতাদের আলোচনায় বসে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করতে হবে। তিনি বলেন, মালায়েশিয়া এ মুহূর্তে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নেতাদের আলোচনায় বসে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু সংকট নিরসনে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করার পক্ষে। রোহিঙ্গারা সত্যিই ভুগছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে বেকার সমস্যা রয়েছে এবং দেশটি খুব দরিদ্র। আমরা চাই তাদের দেশে তাদের সমস্যার মোকাবেলা করা হোক, এখানে নয়। রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি ভাসমান অভিবাসী সম্বন্ধে বিরোধী সংসদ সদস্য জাহেরির এক প্রশ্নের জবাবে মাহাথির মোহাম্মদ সোমবার বিকেলে পুত্রাজায়ায় সংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন- অন্তত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নেতাদের একটি সভা আহ্বান করে মিয়ানমারকে বোঝানো উচিত তাদের জন্য অন্য দেশ মহাসংকটে পড়বে এটা হতে পারে না।

পাচার চক্রের হোতাসহ গ্রেফতার ২: চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি জানান, চরফ্যাশন উপজেলার শশীভূষণ থানার উত্তর চর মঙ্গল গ্রাম থেকে ফারুক হোসেন নামে নেপালভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের এক সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রোববার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফারুকের বাবা সেলিম মুন্সীকে আটক করা হয়েছে বলে ওসি জানিয়েছেন। মানব পাচার প্রতিরোধে একসঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া: মানব পাচার প্রতিরোধে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে এ অঞ্চলের অন্য দেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া। রোববার মালয়েশিয়া-বাংলাদেশের চতুর্থ যৌথ কমিশনের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে মালয়েশিয়ার সারওয়াক প্রদেশে আরও বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে মালয়েশিয়া। দু দেশের মধ্যে বিনিয়োগ ও পারস্পরিক যোগাযোগ বাড়ানোর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা শেষে দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ৩১ দফার ‘যৌথ আলোচনার দলিলু’ স্বাক্ষর করেন। এদিকে আসিয়ান ডায়ালগের অংশীদার হওয়ার আগ্রহ জানিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি চিঠি মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

যৌথ কমিশনের বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলি। মালয়েশিয়া প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাতো আনিফাহ আমান। বৈঠকে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্ভাব্য আরও ক্ষেত্র খুঁজে বের করার বিষয়ে দু’দেশের প্রতিনিধিরা সম্মত হন।

বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মালয়েশিয়ায় আরও বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। এছাড়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য মালয়েশিয়ার সম্ভাবনাময় অন্য খাত খুলে দেয়ারও অনুরোধ জানানো হয়। এ বৈঠকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরে মালয়েশিয়ায় একটি শহীদ মিনার নির্মাণে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেয়া হয়। বাংলাদেশের এ প্রস্তাব গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে বলে মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

মানব পাচার রোধে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে এ অঞ্চলের অন্য দেশের সাথে একযোগে কাজ করতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া। সাম্প্রতিক অবৈধ অভিবাসনের নামে মানব পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এ সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি বলে মনে করে দু দেশ।