তথ্যপ্রযুক্তি এবং উঠতি বয়সীদের বিপথগামিতা

ইন্টারনেট যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটিয়েছে। যে পত্র এক সময় প্রাপকের হাতে পৌছুতে দিনের পর দিন সময় লাগতো, এখন তা কয়েক সেকেন্ডেই পৌঁছে যায়। শুধু তাই নয়, ইন্টারনেটের বদৌলতে পৃথিবীর যে প্রান্তেই আপনজন থাকুক, সরাসরি সচিত্র যোগাযোগ করাও সম্ভব হচ্ছে চোখের পলকে। আর সেলফোন তথা মোবাইলফোন? সবই এনেছে হাতের মুঠোর মধ্যে।

তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্বব্যাপি ইতিবাচক সাড়া ফেললেও কেউ কেউ যে অপব্যবহার করছে না তা নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে কেউ কেউ অনেকের ছবি শুধু ছড়িয়ে দিচ্ছে না, আপত্তিকর মন্তব্য জুড়ে মর্যাদাহানি করছে। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় এ সংক্রান্ত দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। স্থান-কাল-পাত্র পৃথক হলেও ঘটনা দুটির সাথে যে বিষয়ে অভিন্নতা রয়েছে তা হলো যুবতীর ছবির সাথে যুবকের ছবি যুক্ত করে ফেসবুক নামক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা। উঠতি বয়সী যুবক নিজেকে নায়ক ভেবে অন্যের অধিকার খর্ব করার পথে হেঁটেছে। এ ধরনের হীনমানসিকতা গড়ে ওঠার আড়ালে অনেক কিছুই দায়ী। সচেতনতার অভাবই শুধু নয়, আকাশ সংস্কৃতির মাধ্যমে যে নাটক সিনেমা পৌঁছে যাচ্ছে ওদের বসার ও শোয়ার ঘরে তা থেকে ওরা কী শিখছে? অন্যকে উত্ত্যক্ত করে নায়ক হওয়া যায় না, নায়ক হতে হলে নিজেকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হয়। এরকম শিক্ষনীয় সিনেমা নাটকের চেয়ে অন্য রকমটাই যে বেশি তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। তা ছাড়া কোনটি অন্যায়, কোনটি ন্যায় তা জানতে পারিবারিক, সামাজিক সচেতনতারও কি যথেষ্ট অভাব নয়? ঘরে বসে গোপনে করলেও যে প্রযুক্তির মাধ্যমে আপত্তিকর ছবি ও মন্তব্য ছড়িয়ে দেয়া হয়, সেই প্রযুক্তির মাধ্যমেই অপরাধীকে শনাক্ত করা অসম্ভব নয়। এ প্রযুক্তির ভালোটা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে মন্দটা পরিহারের মানসিকতা গড়ে তুলতে অভিভাবকদের বাড়তি দায়িত্বশীলতারও যে বিকল্প নেই তা বলাই বাহুল্য।

কারো ছবি প্রযুক্তির বদৌলতে বিকৃত করে আপত্তিকর মন্তব্য জুড়ে দিয়ে প্রচার অবশ্যই আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি কাম্য। একই সাথে দরকার যুবসমাজকে বিপথগামিতা থেকে রক্ষা করতে সুস্থ ধারার সংস্কৃতি, বিনোদন। বিনোদনের মাধ্যমে উঠতি বয়সীদের যতো সহজে সুপথে রাখা সম্ভব, বোধ করি অতো সহজ পথের সন্ধান এখনও মেলেনি।