স্টাফ রিপোর্টার: ‘তোমার কোনো ভয় নেই। তোমার বাবার কাছে তোমাকে পৌঁছে দেব।’ এই বলে ৮ বছরের শিশু আবিরকে রাজধানীর বনানী থেকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। তাকে পল্লবীর একটি বাড়িতে পাঁচ দিন আটকে রাখে। অবশেষে মুক্তিপণ হিসেবে ২ কোটি টাকা নিয়ে ৬ মে রাতে তাকে রাজধানীর ৱ্যাডিসন হোটেলের সামনে তার বাবার কাছে ফেরত দেয়া হয়। এই অপহরণ চক্রের পাঁচ সদস্যকে রোববার ভোরে গ্রেফতার করেছে ৱ্যাব। তাদের কাছ থেকে ওই মুক্তিপণের এক কোটি ৮০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১১টি চেক বই উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি টাকা অপহরণকারীরা খরচ করে ফেলেছে। এই অপহরণ চক্রের তিন সদস্য শিশু আবিরের বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘টিএনজেড গ্রুপ অব কোম্পানির’ কর্মচারী। ৱ্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান রোববার বিকালে ৱ্যাব সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন। গ্রেফতারকৃতরা হল- চক্রের মূল হোতা মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, রেজাউল করিম, নজরুল ইসলাম, জহির উদ্দিন মো. বাবর ও শাহ মো. অলিউল্যা।
সংবাদ সম্মেলনে ৱ্যাবের ওই কর্মকর্তা জানান, শিশু আবির বাবা শাহাদত হোসেন শামীম টিএনজেড গ্রুপ অব কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার বাসা মহাখালী ডিওএইচএস এলাকায়। অপহরণ চক্রের মূল হোতা মিজানুর রহমান ওরফে মিজান টিএনজেড গ্রুপের বিপুল পরিমাণ টাকা ছিনতাইয়ের জন্য প্রায় এক বছর আগে কোম্পানির দুই কর্মচারীর সঙ্গে পরিকল্পনা করে। তারা হলেন- কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজারের গাড়ি চালক রেজাউল ও কোম্পানির ইলেক্ট্রেশিয়ান নজরুল। প্রায় ৫ মাস আগে গাড়িচালক রেজাউল মিজানকে বলেন, কোম্পানি একবারে বেশি টাকা বহন করে না। ফলে ছিনতাই করে বেশি টাকা পাওয়া যাবে না। বরং কোম্পানির মালিক শাহাদত হোসেন শামীমের একমাত্র ছেলে আবিরকে অপহরণ করে মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায় করা যাবে। এরপরই তারা আবিরকে অপহরণ করার পরিকল্পনা করতে থাকে। আবিরকে আটকে রাখার জন্য প্রায় চার মাস আগে অপহরণকারী চক্র পল্লবীতে একটি বাসা ভাড়া নেয়। ওই বাসায় মিজান থাকতেন। মাঝে-মধ্যে চক্রের অন্য সদস্যরা সেখানে গিয়ে আড্ডা ও অপহরণের কৌশল ঠিক করত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তাকে অপহরণের পরিকল্পনা করে তারা। ফলে হ্যান্ডকাফ, লাইট, খেলনা পিস্তলসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যবহৃত সরঞ্জাম সংগ্রহ করে তারা। অপহরণের আগে তারা মাথার চুলও ছোট করে। ৱ্যাবের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, অপহরণ চক্র নিয়মিত আবিরের ওপর নজর রাখত। আবির উত্তরার একটি মাদ্রাসার ছাত্র। চক্রের প্রধান মিজান ওই মাদ্রাসায় তার এক পরিচিতকে ভর্তিও করায় আবিরের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নেয়ার উদ্দেশে।