শিলংয়ে স্বামী-স্ত্রীর দেখা হচ্ছে আজ

স্টাফ রিপোর্টার: দীর্ঘদিন পর দেখা হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর। রোববার বিকেলে ভারতের ভিসা হাতে পেয়ে রাতেই কোলকাতার উদ্দেশে বিমানে ঢাকা ছাড়েন সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। রাত পৌনে ৯টায় এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে তিনি শিলংয়ের পথে কোলকাতায় পাড়ি জমান। রাতে তিনি সেখানেই অবস্থান করেন। আজ স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ১০ মিনিটে তিনি বিমানে গৌহাটি যাবেন। সেখান থেকে সড়কপথে যাবেন শিলংয়ে।

হাসিনা আহমেদের সাথে রয়েছেন সালাহ উদ্দিনের বোন জামাই মাহবুবুল কবির মুনমুন। রোববার রাত ৮টা ৫ মিনিটে গুলশানের বাসা থেকে শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হন তারা। প্রথমে সড়কপথে যাওয়ার প্রস্ততি থাকলেও শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতার কারণে বিমানপথে শিলং যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

দু মাসের বেশি সময় নিখোঁজ থাকার পর সোমবার ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে সন্ধান মেলে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদের। পরের দিন সেখানকার একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে টেলিফোনে সালাহ উদ্দিন আহমেদ স্ত্রীর সাথে কথা বলেন। স্বামীর সাথে কথা বলার পরপরই শিলংয়ে যেতে উদগ্রীব হয়ে ওঠেন তিনি। বুধবার হাসিনা আহমেদসহ পরিবারের পাঁচজন ভিসার জন্য আবেদন করেন। রোববার তিনজনকে ভিসা দেয়া হয় বলে জানা গেছে।

এদিকে অসুস্থ সালাহ উদ্দিন আহমেদকে দেখতে লন্ডন থেকে কোলকাতা হয়ে রোববার সকালে শিলং পৌঁছান গত সিটি নির্বাচনে ঢাকা উত্তরে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী তাবিথ আউয়াল। সেখানে অবস্থানরত বিএনপির সহদফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনিকে নিয়ে দুপুরেই সালাহ উদ্দিনের সাথে দেখা করেন তিনি। রোববার সড়কপথে শিলংয়ে যান তাবিথের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা নাজমুল হুদা রাজুসহ আরও কয়েকজন। তাবিথ আউয়াল বেশ কয়েক দিন শিলংয়ে অবস্থান করবেন বলে জানান রাজু। রোববার তাবিথ ও জনি ছাড়াও সালাহ উদ্দিনের সাথে দেখা করেছেন তার ভাতিজা সাফাওয়ানুল করিম ও হুমায়ুন আহমেদ নামে এক আত্মীয়।

বিএনপির একটি সূত্র জানায়, সালাহ উদ্দিনের চিকিৎসা এবং আইনি বিষয়গুলো তদারকি করতেই মূলত দলের হাইকমান্ড তাবিথ আউয়ালকে শিলংয়ে পাঠিয়েছে। তাবিথের বাবা বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুর সাথে সালাহ উদ্দিনের রয়েছে পারিবারিক সম্পর্ক। দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকার পর মঙ্গলবার স্ত্রী হাসিনা আহমেদের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময়ও সালাহ উদ্দিন আহমেদ তাবিথের বিষয়ে জানতে চান।

রোববার বিকেলে আবদুল লতিফ জনি জানান, সালাহ উদ্দিনের অসুস্থতা আরও বেড়েছে। পানি জমে তার পা ফুলে গেছে। কিডনি জটিলতার কারণে কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করছেন। রাতে খুব একটা ঘুমাতে পারছেন না। তিনি আরও জানান, কিডনি ও হার্টের টেস্ট রিপোর্টগুলো আজ পাওয়া যাবে। রিপোর্ট দেখে চিকিৎসকরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবেন।

জনি জানান, সালাহ উদ্দিন আহমেদ মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। মানসিক বিপর্যয়ের রেশ কাটিয়ে উঠতে পারছেন না। তিনি (সালাহ উদ্দিন) মানসিকভাবে সুস্থ আছেন- শুরুতে চিকিৎসকরা এমন কথা বললেও গত কয়েক দিনে তার মানসিক বিপর্যয় লক্ষ্য করা গেছে। অপহরণের পর প্রতিটি দিন কীভাবে কেটেছে, তা স্পষ্টভাবে মনে করতে পারছেন না তিনি। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তাই তার কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। কথা বলতে গিয়ে কেঁপে কেঁপে উঠছেন। বারবার হাত-পা নাড়াচড়া করছেন। কোনো কথা মনে রাখতে পারছেন না। একই কথা বারবার বলছেন। স্ত্রীর জন্য অপেক্ষা করছেন অধীর আগ্রহে। যারাই তাকে দেখতে যাচ্ছেন সবার কাছে জানতে চাচ্ছেন, হাসিনা (সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী) কখন আসবে।

জনি বলেন, হাসিনা আহমেদ আসার পরই স্থানীয় আইনজীবীদের সাথে কথা বলে কীভাবে মামলা মোকাবেলা করা যায়, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এরই মধ্যে কয়েকজন আইনজীবীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে বলেও জানান তিনি। এদিকে হাসপাতালের ছাড়পত্র না পাওয়ায় সালাহ উদ্দিন আহমেদকে আদালতে হাজির করা সম্ভব হচ্ছে না।

পুশব্যাক করা হতে পারে: এদিকে রোববার ভারতের ইংরেজি দৈনিক ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র এক খবরে বলা হয়েছে, সালাহ উদ্দিন আহমদকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক’ করা হতে পারে। ওই প্রতিবেদনে মেঘালয় পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল (ডিজিপি) রাজিব মেহতার বরাত দিয়ে বলা হয়, আদালত আদেশ দিলে সালাহ উদ্দিনকে ডাউকি সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মাধ্যমে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে। রাজিব মেহতা টাইমস অব ইন্ডিয়াকে আরও বলেন, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলে সালাহ উদ্দিনকে আইন অনুযায়ী আদালতে নিয়ে যাওয়া হবে। এর আগে একটি প্রতিবেদনে সালাহ উদ্দিনের সিঙ্গাপুরে যাওয়ার খবর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার এভাবে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আদালতই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি আরও বলেন, পুলিশ এখনও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি। কীভাবে তিনি কাগজপত্র ছাড়া ভারতে ঢুকলেন কিংবা কে বা কারা তাকে এখানে নিয়ে এলো- এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য তাকে নিজেদের হেফাজতে নিতে পারে পুলিশ।