মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ার উপকূল থেকে বাংলাদেশি উদ্ধারের সংবাদ শুনে আলমডাঙ্গার বিভিন্ন জনপদে কান্নার রোল

স্টাফ রিপোর্টার: আলমডাঙ্গার জনপদে এখন কান্নার রোল। থাইল্যান্ডের জঙ্গলে গণকবরে শ শ বাংলাদেশির লাশ, জঙ্গল থেকে মৃতপ্রায় ও মালেশিয়া-ইন্দোনেশিয়ার উপকুল থেকে বাংলাদেশি উদ্ধারের ঘটনায় পানিপথে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমানো আলমডাঙ্গা এলাকার বিপদগ্রস্তদের স্বজনেরা গভীর উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। তাদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে বাতাস।

জানা গেছে, আলমডাঙ্গার বণ্ডবিল, রোয়াকুলি, শেখপাড়া, ওসমানপুর, প্রাগপুর, ভাংবাড়িয়া, হাটবোয়ালিয়া, নগরবোয়ালিয়া, পার্শ্ববর্তী গাংনীর হেমায়েতপুর, রুয়েরকান্দি, আমতৈলসহ বিভিন্ন গ্রামের শ শ লোককে বিনা পাসপোর্ট ও ভিসায় পানিপথে মালয়েশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এদের বেশির ভাগই উঠতি বয়সী কিশোর। গাংনী উপজেলার হেমায়েতপুর, রুয়েরকান্দি, আমতৈল, আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়া, নগরবোয়ালিয়া, ভাংবাড়িয়া, শেখপাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামের শ শ লোক এভাবে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে হেমায়েতপুরের শুকুর আলীর ছেলে জাহিদের বিরুদ্ধে।

হাটবোয়ালিয়া এলাকার কয়েকজন জানিয়েছেন, পানিপথে অবৈধভাবে অনেকের সাথে মালয়েশিয়া পাড়ি জমিয়েছিলেন শেখপাড়ার জনৈক এক যুবক। থাইল্যান্ডে বেশ কয়েক মাস জেলখাটার পর তিনি ফিরে এসেছেন। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তারা এক সাথে ৫২৫ জন ছিলেন। পানিপথে যাওয়ার সময় সাগরেই মৃত্যু হয়েছে ৭৫ জনের। এছাড়া আলমডাঙ্গার নগরবোয়ালিয়ার ঠাণ্ডুর ছেলে রাশেদ, ইয়াকুবের ছেলে শাহ জামাল, গাংনীর হেমায়েতপুরের নিহাজ উদ্দীনের ছেলে কালু, রুয়েরকান্দির আয়ুব কালার ছেলে বাবলুকে পানিপথেই সমুদ্রে ফেলে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাশেদসহ একাধিক কিশোর খাবারের জন্য কান্নাকাটি করায় তাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। পানিপথে মালয়েশিয়া গমনকারী বণ্ডবিল গ্রামের ৬ ব্যক্তির কোনো সংবাদ না পেয়ে এমনিতেই তাদের পরিবার ছিলো উৎকণ্ঠিত। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে থাইল্যান্ডের গভীর জঙ্গলে গণকবর আবিষ্কার ও শ শ বাংলাদেশির লাশ উদ্ধারের সংবাদ দেখে তারা একেবারে ভেঙে পড়েছেন। পরে থাইল্যান্ডের জঙ্গল থেকে উদ্ধার হওয়া প্রায় শতাধিক মৃতপ্রায় ব্যক্তির মধ্যে বণ্ডবিলের একজন জীবিত আছে এ সংবাদ জানলেও ৬ জনে মধ্যে কোন ভাগ্যবান সে তা কেউ জানতে পারেননি।

বণ্ডবিল গ্রামের নূর আলীর ছেলে মিনহাজ আলী, মৃত শুকুর মণ্ডলের ঘরজামাই ফারুক হোসেন, ফজলুর ছেলে আনারুল, জুলমতের ছেলে আজম, নিয়ামত আলীর ছেলে হাসান ও ওহাব আলীর ছেলে সেন্টু। এ ৬ জনের মধ্যে ৫ জনই ভূমিহীন হতদরিদ্র। প্রায় সোয়া ১ মাস পূর্বে তারা পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই বাড়ির কাউকে না বলে দালালের খপ্পড়ে পড়ে পানিপথে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমায়। বাড়ি থেকে যাওয়ার পর তাদের কোনো সংবাদ পাননি পরিবার পরিজন। প্রাগপুরের প্রায় ২০ জন ছেলেকে পানিপথে বিদেশ নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে হায়দার আলীর ছেলে রসিক, হাতেম মণ্ডলের ছেলে বাবু, মৃত জিন্দার মণ্ডলের ছেলে আসান, মুসেমের ছেলে সাহেদ, তোয়াকেনের ছেলে রিপন, ছিয়ামত গাইনের ছেলে শুকনাল, মনাগাইনের ছেলে মোমিম, ইয়াকুব আলীর ছেলে লাল্টুসহ অনেকে। এদের মধ্যে ২-৩ জনের কোনো সংবাদ কেউ দিতে পারেনি। অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা আর বেঁচে নেই। এছাড়া পার্শ্ববর্তী ওসমানপুরের প্রায় ৩০ জন যুবককে পানিপথে বিদেশ নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এদের মধ্য রইচ উদ্দীনের ছেলে নজু, ফটিকের ছেলে তোতা, ঘোষের ছেলে শরিফ , ইব্রাহিম হাতির ছেলে টোকন (১৮), বজলু হাতির ছেলে সাহাবুল (২২), মৃত বিল্লাল হাতির ছেলে কুদ্দুস হাতি (৩৯), আবুল হাতির ছেলে মিনা হাতি (২৩), মারজুল আলীর ছেলে শরিফুল (২৫), আতি শেখের ছেলে মিনা শেখ (২৩), সমের শেখের ছেলে সেলিম শেখ (২৮), রুহুলের ছেলে সাকিল ফটিক (১৭), রেজাউল ফটিকের ছেলে কালাম ফটিক (১৭) ও সোহাগ। তোতা নামের এক যুবকসহ এদের অনেকেরই আর সন্ধান মেলেনি। হাটুভাঙ্গার আকিমুদ্দীন ওসমানপুরের আব্দুলসহ বেশ কয়েকজন দালাল এদের প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে গেছে বলে এলাকার অনেকেই অভিযোগ করেছেন।