নজরুল ইসলাম: চুয়াডাঙ্গা জেলার কৃষকেরা শীতকালীন ইরি ধানের দাম না পেয়ে ইরি মুগ ডালের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। মুগ ডালের বাম্পার ফলন ও দামা সন্তোষকজনক থাকায় কৃষকেরা খুশি। তবে ফলন্ত মুগ ডাল জমি থেকে তুলতে পাচ্ছে না লোকবল। বৈরি আবহাওয়া শুরু হবার আগেই জমি থেকে ফলন্ত মুগ ডাল ঘরে তুলতে না পারলে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছে চাষিকুল। মুগই একমাত্র ফসল যা শীতকালীন ফসল কাটার পর চাষ করা যায়। কিন্তু অন্য ডাল ফসল শুধু শীতকালেই চাষ করতে হয়। শীতকালে বৃহত্তর পরিসরে ধান ও শাকসবজির চাষাবাদের কারণে ডাল ফসলের আবাদের সুযোগ কম থাকে। এসব বিবেচনায় মুগই ডালই একমাত্র সম্ভাবনাময় ফসল।
জানা গেছে, শীতকালীন রোপণকৃত ধানের দাম না পেয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলার চাষিরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যাপকহারে করেছেন ইরি মুগ ডালের চাষ। অনুকুল আবহাওয়া থাকায় মুগ গাছে ফল ধরেছে প্রচুর। বাম্পার ফলনের আশা করছে মুগ চাষিরা। বর্তমান বাজার দরে চাষিকুলও খুশি। তবে ফলন্ত মুগ ডাল জমি থেকে ঘরে তুলতে খাচ্ছে হিমশিম। কারণ প্রয়োজনের তুলনায় কর্মজীবি লোকবল সংকট দেখা দিয়েছে। মুগ ডাল চাষ স্বল্পকালীন সময়ের চাষাবাদ হওয়ায় ধান কাটার সাথে সাথে করেছেন এ চাষ। শুধু চাষাবাদের জমিতেই না পতিত জমিও এসেছে এ চাষের আওতায়। বিশেষ করে দর্শনা কেরুজ চিনিকলে আওতায় ১০টি বাণিজ্যিক খামারের দেয়া খণ্ডকালীন লিজের শ শ একর জমি লিজ নিয়ে চাষিরা করেছে মুগ ডালের চাষ। সমস্যা দেখা দিয়েছে ফলন্ত মুগডাল ঘরে তোলা নিয়ে। কেজি প্রতি ১৫ টাকা করে তোলা খরচ দিয়েও লোকবল পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে প্রতিদিনই আকাশে দেখা দেয় কালো মেঘের ঘনঘটা। ফলন্ত মুগ ডাল বৃষ্টিতে ভিজলেই জমি থেকে ঘরে তোলা হবে দুষ্কর। মুগ ডাল এক সাথে অন্যান্য ফসলের ন্যায় পাকে না। পর্যায়ক্রমে পাকে এবং প্রতিদিনই তুলতে হয়। উপায় অন্ত না পেয়ে এ মুগ ডাল তোলার কাজে অংশ নিচ্ছে কর্মজীবী নারী, পুরষ, শিশু-কিশোরসহ অনেকেই। পিছিয়ে পড়া দরিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী এসব নারীরা মওসুমের ৩০ দিনে জন প্রতি প্রায় ৫-৬ হাজার টাকা উপার্জনে সক্ষম হবে। জেলার উৎপাদিত মুগডাল এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বড় ধরনের চাহিদা মেটাতে ভুমিকা রাখবে।
মুগচাষি আতিয়ার, মামুন, কামাল, দেলোয়ার, কাশেম, মতিয়ার বলেন, মুগডাল চাষে খরচ কম। প্রতিবিঘা জমিতে লিজের অর্থসহ ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা খরচ হয়। এ বছর বারিমুগ-২, বারিমুগ-৩, বারিমুগ-৪, বারিমুগ-৫, বিনামুগ-৬, বিনামুগ-৭, বিইউমুগ-১ এবং বিইউমুগ-২ জাতগুলো গ্রীষ্মকালে আবাদ করা যায়। এদের মধ্যে বারিমুগ-৫, বারিমুগ-৬, বিনামুগ-৫, বিনামুগ-৬ এবং বিনামুগ-৭ আবাদে লাভ বেশি। চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বিঘা প্রতি ৫-৬ মণ হারে ফলন হয়েছে। বর্তমান বাজারে এ ডাল ২৭ শ টাকা থেকে সাড়ে ২৮শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। উৎপাদন খরচ কম কিন্তু বিক্রয়মূল্য বেশি হওয়ায় এবং মাত্র দু মাসে খরিপ-১ মওসুমে এ শস্য ঘরে তোলা যায় বলে দিন দিন এ ডাল আবাদে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
পানি জমে থাকে না এ রকম সব ধরনের মাটিতেই মুগ ডালের আবাদ করা যায়। তবে নিষ্কাশিত দো-আঁশ মাটিতে এ ফসল ভালো জন্মে। এ সলকে কিছুটা খরা সহিষ্ণু ফসল বলা হয়ে থাকে। মুগ ডাল উজ্জ্বল রোদ এবং অপেক্ষাকৃত কম আর্দ্রতাপূর্ণ পরিবেশে ভালো জন্মে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত মুগ ডাল সহ্য করতে পারে না। তাই মুগ ডাল এমন সময় কৃষকেরা চাষ করে থাকে যাতে বর্ষা শুরুর আগেই ফসল ঘরে তোলা যায়। মুগডাল মানব শরীরে প্রচুর আয়রন, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেড জোগান দেয়।