কেশবপুরের এনামুলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম : ডান হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন

দামুড়হুদার খাঁপাড়ায় নারীঘটিত বিষয়ে সালি বৈঠকে জরিমানার টাকা না দেয়ার জের : কয়েক যুবকের নৃংশসতা

 

আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী রেফার্ড : মামলা দায়ের : পুলিশের অভিযানে তাৎক্ষণিক দুজন গ্রেফতার

 

বখতিয়ার হোসেন বকুল: দামুড়হুদার খাঁপাড়ায় নারীঘটিত বিষয়ে গ্রাম্য সালিস বৈঠকে ধার্যকৃত জরিমানার টাকা না দেয়ার জের ধরে কেশবপুরের মৃত এলাহী বক্সের ছেলে অভিযুক্ত এনামুলকে (৩২) ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে তার ডান হাতের কবজি। মাথা, চোয়াল, পিঠসহ সারাদেহ কুপিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করেছে খাঁ পাড়ার ৭ যুবক। তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনার সাথে জড়িত ৭ জনের মধ্যে দুজনকে গ্রেফতার করেছে। বাকিদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে চুয়াডাঙ্গা থেকে পুড়াপাড়া নেমে বাড়ি কেশবপুর ফেরার পথে খাঁপাড়াস্থ কুটিরপাড়া রাস্তার ওপর এনামুলকে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে স্থানীয় কয়েক যুবক। এ ঘটনায় আহত এনামুলের মা আবেদা বেগম বাদী হয়ে রাতেই দামুড়হুদা মডেল থানায় ৭ জনের নামে মামলা দায়ের করেছেন।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা সদরের খাঁপাড়ার কালুর স্ত্রী দু সন্তানের জননী ময়নার সাথে মাস দুয়েক আগে পার্শ্ববর্তী কেশবপুর গ্রামের মৃত এলাহী বক্সের ছেলে দু সন্তানের জনক এনামুলের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্প্রতি এনামুল ও ময়না উপজেলার তারানীপুর গ্রামের ইটভাটার অদুরে গোপনে কথাবলার সময় ওই এলাকার স্থানীয় লোকজন তাদের দুজনকে আটক করে। পরে এনামুল ও ময়নার স্বামীর পরিবারের লোকজন তাদেরকে ছাড়িয়ে নেয় এবং খাঁ পাড়ায় নিয়ে এসে সালিস বৈঠক বসায়। সালিস বৈঠকে এনামুলকে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু ওই জরিমানার টাকা এনামুল না দিয়ে ঘোরাতে থাকে। এরই জের ধরে গতকাল সোমবার সন্ধ্যার পর চুয়াডাঙ্গা থেকে রাজমিস্ত্রির (রডমিস্ত্রি) কাজ শেষে এনামুল তার নিজ গ্রাম কেশবপুরে ফিরছিলো। রাত সাড়ে ৮টার দিকে পুড়াপাড়া নামক স্থানে নেমে খাঁপাড়াস্থ কুটির পাড়ার রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে তাকে কুটির পাড়ার রাস্তার ওপর খাঁপাড়ার ৭ যুবক এনামুলের পথরোধ করে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এ সময় তার ডান হাতের কবজি থেকে কেটে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এছাড়া তার মাথা, চোয়াল, পিঠসহ সারাদেহ ধারালো অন্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়। পথচারীরা এনামুলকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গতকাল রাত আড়াইটার দিকের শেষ খবর এনামুল মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছিলো এবং তার বাঁচার আশা খুবই কম বলেও তার পরিবারের লোকজন জানান। তার পরিবারের বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি কামরুজ্জামান বলে, আমি বিষয়টি শোনার সাথে সাথে দ্রুত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ছুটে যাই এবং এনামুলের জবানবন্দি রেকর্ড করি। এ সময় এনামুল ঘটনার সাথে জড়িতদের নাম প্রকাশ করেন। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমি সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে খাঁপাড়ায় গ্রেফতার অভিযান শুরু করি এবং রাত ১২টার দিকে ঘটনার সাথে জড়িত ৭ জনের মধ্যে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে বলেও তিনি জানান। এ ঘটনায় আহত এনামুলের মা আবেদা বেগম বাদী হয়ে রাতেই দামুড়হুদা মডেল থানায় খাঁপাড়ার মৃত সোনাই খাঁর ছেলে শফি (৪৩), একই পাড়ার মৃত ফকির খাঁর ছেলে কালুসহ ৭ জনের নামে দায়ের করেন।