পাচারকৃতদের মধ্যে ২০-২৫ জনের হদিস নেই : অপকর্ম অকপটে স্বীকার করে সহযোগীদের সম্পর্কে তথ্য প্রদান
স্টাফ রিপোর্টার: পানি পথে মালয়েশিয়ায় চুয়াডাঙ্গা এলাকার মানবপাচার চক্রের মূল হোতা বিপ্লব হোসেন বিপুলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার সকাল ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ সদর উপজেলার ছোটশলুয়া গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মানবপাচারের কথা স্বীকার করে। তার পাচারকৃত চুয়াডাঙ্গা এলাকার ২০-২৫ জনের হদিস নেই বলেও জানিয়েছে বিপুল।
জানা গেছে, বিপ্লব হোসেন বিপুলের চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের ছোটশলুয়া, বেগমপুর, হিজলগাড়ি ও তিতুদাহসহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষকে পানিপথে বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে। যাদের মধ্যে থাইল্যান্ডের গহীন জঙ্গলে তিনজন নির্মম হত্যার শিকার হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন আরো ২০-২৫ জন। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ ইতোমধ্যেই এসব তথ্য পেয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ছোটশলুয়া গ্রামের জাকির হোসেনের ছেলে বিপ্লব হোসেন বিপুল দীর্ঘদীন ধরে নিরপদে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় ভালো চাকরির প্রলোভনে এলাকার যুবসমাজকে প্রভাবিত করে। কাড়ি কাড়ি টাকা নিয়ে অবৈধভাবে পানিপথে পাচার করে অপহরকচক্রের হাতে তুলে দিতে থাকে। তার প্রলোভনে অপহৃত বহু যুবকের পরিবারের সদস্যরা পুলিশে নালিশ করে। থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়ার সীমান্তের গহীন জঙ্গল থেকে একের পর এক বাংলাদেশির মৃতদেহসহ মৃতপ্রায় মানুষ উদ্ধারে বিশ্বজুড়ে আলোচনার ঝড় ওঠে। জাতিসঙ্ঘও উদ্বেগ প্রকাশ করে। বাংলাদেশ সরকার অবৈধভাবে বিদেশে মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের নিদের্শনা দেয়। এরই কয়েক দিনের মাথায় গতকাল চুয়াডাঙ্গা এলাকার মানবপাচারীদের অন্যতম হোতা বিপ্লব হোসেন বিপুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ গ্রেফতার অভিযানে সরাসরি তদারক করেন পুলিশ সুপার। তত্ত্বাবধানে ছিলেন সহকারী পুলিশ সুপার সার্কেল।
অভিযানে শেষে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ লিয়াকত হোসেন জানান, সম্প্রতি মানবপাচার নিয়ে সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হলে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ পাচারকারীদের ধরতে অনুসন্ধান শুরু করে। তাদের ধরতে মোতায়েন করা হয় সোর্স। গতকাল রোববার গোপন সংবাদে জানা যায় বিপুল ছোটশলুয়ায় তার নিজ গ্রামে অবস্থান করছে। এ খবরের পর পুলিশ সুপারের নির্দেশে সরোজগঞ্জ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই সেকেন্দোর আলী, তিতুদহ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুল কাইয়ূম ও বেগমপুর পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই নাসির উদ্দীনসহ সঙ্গীয় যৌথ অভিযান চালিয়ে এ চক্রের মূল হোতা বিপুলকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিপুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। চুয়াডাঙ্গার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সুফি উল্লাহ জানান, গ্রেফতারের পর বিপুল ৩০ জনকে পাচারের কথা স্বীকার করেছে। কাদের মাধ্যমে কীভাবে পানি পথে অবৈধভাবে বিদেশে নেয়া হতো সে সম্পর্কেও তথ্য দিয়ে তার সহযোগীদের নাম ঠিকানাও দিয়েছে সে। বিপুলের অন্য সহযোগীদের গ্রেফতারে চারটি উপজেলায় অভিযান চলছে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা। গতকালই তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।