পাচারকারীদের বিচারের পদক্ষেপ নিতে হবে

সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর নাম করে প্রতিবছর কী পরিমাণ বেকার তরুণকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয় তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান কারো কাছে নেই। বাংলাদেশের প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো যাই বলুক না কেন, এই অবৈধ ব্যবসা দিনদিনই ফুলে-ফেঁপে উঠছে। আর তার কিছুটা প্রমাণ পাওয়া যায় জাতিসংঘের সর্বশেষ তথ্যে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) শুক্রবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই ২৫ হাজার বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা মানবপাচারের শিকার হয়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ সংখ্যা দ্বিগুণ। তাদের মধ্যে এ বছরের প্রথম তিন মাসে মারা গেছে ৩০০ জন। আর গত বছরের অক্টোবর থেকে মৃতের সংখ্যা ৬২০। তাদের বেশির ভাগই মারা গেছে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় ও নির্যাতনে। গত সপ্তাহে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে যে ৩২টি মৃতদেহ পাওয়া যায় সেগুলোও বাংলাদেশিদের বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশের তরুণদের এটাই কি নিয়তি! মালয়েশিয়ার জঙ্গলেও এ রকম বহু গণকবর থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তা ছাড়া নৌকা ডুবে মৃত্যু তো আছেই।

সম্প্রতি থাইল্যান্ডের প্রশাসন মানবপাচার রোধের উদ্যোগ নেয়ায় মালয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী সে দেশের জঙ্গলে একের পর এক গণকবর চিহ্নিত হতে থাকে। এর মধ্যে শতাধিক জীবিত ব্যক্তিকেও উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের প্রায় সবাই রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি বলে জানা গেছে। থাই পুলিশ মানবপাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে স্থানীয় একজন মেয়রসহ বেশ কিছু পুলিশ কর্মকর্তাকেও গ্রেফতার করেছে। কিন্তু আমাদের দেশে এমন উদ্যোগ কোথায়? অভিযোগ রয়েছে, কক্সবাজার জেলায় পুলিশসহ প্রশাসনের কিছুসংখ্যক লোভী কর্মকর্তার যোগসাজশে প্রায় প্রকাশ্যেই চলে এই অবৈধ ব্যবসা। জড়িত রয়েছেন স্থানীয় কিছু রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিও। অভিযোগ দীর্ঘদিনের হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয় না। তা না করে মাঝেমধ্যে সারাদেশ থেকে আসা দালালদের প্রতারণার শিকার কিছু বেকার তরুণকে আটক বা উদ্ধারের নাটক করে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে কি? এদিকে থাইল্যান্ডে শখানেক গণকবর পাওয়ার খবরে বাংলাদেশের গণমাধ্যমেও ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। আর তাতে বাংলাদেশের পুলিশও কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে। মানবপাচারকারীদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে। আর অভিযানের শুরুতেই শুক্রবার ভোররাতে তালিকাভুক্ত তিন পাচারকারী বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। এখানেও নানা রকম সন্দেহের কথা শোনা যাচ্ছে। কেউ কেউ ধারণা করছেন, তারা ধরা পড়লে এই অবৈধ ব্যবসার সাথে প্রশাসনের কারা কারা জড়িত সেই তথ্য বেরিয়ে যেতে পারে বলেই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। আমরা এ ব্যাপারে পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপযুক্ত পদক্ষেপ আশা করছি।

মানবপাচার যেমন বাংলাদেশের সমস্যা, তেমনি একটি আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক সমস্যাও। জানা গেছে, মানবপাচার রোধে যৌথ কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে থাইল্যান্ড সরকার ত্রিদেশীয় (থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও মিয়ানমার) বৈঠক আহ্বান করেছে। বাংলাদেশও সেই উদ্যোগের সাথে জড়িত হতে পারে। পাশাপাশি দেশের ভেতরে পাচারের সাথে জড়িত প্রত্যেককে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। যেকোনো মূল্যে এই ভয়ঙ্কর প্রবণতা থামাতে হবে।

Leave a comment