ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি হলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিন নারী

মাথাভাঙ্গা মনিটর: ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে জয় পেয়েছেন তিন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নারী। দ্বিতীয়বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন রুশনারা আলী। প্রথমবারেই নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক। এছাড়া জয় পেয়েছেন আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ড. রুপা হক। তিনজনই লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নির্বাচিত হওয়ায় রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ তাদেরকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

এদিকে লেবার পার্টির ব্যাপক ভরাডুবির মধ্যেও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিন নারীর বিজয়ে আনন্দের ঢেউ লেগেছে যুক্তরাজ্যের বাঙালি কমিউনিটিতে। ব্রিটেনে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই নির্বাচনে তারা জয় পেলেন। এবারের নির্বাচনে ১১ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি পদে লড়েছিলেন। এর মধ্যে লেবার থেকে সাতজন, লিব ডেম থেকে তিনজন এবং কনজারভেটিভ থেকে একজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সকল জরিপ সংস্থা মূলধারার বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাসেই বলা হয়েছিলো যে জয় পাবেন এ তিনজন।

রুশনারা আলী: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় জন্মনেয়া রুশনারা আলী ২০১০ সালে পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন-বো সংসদীয় আসন থেকে লেবার পার্টি থেকে প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন। এবারও একই দল ও আসন থেকে বিপুল ভোটে দ্বিতীয়বার জয়ী হলেন। প্রায় ৮০ হাজার ভোটারের এ আসনে তিনি এবার পেয়েছেন ৩২ হাজার ৩৮৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজাভেটিভ দলের ম্যাথু স্মিথ পেয়েছেন ৮ হাজার ৭০ ভোট। ভোট কাস্ট হয়েছে ৬৩ দশমিক ৯ শতাংশ। গত বছর তিনি ১১ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছিলেন। চল্লিশ বছর বয়সী রুশনারা গত মেয়াদে তিনি পার্লামেন্টে বিরোধী দলের শিক্ষা ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক ছায়া মন্ত্রী ছিলেন। পরে অবশ্য তিনি ইরাক প্রশ্নে লেবার দল সমর্থন দেয়ায় এ পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেছিলেন।  তিনি পার্লামেন্টারি ট্রেজারি সিলেক্ট কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন-রাজনীতি-অর্থনীতিতে উচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

টিউলিপ সিদ্দিক: এ নির্বাচনে বাংলাদেশি কমিউনিটিসহ মূলধারার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্রী টিউলিপ সিদ্দিক জয়ী হয়েছেন লন্ডনের অভিজাত এলাকা হ্যাম্পস্টেড-কিলবার্ন আসন থেকে। এ আসনে ৮০ হাজার ভোটার রয়েছেন। ৬৭ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। তিনি পেয়েছেন ২৩ হাজার ৯৭৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছেন ২২ হাজার ৮৩৯ ভোট। এ আসনটি বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ব্রিটিশ সমাজে বিবেচিত। এখানে অনেক দেশের ভিভিআইপিদের আবাসস্থল। গতকাল সরেজমিনে কিংসগেট কমিউনিটি সেন্টার পোলিন স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় আন্তর্জাতিক টেলিভিশন সিএনএন’র একটি ইউনিট সার্বক্ষণিক নিয়োজিত ছিলো। সিএনএন’র সিনিয়র ইন্টারন্যাশনাল করেসপন্ডেন্ট নিক রবার্টসন বললেন, তিনি বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের বিষয় বেশ অবগত আছেন। সে সূত্রে টিউলিপকেও জানেন। উল্লেখ্য, টিউলিপ ২০১০ সালে একই এলাকা থেকে স্থানীয় কাউন্সিলের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তিনি পড়ালেখা করেছেন লন্ডনের বিখ্যাত দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এছাড়া তার কর্মজীবনেও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার গত নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে তিনি অংশ নেন।

রুপা হক: লন্ডনের অন্যতম আলোচিত আসন ইলিং সেন্ট্রাল-অ্যাকটন থেকে ড. রুপা হক লেবার পার্টি থেকে বিজয় লাভ করেছেন। গতবার এ আসনটি কনজারভেটিভ প্রার্থী জয়ী হন। লেবার পার্টি কঠিন সঙ্কটের মধ্যেও রুপা হক তা পুনরুদ্ধার করলেন। তিনি ২২ হাজার ২ ভোট পেয়েছেন। নিকটতম প্রার্থী পেয়েছেন ২১ হাজার ৭২৮ ভোট। তিনি ১৯৭২ সালে লন্ডনের ইলিংয়ে এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। রুপা হক পেশায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।