ঝিনাইদহে ধান কাটা শ্রমিক নিয়ে বিপাকে চাষিরা

শিপলু জামান: ঝিনাইদহ জেলার খাদ্যভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত কালীগঞ্জ উপজেলায় এবার ধান কাটা মাড়াই কাজের শ্রমিক সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। আবহাওয়া খরাপ ও ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে ধানকাটা নিয়ে বিপাকে জেলার চাষিরা। পুরুষ শ্রমিকের অবর্তমানে অতিরিক্ত বেতন লাভের আশায় ধান কাটা কাজে নারী শ্রমিকের উপস্থিতি ও কদর বেশ বেড়েছে। চলতি বছরের আবহাওয়া কৃষকদের অনুকূলে থাকায় এ উপজেলায় আমন ধানের চাষাবাদ খুব ভালো হয়েছে। এ বছর ধান ঘরে তোলা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।

স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবারে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে মোট ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি ধানের চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ছিলো। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় ১৭ হাজার ১৮৫ হেক্টর জমিতে জাতের আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে। বাজারে ইরি ধানের বর্তমান বাজারমূল্য কম থাকায় ধান কাটা-মাড়াই কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের প্রাপ্ত মজুরিতে পোশায় না।

এলাকার শ্রমিকরা আমন ধান কাটা মাড়াই কাজ বাদ দিয়ে অধিক বেতনের আশায় দলে দলে ছুটছে কুষ্টিয়া, নাটোর ,ফরিদপুর, মেহেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ফলে ধান কাটা মাড়াই কাজের জন্য শ্রমিক সঙ্কট প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একজন কৃষিশ্রমিক চলতি মরসুমে সারা দিন ধানকাটা মাড়াই কাজ করে যে পরিমাণের পারিশ্রমিক হিসেবে ধান পেয়ে থাকেন তার দ্বিগুণ বেতন পান রবি শস্যর জমিতে কাজ করে।

এদিকে ধানকাটার উপযুক্ত হাজার হাজার একর জমির পাকা ধান প্রয়োজনীয় লোকজনের অভাবে মাঠে ফেলে রেখে চরম অশান্তির মধ্যে দিনাতিপাত করছে উপজেলার আমন ধানচাষিরা। মাঠের ফসল ঘরে তোলার চিন্তায় চাষিরা এখন খুব ব্যস্ত। এদিকে পুরুষ শ্রমিকের সঙ্কট থাকায় দু-পয়সা বেশি উপার্জনের কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে নারী শ্রমিকরা। উপজেলা সদরের অদূরে বিষয়খালী মাঠে ধান কাটার কাজে নিয়োজিত নারী শ্রমিক কবিতা, নাছরিন, ফুলবানু ও কাজল জানান, প্রতিদিন ২-৩শ টাকা করে তারা উপার্জন করেন।

শ্রমিকের খোঁজে প্রতি দিন তাদের বাড়িতে চাষিরা আসছে। ফয়লা গ্রামের কৃষক জব্বার আলী পাইকপাড়া গ্রামের আশরাফ আলী, মানিরুল ইসলামসহ অনেকে জানান, যে শ্রমিক সঙ্কটের কারণে এবার সময়মতো আমন ধান কাটতে না পারায় গম, সরিষাসহ সকল প্রকার রবি শস্য চাষাবাদে বিলম্ব হবে। ফলে আগামী রবি মরসুমে শস্য উৎপাদন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অপরদিকে জমির পাকা ধান সময় মতো কাটতে না পারলে ধানের শীষ ঝড়ে পড়ে কৃষকের তীর মাত্রা আরো বেড়ে যাবে বলেও অনেকে মনে করছেন। সময়মতো আমন ধান ঘরে তুলতে না পারা ও রবিশস্য চাষাবাদ করতে না পারায় উপজেলার কৃষককূল চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছে। এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ কৃষি কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন প্রতিবেদকে জানান, কৃষকদের ধান কাটা ব্যাপারে আধুনিক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করা হয়েছে।