প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সাতগাড়ির আরিফ

দর্শনা ক্যাম্প পুলিশের বিরুদ্ধে কোটি টাকা মূল্যমানের ধাতব মুদ্রা ছিনতাইয়ের অভিযোগ

 

 

স্টাফ রিপোর্টার: প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সাতগাড়ির আরিফ। তিনি রাতারাতি কোটিপতি হতে গিয়ে দোকানপাটসহ ব্যবসা বাণিজ্য হারিয়ে পথে বসেছেন। তার অভিযোগ দর্শনা তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশই তার কোটিপতি হওয়ার অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোটি টাকা মূল্যের কথিত ধাতব মুদ্রাটি এএসআই শাহীন ও কনস্টেবল রব ছিনতাই করে নিয়েছেন। তবে এ প্রতারণার হোতা ঝিনাইদহের শাহীনও গাঢাকা দিয়েছেন।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সাতগাড়ির আরিফ একজন ভুট্টা ব্যবসায়ী। চুয়াডাঙ্গার ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আরিফ হার্ডওয়ার নামে তার একটি দোকানও আছে। সম্প্রতি ঝিনাইদহে বাড়ি পরিচয় দিয়ে শাহীন নামের একজন তার সাথে খাতির জমিয়ে তোলেন। এরপরই প্রতারণার ফাঁদ পাতে। একটি ধাতব মুদ্রার মূল্য কয়েক কোটি টাকা বলে তিনি আরিফকে জানান। বলেন এ ধরনের একটি মুদ্রা দর্শনার নিকটবর্তী বড়দুধপাতিলার কোমল বাবুর কাছে আছে বলে শুনেছি। যদি মুদ্রাটি আসল হয়, তাহলে ঢাকার এক পার্টির কাছে ৩ কোটি টাকায় বিক্রি করা যাবে। কোটি টাকার স্বপ্নে বিভোর হয়ে ওঠেন আরিফ। কয়েকদিন আগে আরিফকে সাথে নিয়ে মুদ্রাটি দেখার জন্য শাহীন যান। বড় দুধপাতিলার কোমল বাবু একটি বাগানে গিয়ে ধাতব মুদ্রাটি দেখান। শাহীন ইঙ্গিত দিয়ে আরিফকে জানান, হ্যা এটাই আসল মুদ্রা। এটি এখান থেকে কিনে নিয়ে গেলেই আমরা কয়েক কোটি টাকায় বিক্রি করতে পারবো। তবে তিনি জানান, ঢাকার ওই ক্রেতারা চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বাইরে গিয়ে কিনবেন না। এখান থেকে মুদ্রাটি কিনে নিয়ে চুয়াডাঙ্গায় যেতে হবে। প্রতারণার টোপ গিলে ফেলেন আরিফ। কোমল বাবুর সাথে মুদ্রাটির দামদর হয় ১৭ লাখ টাকা। প্রথমে নিজের ব্যবসার টাকা-পয়সা এবং ধারকর্জ করে ৬ লাখ টাকা দেন সাতগাড়ির আরিফ। এরপর গত বুধবার আরো এক লাখ মোট ৭ লাখ টাকা দিয়ে আরিফ মুদ্রাটি কোমল বাবুর কাছ থেকে নেন। কথা ছিলো বাকি ১০ লাখ আগামী রোববারের মধ্যে দেবেন। আরিফ গতকাল শুক্রবার মাথাভাঙ্গাকে জানান, বুধবার দুপুরে ৫৪ গ্রাম ওজনের ধাতব মুদ্রাটি পকেটে নিয়ে একটি মোটরসাইকেলের পেছনে ওঠেন। পরে তিনি দামুড়হুদার লোকনাথপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে নেমে পড়েন। কিছুক্ষণ পরই শাদাপোশাকে দুজন তাকে জোরপূর্বক একটি মোটরসাইকেলের পেছনে নিয়ে দর্শনার নিকটবর্তী নতুন ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কাছে নিয়ে যান। আরিফ জানান, তাদের একজন দর্শনা ক্যাম্পের এএসআই শাহীন ও কনস্টেবল রব। তারা পাশের একটি আমবাগানে নিয়ে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে আমার কাছ থেকে ধাতব মুদ্রাটি কেড়ে নিয়ে চলে যান। পরক্ষণে আমি পয়সাটি উদ্ধারের জন্য ফাঁড়ির এসআই জিয়ার কাছে যাই এবং ঘটনা খুলে বলি। তিনিও আমার কথায় কান না দিয়ে চলে যেতে বলেন। পরে ক্যাম্প ইনচার্জ মিজানকেও বিষয়টি জানানো হয়। প্রতারণার শিকার আরিফ জানান, ধাতব মুদ্রাটিতে ইংরেজিতে লেখা আছে ইউনাইটেড স্টেট অব আমেরিকা। মাঝে হোইটহাউসের ছবি আছে। ১ ডলার মানের মুদ্রাটি ১৭৮৯ সালের। এ ধরনের মুদ্রার একটি ছবি দেখান আরিফ। আরিফ বলেন প্রথমে দর্শনা পুলিশ মুদ্রাটি ফেরত দিতে চাইলেও পরে অস্বীকার করে। এ ব্যাপারে গতরাতে এসআই মিজানের কাছে মোবাইলফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন গত দু দিন ধরে বিষয়টি নিয়ে খুব যন্ত্রণায় আছি। একের পর এক ফোনে জবাব দিতে হচ্ছে। কিন্তু এ ধরনের কোনো ঘটনা আমার ক্যাম্পের পুলিশ ঘটনায়নি। তাছাড়া এএসআই শাহীন ও কনস্টেবল কদিন ধরে পরীক্ষার ডিউটি করছে। কেউ কেউ বলেছেন, এ ধরনের একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে সরলসোজা মানুষের কাছে প্রতারণা করে আসছে। আসল হোতাদের খুঁজে বের করা দরকার। সেই সাথে যাতে আরিফের ৭ লাখ টাকা উদ্ধার হয় সে ব্যাপারেও পুলিশের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। আরিফ বলেছেন, মুদ্রাটি কেনার জন্য ধার বাকি করে ৭ লাখ টাকা জোগাড় করেছিলাম। পাওনাদারেরা দোকানপাট লিখে নিয়েছে। কেউ কেউ পাওনা টাকা চাচ্ছে। এখন আমার পকেটে রিকশাভাড়াটাও নেই। পুলিশ কেন আমার মুদ্রাটি ছিনিয়ে নিলো।