দর্শনা পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে সাম্ভাব্য প্রার্থীরা অবস্থান মজবুত করতে ব্যস্ত

সবকটি রাজনৈতিক দলের একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও দলের সিদ্ধান্তেই বাইরে কেউ নন

 

হারুন রাজু/হানিফ মণ্ড: দেশের জেলা ও উপজেলা ছাড়া একমাত্র পৌরসভা দর্শনা। দর্শনার গুরুত্বের কথা ভেবেই ১৯৯২ সালে তৎকালীন দর্শনা ইউনিয়নকে বিভক্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয় দর্শনা পৌরসভা। আলাদাভাবে গঠন করা পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়ন পরিষদ। ১৮-২০টি মহল্লা নিয়ে গঠিত দর্শনা পৌরসভা বিভিন্নভাবে ঐহিত্য মণ্ডিত। দর্শনা পৌরসভা প্রতিষ্ঠার প্রায় দু যুগ পার হতে চলেছে। এরই মধ্যে দর্শনা পৌরসভাকে ২য় শ্রেণিতে উন্নিত করা হয়েছে। ২য় শ্রেণির পৌরসভা হলেও সেবার মান ৪র্থ শ্রেণির পৌরসভার চেয়েও কম। বারবার ক্ষমতার সিংহাসন বদল হয়েছে। পৌরবাসীর ভাগ্য বদলায়নি। ন্যায্য সুবিধা থেকে পৌরবাসী বারবার বঞ্চিত হচ্ছে। পৌর এলাকার উন্নয়ন না হলেও পৌর ভবনটি চকচকে করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলার সীমান্ত ঘেঁষা ঐতিহ্যবাহী মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে একমাত্র শিল্প শহর দর্শনা। এ শহরের রয়েছে এশিয়া মহাদেশের ২য় বৃহত্তম কেরুজ চিনিকল ও ডিস্টিলারি কমপ্লেক্স, একটি আন্তর্জাতিকসহ দুটি রেলস্টেশন, স্থলবন্দর ইয়ার্ড, কাস্টসম সার্কেল কার্যালয়, চেকপোস্ট, সরকারি কলেজ, উপজেলা পশুহাসপাতাল, পৌর মার্কেট, দুটি বাজার, পুলিশ তদন্তকেন্দ্র, সরকারি বেসরকারি অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। ঐতিহাসিক নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে দর্শনা মেমনগরে নিল কুঠির, মেমনগর বিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ইত্যাদি। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের ক্ষেতেও দর্শনার গুরুত্ব রয়েছে অপরিসীম। সবমিলিয়ে জেলার মধ্যে দর্শনার গুরুত্বের কোনো কমতি নেই। এ গুরুত্বের কথা ভেবেই তৎকালীন সমাজসেবকরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পৌরসভায় উন্নিত করেন দর্শনাকে। ১৯৯১ সালের ২৭ নভেম্বর দর্শনাকে পৌরসভায় রূপ দেয়া হয়। পৌরসভার কার্যক্রম শুরু করা হয় পরের বছর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে। প্রতিষ্ঠাকালীন পৌর প্রসাশকের দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন দামুড়হুদা থানার নির্বাহী কর্মকর্তা মোসলেহ উদ্দিন। ১৯৯২ সালে অনুষ্ঠিত হয় পৌরসভার প্রথম নির্বাচন। এ নির্বাচনে প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন প্রয়াত আক্তারুল ইসলাম আক্তার। ১৯৯৭ সালে পৌরসভার ২য় নির্বাচনে রদবদল হয়। চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন মতিয়ার রহমান। তিনি পরপর দু’বার পৌর চেয়ারম্যান ও মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে মতিয়ার রহমানকে পরাজিত করে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন বর্তমান মেয়র মহিদুল ইসলাম। ৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিতরা শপথ গ্রহণ করেন। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই খানেকটা অগেভাগেই নিবর প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন সাম্ভাব্য প্রার্থীরা। এরই মধ্যে জামায়াতে ইসলামী দলের পক্ষ থেকে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেও অন্য রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে কারো নাম ঘোষণা করা হয়নি। বৃহত্তর দুটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও সবাই দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। শেষ পর্যন্ত কে কে দলের টিকেট নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তা সময়ের অপেক্ষামাত্র।

আগামী নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা মহিদুল ইসলাম, সাবেক মেয়র, দর্শনা পৌর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান, আ.লীগ নেতা আলী মুনসুর বাবু, যুবলীগ নেতা দর্শনা রেল বাজার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাবির হোসেন মিকা, দর্শনা পৌর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক মহিদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক, যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাহারুল ইসলাম মাস্টার, জামায়াতের ঘোষিত প্রার্থী জামায়াত নেতা আশকার আলী। আ.লীগ ও বিএনপির সাম্ভাব্য প্রার্থীরা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন না বলে জানানো হয়েছে। সাবেক মেয়র মতিয়ার রহমান বলেছেন, অবশ্যই দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। বিশ্বাস করি দল থেকে আমাকেই মনোনয়ন দেবে। কারণ পৌরবাসী আমাকে ভালোবাসে। আলী মুনসুর বাবু নিজেকে প্রার্থী হিসেবে স্বীকার না করলেও নেতাকর্মীদের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে তার নাম। এক্ষেত্রে আ.লীগ আলী মুনসুর বাবু বলেছেন, নেতাকর্মী ও দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেবে তাকেই মেনে নেবো। বিএনপি নেতা বর্তমান মেয়র মহিদুল ইসলাম দলের মনোনয়নের আশায় আছেন। সেই সাথে দলের মনোনয়নের প্রত্যাশায় রয়েছেন, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মহিদুল ইসলাম ও সাবেক যুবদল নেতা নাহারুল ইসলাম মাস্টার। এদিকে যুবলীগ নেতা সাবির হোসেন মিকা বলেছেন, আমি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী।