আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই

সহিংসতা, নাশকতা ঘুরেফিরেই জনজীবনে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। পুড়িয়ে হত্যার মতো উপর্যুপরি ঘটনাও আমাদের দেখতে হয়েছে দিনের পর দিন। ২০১৩ সালে আমরা দেখেছিলাম, ২০১৫ সালের প্রথম তিন মাসও দেখেছি রাজনৈতিক সহিংসতা কতো বীভৎস হতে পারে। শুধু রাজনীতি কেন, দাবি আদায়ের নামে, কখনো বা তুচ্ছ অজুহাতে কোনো কোনো মহল ব্যক্তিক, প্রাতিষ্ঠানিক বা রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি করে থাকে। গত দু বছরে সহিংসতার মামলা হয় পাঁচ হাজার ৫১৭টি; এ সংখ্যাই বলে দেয় পরিস্থিতির কী অবনতি হয়েছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে। আমাদের বিচারিক সুবিধাদি সীমিত বলে সহিংসতার মামলাগুলো বোঝার ওপর শাকের আঁটি হিসেবেও দেখা দেয়। ফলে বিশেষ ট্রাইবুন্যাল করে সহিংসতার মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয় এবং শেষ পর্যন্ত সাত বিভাগে একটি করে ‘সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল’ গঠিত হচ্ছে। সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।

রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে স্মরণকালের ভয়াবহ ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞ বিশ্ববাসী গত জানুয়ারির শুরু থেকে প্রত্যক্ষ করে। বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা হরতাল-অবরোধে পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারায় শতাধিক নিরীহ সাধারণ মানুষ। তাদের স্বজনদের অশ্রু কোনো দিনই কি শুকাবে? দগ্ধ হয়ে আজও পোড়া ঘায়ের যন্ত্রণা নিয়ে কাতরাচ্ছে যেসব মানুষ, তাদের সান্ত্বনা দেয়ারও কি ভাষা আছে? এমন নারকীয় যজ্ঞের বিচার দ্রুত শুরু করাই শুধু নয়, শাস্তিও হতে হবে দৃষ্টান্তমূলক- যাতে পুড়িয়ে মারার মতো পাশবিক কাজের স্পর্ধা আর কারো না হয়। ট্রাইব্যুনালে নাশকতার মামলার বিচারের উদ্যোগটি কিছুটা সতর্কতারও দাবি রাখে বৈকি। নাশকতার মামলার আসামিদের সিংহভাগই কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা, কর্মী বা সমর্থক। এ নিয়ে কোনো ধরনের রাজনীতি নিরপরাধ মানুষের হয়রানিই শুধু বাড়াবে না, ব্যাহত হবে মহৎ উদ্যোগটির উদ্দেশ্য। অপরাধমুক্ত, সহিংসতাবর্জিত সমাজ গঠনের পূর্বশর্তগুলোর অন্যতম হচ্ছে আইনের শাসন এবং এ জন্য আইনি প্রক্রিয়াকে অবশ্যই তার গতিতে চলতে দিতে হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পথ ধরেই সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হয়; কিন্তু সে শাস্তিকে হতে হয় ন্যায়ভিত্তিক।

ট্রাইব্যুনাল গঠনের সিদ্ধান্তটি তখনই সমাজের জন্য সুফল বয়ে আনবে যখন বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনার লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা প্রদান রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব এবং এ দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে যেকোনো উদ্যোগকেই মানুষ স্বাগত জানাবে।