নড়াইলে স্ত্রীকে গাছে বেঁধে সেনা সদস্যের নির্যাতন

স্টাফ রিপোর্টার: মধ্যযুগীয় বর্বরতার কথা বলে যে ধরনের নৃশংসতাকে বোঝানো হয়, নড়াইলের গৃহবধূ ববিতার ওপর চালানো নির্যাতনের ঘটনা কি তার চেয়ে কিছু কম নির্মম? এক গ্রাম মানুষের চোখের সামনে তাকে গাছের সাথে বেঁধে অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকরা। গুরুতর আহত ববিতা এখন নড়াইল সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবু তার যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাওয়া মুখ শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মন গলায় না, কারও চোখ ভেজায় না।

অসহায় নারীর ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতনের এ ঘটনাটি ঘটেছে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের শালবরাত গ্রামে। ঘটনার ৫ দিন পর মঙ্গলবার রাতে ববিতার মা বাদী হয়ে লোহাগড়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। পুলিশ ইতোমধ্যে ববিতার ভাসুর হাসান শেখকে গ্রেফতার করেছে। বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইলের পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শালবরাত গ্রামের ভূষিমালের ব্যবসায়ী ছালাম শেখের ছেলে সেনাসদস্য শফিকুল শেখের সাথে পাশের এড়েন্দা গ্রামের ইসমাইল মোল্লার মেয়ে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী ববিতার (২১) প্রেমসম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর গোপনে তারা বিয়েও করে। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই ববিতার স্বামী সিলেট সেনানিবাসে কর্মরত সেনা সদস্য শফিকুল শেখ ও তার শাশুড়ি তাকে ঘরে তুলে না নিতে টালবাহানা শুরু করে। ববিতা একপর্যায়ে হতাশ হয়ে আদালতের শরণাপন্ন হন। এতে শফিকুল ও তার পরিবারের সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

ববিতার মা খাদিজা বেগম জানান, ২৯ এপ্রিল শফিকুল ছুটিতে বাড়ি এসে ববিতাকে তাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য খবর দেয়। ববিতা স্বামীর বাড়িতে যায়। কিন্তু পরদিন সকাল ৭টার দিকে তার স্বামী শফিকুল, ভাসুর হাসান শেখ, শ্বশুর ছালাম শেখ, শাশুড়ি জিরিন আক্তার, চাচাশ্বশুর কালাম শেখ, প্রতিবেশী নান্নু শেখ ও কাশিপুর ইউপি আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আজিজুর রহমান আরজু মিলে ববিতাকে গাছের সাথে বেঁধে বেধড়ক লাঠিপেটা করে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে পাশবিক নির্যাতন চালানোর একপর্যায়ে ববিতা অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে শফিকুলের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মা ও অন্য সদস্যদের পাওয়া যায়নি। তবে বাড়িতে থাকা শফিকুলের ভাবী রুনা খানম জানান, সবাই বেড়াতে গেছে। অন্যদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুর রহমান আরজু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, একটি মহল ববিতার সাথে বিয়ের নামে ভুয়া কাবিননামা তৈরি করে শফিকুলের চাকরি খোয়ানোর জন্য এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নজরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় এজাহারভুক্ত আসামি শফিকুলের ভাই হাসান শেখকে (৩৭) গ্রেফতার করা হয়েছে। ববিতা ও তার মায়ের অভিযোগ, মামলা তুলে নিতে ববিতার শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাদের হুমকি দিচ্ছে।